নিজেকে ‘এলভিস প্রিসলি’ মনে হচ্ছে রুটের
অধিনায়কত্ব হাতে নিয়েই ইংলিশ ক্রিকেটকে বদলে দিতে চেয়েছিলেন বেন স্টোকস। খেলতে চেয়েছিলেন আক্রমণাত্মক, আনন্দদায়ী ক্রিকেট। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের শুরুতে বলেছিলেন, তিনি গোটা ইংল্যান্ড দলকে এমন একটা দলে পরিণত করতে চান, যার অংশ হয়ে ক্রিকেটারদের মনে হবে, তাঁরা বিনোদনজগতের তারকা, দর্শকদের মনোরঞ্জনই যাঁদের কাজ। দর্শকদের হাসি–আনন্দের অনুষঙ্গ হওয়াই যে তারকাদের দায়িত্ব। এজবাস্টনে ভারতের দেওয়া ৩৭৮ রানের লক্ষ্য এত আনন্দদায়ী কেতায় পেরিয়ে গেল ইংল্যান্ড, তাতে এখন মনে হতেই পারে, ইংল্যান্ডের একেকজন ক্রিকেটার যেন একেকজন শোবিজ তারকা।
ইংল্যান্ডের এই নতুন কেতার ক্রিকেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ জো রুট। সবশেষ চারটি টেস্টে ইংল্যান্ড যেভাবে ২৫০ রানের বেশি তাড়া করে জিতেছে, সেই টেস্টগুলোতে রুটের ভূমিকা অসাধারণ। চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়ায় যে আক্রমণাত্মক, হার না মানা কৌশল ইংল্যান্ড নিয়েছে, সেটিও রুট, বেয়ারস্টোদের মতো তারকাদের কেন্দ্র করেই।
৩৭৮ রান তাড়া করা ছিল টেস্টের ১৪৫ বছরের ইতিহাসের অষ্টম সর্বোচ্চ তাড়া। অথচ আগের দিনই মাইকেল ভনের মতো সাবেক তারকারা বলেই দিয়েছিলেন, এজবাস্টনে হারতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড। ভনদের খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না। কারণ, ৩৭৮ রান তাড়া করতে হলে ইংল্যান্ডকে নিজেদের রেকর্ড ভেঙেই তা করে দেখাতে হতো। যেটি ছিল সবদিক দিয়েই অসম্ভব। কিন্তু রুট, বেয়ারস্টো, ক্রলিরা সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে তুলেছেন। চতুর্থ দিন অর্ধেক পেরিয়ে যাওয়ার পর যে রান তাড়ার শুরু, সেটি ইংল্যান্ড সাফল্যের সঙ্গে জয় তুলে নিয়েছে পঞ্চম দিনে দুই সেশনের বেশি সময় হাতে রেখে। ইংলিশ ক্রিকেটারদের এখন দারুণভাবেই মনে হচ্ছে বিনোদনদায়ী তারকা।
রুট ১৪২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন। ইয়র্কশায়ারে তাঁর সতীর্থ বেয়ারস্টোকে সঙ্গে নিয়ে। বেয়ারস্টোর ব্যাট থেকে এসেছে ১১৪ রান। কাল শতরান করার পর ড্রেসিংরুমের দিকে তাকিয়ে নিজের কনিষ্ঠা নাড়িয়ে কী দেখাচ্ছিলেন রুট! সেটি আর কিছুই নয়, কিংবদন্তি রকশিল্পী এলভিস প্রিসলিকে নিয়ে বাজ লুরমানের ছবি ‘এলভিস’কে ইঙ্গিত করেই। রুট জানিয়েছেন, বেন স্টোকসের কথামতো ইংল্যান্ডের ‘রকস্টার’ হতে তাঁর একেবারেই আপত্তি নেই, ‘পুরো ব্যাপারটিই আনন্দদায়ক। আপনি নিজে কতটুকু কী পারেন, সেটি সবার সামনে করে দেখানো। আমার এখন নিজেকে রকস্টার মনে হচ্ছে। মনে হয় না, এমন অনুভূতি আমার আগে কখনো হয়েছে।’
ব্যাকরণসিদ্ধ ক্রিকেটার হিসেবেই পরিচিত রুট। বিশ্বের সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানের একজন। কিন্তু বেন স্টোকস আর ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নতুন ইংল্যান্ডে এই রুট যেন পুরোপুরি বদলে ফেলেছেন নিজেকে। তাঁর ‘রিভার্স স্কুপ’ থেকে মারা ছক্কাগুলো যেন ক্রিকেটের নতুন আকর্ষণ। টেস্টে রান তাড়া করতে নেমে যেভাবে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ভারতীয় বোলারদের সীমানার ওপারে আছড়ে ফেলেছেন, তাতে বিনোদিত হবেন না, এমন ক্রিকেটপ্রেমী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। স্টোকসের কথামতো রুটরা আসলেই নিজেদের শোবিজের তারকা বানিয়ে ফেলেছেন, এতে এখন আর কোনো সন্দেহ নেই।