ইনিংসের তুলনায় গেলে ব্রায়ান লারার ইনিংসের সঙ্গে তাঁর ইনিংস আলোচনায়ই আসবে না। লারার ৫৮২ বলের ইনিংসটা দেখেছে টেস্টে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড, সে তুলনায় ক্রেইগ ব্রাফেট তো দুই ইনিংস মিলিয়েই করতে পেরেছেন ‘মাত্র’ ২১৬ রান।
তবে রানে-কীর্তিতে না হোক, একটা দিকে লারার ওই ইনিংসের কীর্তিকে ছাপিয়ে গেছেন ব্রাফেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে এক টেস্টে সবচেয়ে বেশি বল খেলার কীর্তিতেও এতদিন সবার ওপরে ছিল লারার ৪০০ রানের ইনিংস (ওই টেস্টে এক ইনিংসেই ব্যাট করেছিলেন লারা), ব্রিজটাউনে আজ পঞ্চম দিন শেষে ব্রাফেটের দুই ইনিংস মিলিয়ে বলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৭৩!
প্রথম ইনিংসে ৪৮৯ বলে ১৬০ রানের ইনিংসে এই টেস্টে অন্তত ড্র প্রায় নিশ্চিত করেই ফেলেছিলেন ব্রাফেট, কিন্তু তিন দফায় বৃষ্টিবাধায় পড়া পঞ্চম দিনে আজ ড্র-ই হারে বদলানোর শঙ্কার মুখে দ্বিতীয় ইনিংসেও আরেকবার তাঁকে শম্বুকগতির ইনিংসই খেলতে হলো। নিজ মাঠ ব্রিজটাউনে আরেকবার তাঁবু গেড়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ড্র এনে দিয়েছেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক।
পঞ্চম দিনে ২৮২ রানের লক্ষ্যে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৬৫ ওভারে ৫ উইকেটে ১৩৫ রান তুলতেই দুই অধিনায়ক ড্র মেনে নেন। দিনের খেলা তখন আর বাকি ছিল ১৫ বলের মতো।
১৮৭.৫ ওভার স্থায়ী প্রথম ইনিংসে ৪১১ রান তুলে কাল চতুর্থ দিনের চা বিরতিরও অনেক পর যখন অলআউট হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এই টেস্টের ভাগ্যে ড্র-ই লেখা বলে ধরে নিয়েছিলেন সবাই। সেটি না হতে অসাধারণ কিছুই করতে হতো। ইংল্যান্ড সে চেষ্টা করেছে বটে, কিন্তু এক ব্রাফেটের সামনেই পারেনি।
১৫ ওভারে বিনা উইকেটে ৪০ রান নিয়ে দিন শুরু করা ইংল্যান্ড আজ শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করেছে। রান খুব বেশি কেউ পাননি, কোনো অর্ধশতক দেখেনি ইংল্যান্ডের ইনিংস, তবে ইংল্যান্ডের কোনো ব্যাটসম্যানেরই স্ট্রাইকরেট ৮০-র নিচে ছিল না। জ্যাক ক্রলির ৪০, ড্যান লরেন্সের ৪১ আর অ্যালেক্স লিস (২৪) ও জনি বেয়ারস্টোর (২৯) বিশোর্ধ্ব ইনিংসে ৬ উইকেটে ১৮৫ রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ইংল্যান্ড।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে তখন জিততে ২৮২ রানের লক্ষ্য বটে, ইংল্যান্ডের সামনে অন্তত ৬৫ ওভার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অলআউট করার জন্য। সাকিব মাহমুদ আর জ্যাক লিচের বলে আশার সঞ্চার হয়েছিল বটে ইংল্যান্ড দলে। মাহমুদের দুটি আর লিচের তিন উইকেটের প্রথমটি মিলিয়ে ৩৯ রানেই তিন উইকেট নেই উইন্ডিজের, ইনিংসে তখন মাত্র ১২.১ ওভার।
কিন্তু উদ্বোধনে নামা ব্রাফেট তো অন্য প্রান্তে ছিলেন, এ প্রান্তে তাঁর সঙ্গে যোগ হলেন জার্মেইন ব্ল্যাকউড। চতুর্থ উইকেটে দুজনের জুটিতে এল ৫০ রান। ইংল্যান্ডের জন্য তার চেয়েও বড় অস্বস্তির ব্যাপার, জুটিটা হলো প্রায় ২৫ ওভারের! ততক্ষণে চা বিরতি পেরিয়ে গেছে।
৮৪ বলে ২৭ রানে ব্ল্যাকউড বিদায় নিলেন লিচের বলে, ২৪ বলের ইনিংসে কোনো রান না করে লিচের বলেই আউট জেসন হোল্ডারও। ৯৩ রানেই ৫ উইকেট শেষ! ইংল্যান্ডের তখন আবার আশা দেখা শুরু। কিন্তু জশুয়া দা সিলভা এসে আবার ঝামেলা পাকালেন!
ষষ্ঠ উইকেটে দুজনের জুটিটা আর ভাঙতেই পারল না ইংল্যান্ড। ৬৫ ওভার শেষে যখন লড়াইয়ে ক্ষান্তি দিলেন দুই অধিনায়ক, ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৫ উইকেটে ১৩৫। দা সিলভার রান ৬৩ বলে ৩০, আর ব্রাফেটের ৫৬ রানের ইনিংসে লেগেছে ১৮৪ বল!
ওয়েস্ট ইন্ডিজের রেকর্ড তো হলো, আর ৩১টি বল খেললে সব দেশ মিলিয়ে টেস্টে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ডের সেরা দশেও উঠে যেতে পারতেন ব্রাফেট। সব মিলিয়ে রেকর্ডটার শীর্ষে কে? ইংল্যান্ড কিংবদন্তি ওয়ালি হ্যামন্ড, ১৯২৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি ম্যাচে খেলেছিলেন ৯৭৭ বল।