এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়—স্লিপেই ছয়জন। যেন নতুন ইংল্যান্ডের ‘প্রতীক’ সেটি। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও বেন স্টোকসের ‘জুটি’তে যে ইংল্যান্ড আক্রমণাত্মক। জেমস অ্যান্ডারসন ও ম্যাথু পটস—ইংল্যান্ডের দুই প্রজন্মের দুই পেসারের হাত ধরে লর্ডসে শুরুটা দারুণ হয়েছিল ‘নতুন’ ইংল্যান্ডের। ১৩২ রানেই তাতে শেষ নিউজিল্যান্ড। এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে ৭৫ রানে ১ উইকেট থেকে ৭ উইকেটে ১১৬ রান নিয়ে দিন শেষ করা—ইংল্যান্ড যেন ফিরে গেল ‘পুরোনো’ চেহারায়! স্লিপে আলগা শটে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন নতুন অধিনায়ক স্টোকস, স্লিপ কর্ডনের ওপরের ওই ছবির সঙ্গে যা বেমানানই!
এ ম্যাচের আগে বেন স্টোকস বলেছিলেন, ‘নতুন শুরু’ নিয়ে ভাবছেন না তিনি। এ পথচলাকে তাঁর মনে হচ্ছে ‘সাদা ক্যানভাস’। লর্ডস টেস্টের প্রথম দিনই সে ক্যানভাসে দুর্দান্ত এক ছবি এঁকেছিল স্টোকসের দল। নিউজিল্যান্ডই শুধু শেষবেলায় বিবর্ণ করে দিল সে ছবিটা।
টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ঘণ্টায় ১১ ওভারে ১২ রান তুলতেই নিউজিল্যান্ড হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত করেন অ্যান্ডারসন, তৃতীয় স্লিপে জনি বেয়ারস্টোর দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন উইল ইয়াং। পরের ওভারে টম ল্যাথামকেও ফেরান অ্যান্ডারসন, এবার সহজ ক্যাচ কঠিন করে নেন বেয়ারস্টো। ডিউক বল, সেই সুইং, লাইন, লেংথ—সামনের মাসে ৪০ পূর্ণ করতে চলা অ্যান্ডারসন যেন কখনো পুরোনো হওয়ার নন!
কিছুক্ষণ পর কিউই ধ্বংসযজ্ঞে যোগ দেন এই টেস্ট দিয়ে দলে ফেরা আরেক পেসার স্টুয়ার্ট ব্রডও, এবার বেয়ারস্টো নেন ডেভন কনওয়ের ক্যাচ। স্টিভ হার্মিসনের কাছে সকালে ইংল্যান্ডের ৭০৪ নম্বর টেস্ট ক্যাপ নেওয়া পটসের প্রথম টেস্ট উইকেট আসে ক্যারিয়ারের পঞ্চম বলেই, সেটিও কেইন উইলিয়ামসনের মতো একজনকে কট বিহাইন্ড করে। দেশের মাটিতে বেন ফোকসের সেটি প্রথম ডিসমিসাল। লর্ডসে এর আগে কখনোই ১২ বা এর কম রানে ৪ উইকেট হারায়নি কোনো দল।
ডুবতে থাকা নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেল ও টম ব্লান্ডেল একটু উইকেট আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেছিলেন, তবে তাঁদের জুটিও টেকে মাত্র ৮ ওভার। দুজনই পটসের শিকার। ৬ উইকেটে ৩৯ রান নিয়ে মধ্যাহ্নবিরতিতে যায় নিউজিল্যান্ড। ম্যাচের ২৩তম ওভার শেষে প্রয়াত শেন ওয়ার্নের স্মরণে ২৩ সেকেন্ড ধরে হাততালি দেয় লর্ডস। না থেকেও যেন এই টেস্টে ছিলেন ২৩ নম্বর জার্সির ওয়ার্ন!
বিরতির পর প্রতি-আক্রমণের চেষ্টা করে নিউজিল্যান্ড, কাইল জেমিসন অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেননি। ৪৫ রানে সপ্তম উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ডের তখন লর্ডসে প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে কম রানে (৫৩) গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা। সাতে নামা কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম সেটি হতে দেননি, টেলএন্ডারদের নিয়ে কিছুটা লড়াই করেছেন তিনি। টিম সাউদির সঙ্গে তাঁর অষ্টম উইকেট জুটিতে ওঠে ৩৬ বলে ৪১ রান। সাউদি ২৩ বলে ২৬ ও শেষ ব্যাটসম্যান ট্রেন্ট বোল্ট ১৬ বলে ১৪ রান করে ফিরলেও ৪২ রানে অপরাজিত ছিলেন গ্র্যান্ডহোম।
নিউজিল্যান্ডের ৯ উইকেট পড়ার সময় অ্যান্ডারসন ও পটস—দুজনই দাঁড়িয়ে ছিলেন ৪ উইকেটে। অ্যান্ডারসন পঞ্চম উইকেটটি নিতে পারলে টেস্টে সবচেয়ে বেশি বয়সে পাঁচ উইকেট নেওয়া বোলারদের তালিকায় তিনে থাকতেন, পটস নিতে পারলে হতেন ১৯৭৭ সালে ইয়ান বোথামের পর টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম দিনই পাঁচ উইকেট নেওয়া প্রথম ইংলিশ বোলার। তা হয়নি, নিউজিল্যান্ডের শেষ উইকেটটি নিয়েছেন শেষ উইকেটটি নিয়েছেন স্টোকস। টেস্টের প্রথম দিনেই ফিল্ডিংয়ের সময় মাথায় আঘাত পেয়েছেন ইংলিশ স্পিনার জ্যাক লিচ, ফলে ইংলিশ আক্রমণে স্পিনার ছিলেন না আজ। তাঁর জায়গায় কনকাশন বদলি হিসেবে অভিষেক হচ্ছে ম্যাট পারকিনসনের। দ্বিতীয় দিন মাঠে নামবেন ল্যাঙ্কাশায়ারের এ লেগ স্পিনার।
চা-বিরতির আগেই ব্যাটিংয়ে নামা ইংল্যান্ডের শুরুটা হয়েছিল বেশ দৃঢ়। জ্যাক ক্রলি ও অ্যালেক্স লিস ওপেনিং জুটিতেই তোলেন ৫৯ রান। ১৪তম ওভারে সে জুটি ভাঙেন কাইল জেমিসন, উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ক্রলি। তিনে নামা ওলি পোপও জেমিসনের শিকার, অবশ্য ৭৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারালেও তখনো ঠিক পথ হারায়নি ইংল্যান্ড।
সেটি শুরু হয় সদ্য সাবেক হওয়া অধিনায়ক জো রুটের উইকেট দিয়ে। ডি গ্র্যান্ডহোমের বলে পাঞ্চ করতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন তিনি। রুট থেকে পটস—৮ রানের মধ্যে ইংল্যান্ড হারায় ৫ উইকেট। লিস ও স্টোকস সাউদির শিকার, বেয়ারস্টো ও পটসকে ফেরান ট্রেন্ট বোল্ট। বেন ফোকস ও স্টুয়ার্ট ব্রড অবশ্য শেষ ৩ ওভারে বিপদ ঘটতে দেননি, তবে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসের স্কোর থেকেই এখনো ১৬ রানে পিছিয়ে ইংল্যান্ড। ফিরে গেছেন আটে নামা পটসও। স্বপ্নের মতো অভিষেকের দিনে কি এমন কিছু ভাবতে পেরেছিলেন তিনি!