ধোনিকে আর চেন্নাইয়ের অধিনায়ক দেখতে চান না হেইডেন
ধোনি থাকবেন, ধোনি থাকবেন না—আগামী মৌসুমে চেন্নাই সুপার কিংসের দল নিয়ে ভক্তদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল এটি। কিন্তু প্রশ্নটার উত্তর গতকাল ধোনি নিজেই দিয়ে দিয়েছেন। এবারের আইপিএলে নিজেদের শেষ ম্যাচে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে নামার সময়ই ধোনি বলে দিয়েছেন, আগামী মৌসুমেও খেলছেন।
এরপর জেগেছে নতুন প্রশ্ন। ধোনি আগামী মৌসুমেও কি চেন্নাইয়ের অধিনায়ক হিসেবেই খেলবেন? এই মৌসুমে শুরুতে ধোনি অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ায় রবীন্দ্র জাদেজাকে অধিনায়ক বানিয়ে মৌসুম শুরু করেছিল চেন্নাই, কিন্তু ফল ভালো না হওয়ায় মাঝামাঝি সময়ে গিয়ে আবার ধোনিকে অধিনায়কত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আগামী মৌসুমে তাহলে কী হবে?
শেষ পর্যন্ত চেন্নাইয়ের সিদ্ধান্ত যা-ই হোক, ধোনিকে অধিনায়ক রাখার ব্যাপারে আপত্তি আছে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ম্যাথু হেইডেনের। এবারের আইপিএলে ব্যাট হাতে ধোনির পারফরম্যান্স টেনেই ৪১ পেরোনো এই ক্রিকেটারকে আগামী মৌসুমে চেন্নাইয়ের অধিনায়ক রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন হেইডেন। যদিও আলোচনায় তাঁর সঙ্গী ভারতের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কারের যুক্তি ভিন্ন।
আপনি যদি সত্যিকারের অবদানের দিকে তাকান, তাহলে আমি বলব ওর (ধোনির) চালিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
রাজস্থান-চেন্নাই ম্যাচের আগে গতকাল ভারতের টিভি চ্যানেল স্টার স্পোর্টসে বিশ্লেষণ হেইডেন বললেন, ধোনিকে যদি আগামী মৌসুমে চেন্নাইয়ের অধিনায়ক রাখা হয়, সেটি হবে আবেগধর্মী সিদ্ধান্ত। তবে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স বিবেচনায় ধোনির আগামী মৌসুমে চেন্নাইয়ের অধিনায়ক থাকার প্রশ্নই আসে না।
‘সিদ্ধান্তটা আসলেই কঠিন। সবকিছু নির্ভর করছে ফ্র্যাঞ্চাইজি কী চায় তার ওপর। এই মৌসুমে ১২৮ স্ট্রাইক রেটে ২০০ রান করা একজনকেই যদি আপনি অধিনায়ক হিসেবে রাখতে চান, তাহলে তো কোনো সমস্যাই নেই’—হেইডেনের যুক্তি। এই মৌসুমে ১৪ ম্যাচে ১টি অর্ধশতকসহ ২৩২ রান করেছেন ধোনি, গড় ৩৩.১৪, স্ট্রাইক রেট ১২৩.৪০।
তবে হেইডেনের উদ্ধৃত পরিসংখ্যানে একটুখানি এদিক-ওদিক থাকলেও গতকাল রাজস্থানের বিপক্ষে ইনিংসটাই হয়তো বুঝিয়ে দেবে তিনি কী বোঝাতে চাইছেন।
ওয়াংখেড়েতে আগে ব্যাট করে কাল মঈন আলীর ঝড়ের পরও ৬ উইকেটে ১৫০ রান তুলেছে চেন্নাই, সে পথে ধোনির অবদান—২৮ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ২৬ রান। অবশ্য তিনে নামা মঈনের ৫৭ বলে ৯৩ রানের ইনিংসের বাইরে চেন্নাইয়ের ইনিংসে ধোনি ছাড়া আর কেউ ২০-এর ঘরে যেতে পারেননি, এটা ধোনির ‘ওয়ানডে’ গতির ব্যাটিংয়ের একটা ব্যাখ্যা হতে পারে।
হেইডেনও বলছেন, ধোনি একেবারে ফুরিয়ে যাননি। তবে আগামী মৌসুমে চেন্নাইয়ের যেখানে পুনর্গঠন দরকার, সেখানে ধোনিকে অধিনায়ক রাখা নিয়ে সংশয় আছে একসময়ে চেন্নাইয়েই খেলে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ানের, ‘ওর হাতে এখনো জোর আছে, স্টাম্পের পেছনে রিফ্লেক্স ঠিকঠাক আছে, এখনো দ্রুত দৌড়ে রান নিতে পারে। পুরো আইপিএলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ অধিনায়কও সে, এত শিরোপা আছে নামের পাশে, পুরো দলও ওর পাশেই আছে। তবে ওরা যেহেতু নতুন করে নতুন ঢংয়ে দলটা সাজাতে চাইছে, সেখানে এমএসডির (ধোনি) অবদান কতটা থাকবে?’
দলে অবদানের প্রশ্নে রাজস্থান রয়্যালস অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসনের পারফরম্যান্স আর তাঁকে ঘিরে চলা সমালোচনার প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন হেইডেন, ‘আপনি যদি সত্যিকারের অবদানের দিকে তাকান, তাহলে আমি বলব ওর (ধোনির) চালিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। স্যামসনের দিকে তাকান, প্রায় ৩০-এর মতো (২৮.৭৭) গড়ে ও মৌসুমে ৩০০-র বেশি (৩৭৪) রান করেছে, অথচ ওকে নিয়ে প্রশ্ন হচ্ছে, নেতা হিসেবে ওর এই অবদান যথেষ্ট কি না। এই প্রশ্নগুলো তো উঠবেই। সিদ্ধান্তটা তাই আবেগজনিত। দর্শক ওকে কীভাবে নিচ্ছে, সেটি দেখলেই বোঝা যাবে। এই দিকটাও গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণেই এই আলোচনার অর্থই খুঁজে পাই না আমি।’
আলোচনায় হেইডেনের পাশে বসে থাকা সুনীল গাভাস্কার অবশ্য হেইডেনের উল্টো দিকেই বলছেন। ভারতীয় কিংবদন্তির চোখে, ধোনির এই ভূমিকাতেই আগামী মৌসুমে চালিয়ে যাওয়া উচিত, ‘এমএস ধোনি যে মানের কিংবদন্তি, সবাই চাইবে ও খেলতেই থাকুক। ওর খেলায় কারও কখনো বিরক্তি আসবে না। শচীন (টেন্ডুলকার) যখন অবসরে গেল, এত খারাপ লেগেছিল। কারণ হঠাৎই মনে হলো, ‘‘আরে! আগামীকাল থেকে তো ওকে আর খেলতে দেখব না!’’ এমএসডির ক্ষেত্রেও তো তা-ই। আমরা জানি ও আগামী বছর কয়েকটা ম্যাচ খেলবে, এই অনুভূতিটার জন্যই ওকে চালিয়ে যেতে দেখতে চাই।’