সাকিব আল হাসান যেহেতু এবার আইপিএলে দল পাননি, বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে মোস্তাফিজুর রহমানের দিল্লি ক্যাপিটালস। দুই কোটি রুপি ভিত্তিমূল্যে বাংলাদেশি বাঁহাতি পেসারকে দলে ভিড়িয়েছে তারা। মোস্তাফিজ ছাড়া দলে আর কে কে আছেন, দেখে নেওয়া যাক!
ব্যাটসম্যান: পৃথ্বী শ, ডেভিড ওয়ার্নার, শ্রীকর ভারত, রোভম্যান পাওয়েল
উইকেটকিপার: ঋষভ পন্ত, টিম সেইফার্ট
পেস অলরাউন্ডার: শার্দূল ঠাকুর, মিচেল মার্শ, মনদীপ সিং, অশ্বিন হেব্বার, রিপাল প্যাটেল
স্পিন অলরাউন্ডার: অক্ষর প্যাটেল, সরফরাজ খান, ললিত যাদব, যশ ধুল, প্রবীণ দুবে, ভিকি অস্তওয়াল
পেসার: আনরিখ নর্কিয়া, মোস্তাফিজুর রহমান, খলিল আহমেদ, চেতন সাকারিয়া, কমলেশ নাগরকোটি, লুঙ্গি এনগিডি
স্পিনার: কুলদীপ যাদব
নিলামের আগেই চারজনকে ধরে রেখেছিল দিল্লি। অধিনায়ক ঋষভ পন্তের সঙ্গে যে তালিকায় ছিলেন স্পিনিং অলরাউন্ডার অক্ষর প্যাটেল, দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার আনরিখ নরকিয়া ও ব্যাটসম্যান পৃথ্বী শ। এ চারজন মূল একাদশে নিয়মিত থাকবেন, এটা নিশ্চিত। গতবার পৃথ্বী শর সঙ্গে ইনিংস উদ্বোধন করতে দেখা যেত শিখর ধাওয়ানকে। ধাওয়ান এবার পাঞ্জাবে চলে যাওয়ায় সেটি হচ্ছে না। ফলে শর সঙ্গী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন দলে নতুন আসা ডেভিড ওয়ার্নার। আইপিএলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান আর অধিনায়ক মানা হয় যাঁকে; যদিও দিল্লিতে পন্তের জন্য অধিনায়কত্ব করা হবে না ওয়ার্নারের।
তিন নম্বরে গত মৌসুমে হয় একজন বিদেশি, কিংবা শ্রেয়াস আইয়ারকে খেলিয়েছে দিল্লি। বিদেশিদের মধ্যে ছিলেন স্টিভ স্মিথ আর মার্কাস স্টয়নিস। শ্রেয়াস, স্মিথ, স্টয়নিস—তিনজনের কেউই এবার দিল্লিতে নেই। এক অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার স্টয়নিসের জায়গায় এবার দলে আনা হয়েছে আরেক অস্ট্রেলিয়ান অলরাউন্ডার মিচেল মার্শকে, এবার অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। ব্যাটিং লাইনআপের অন্যান্য পজিশনে খেললেও গত এক বছরে তিন নম্বরে নেমে বেশ সফল এই মার্শ। ফলে দিল্লিতে এই ভূমিকায় দেখা যেতে পারে তাঁকে। চার নম্বরে যথারীতি দলের অধিনায়ক ঋষভ পন্ত খেলতে পারেন।
মিডল অর্ডারে বিশ্বকাপজয়ী অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক যশ ধুল, বিজয় হাজারে ট্রফিতে আলো ছড়ানো ও গত মৌসুমে বেঙ্গালুরুতে খেলা শ্রীকর ভারত, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ থেকে আসা সরফরাজ খান, গত মৌসুমে দিল্লিতে খেলা রিপাল প্যাটেলের মধ্যে যেকোনো দুজনকে খেলাতে পারে দিল্লি। স্পিনিং অলরাউন্ডার হিসেবে থাকবেন অক্ষর প্যাটেল, সঙ্গে রিস্ট স্পিনের বৈচিত্র্য আনার জন্য দেখা যেতে পারে কলকাতা নাইট রাইডার্স থেকে আসা কুলদীপ যাদবকে। পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে পৌনে ১১ কোটি রুপি দিয়ে দলে আসা শার্দূল ঠাকুরের জায়গা নিশ্চিত।
দলের মূল পেসার হিসেবে দিল্লি ধরে রেখেছে আনরিখ নরকিয়াকে, স্বাভাবিকভাবেই এই গতি তারকাকে খেলানো হবে নিয়মিত। নরকিয়ার সঙ্গে দলের দ্বিতীয় পেসার হিসেবে মোস্তাফিজ খেলেন কি না, প্রশ্ন সেটিই। এ জায়গায় মোস্তাফিজের জোর লড়াই চলবে দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক পেসার লুঙ্গি এনগিডি, ভারতের দুই বাঁহাতি পেসার চেতন সাকারিয়া ও খলিল আহমেদের সঙ্গে। সাকারিয়া ও খলিল, দুজনকে কিনতে মোটামুটি ১০ কোটি টাকার মতো খরচ করেছে দিল্লি। তবে শার্দূল আর নরকিয়া যেহেতু খেলছেন, সেহেতু বোলিং বৈচিত্র্য আনার দিক দিয়ে তিন বাঁহাতি মোস্তাফিজ, খলিল আর সাকারিয়ার মধ্যে খেলতে পারেন অন্তত দুজন।
মোস্তাফিজ আর সাকারিয়া, দুজনই গত মৌসুমে রাজস্থানের হয়ে খেলেছিলেন। একজনের জন্য আরেকজন খেলতে পারবেন না, মোস্তাফিজ যেহেতু বিদেশি, সেহেতু তাঁর খেলার সুযোগ কম—এমনটা মনে করা হলেও গতবার তেমনটা হয়নি। মোস্তাফিজ আর সাকারিয়া নিয়মিত খেলে গিয়েছেন রাজস্থানের একাদশে। এবারও সে ‘ফর্মুলা’ প্রয়োগ করতেই পারে দিল্লি।
বিদেশি হিসেবে ওয়ার্নার, মার্শ আর নরকিয়ার জায়গা যেহেতু নিশ্চিত, বাকি জায়গাটা পাওয়ার জন্য মোস্তাফিজের লড়াই হবে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান রোভম্যান পাওয়েল, নিউজিল্যান্ডের উইকেটকিপার টিম সেইফার্ট ও দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার লুঙ্গি এনগিডির সঙ্গে। পন্ত নিয়মিত খেলার কারণে দলে খামাকা আরেকজন বিদেশি উইকেটকিপার রাখবে না দিল্লি, ফলে সেইফার্টকে মূল একাদশে হয়তো দেখা যাবে না। দিল্লির ব্যাটিং–শক্তি বিচার করলে রোভম্যান পাওয়ালকেও নিয়মিত খেলানোর কথা না তাদের। ফলে আরেক বিদেশি হিসেবে মূল লড়াইটা হবে মোস্তাফিজ আর এনগিডির মধ্যেই। যেখানে বাঁহাতি হওয়ার সুবাদে ও ইনিংসের শেষ দিকে উইকেট তুলে নেওয়ার দক্ষতার কারণে মোস্তাফিজ এগিয়ে থাকবেন অবশ্যই।
আরেকটা কথাও ভুলে গেলে চলবে না, মোস্তাফিজের নাম নিলামের টেবিলে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই দিল্লি লুফে নেয় তাঁকে; এনগিডির ক্ষেত্রে যেটা হয়নি। প্রথম দফায় অবিক্রীত থাকার পর দ্বিতীয় দফায় ভিত্তিমূল্যে বিক্রি হয়েছেন এই পেসার। ফলে নিলামের টেবিলে দিল্লির হাবভাব এটাই বোঝাচ্ছে, এনগিডির চেয়ে মোস্তাফিজকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তারা।
দেখা যাক, খেলার মাঠে মোস্তাফিজের এমন গুরুত্ব থাকে কি না!