তাসকিন–জায়েদদের পরীক্ষা পাল্লেকেলেতে

আবু জায়েদকে নেতৃত্ব দিতে হবে বাংলাদেশের গতি আক্রমণে।ছবি: এএফপি

ধারাভাষ্যকক্ষে বসে গতির তেজটা যেন আঁচ করতে পারছিলেন সাবেক শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার পারভেজ মারুফ। তাসকিন আহমেদ, ইবাদত হোসেন তখন বেশ গতিতে বোলিং করছিলেন। ইনিংসের শুরুতেই তাসকিন-ইবাদতদের আগুনে গতি দেখে একটু অবাক হয়েই মারুফ বলছিলেন, ‘দেখে ভালো লাগছে দুজন বাংলাদেশি পেসার ১৪০ কিলোমিটারে বল করছে।’

শুধু গতি নয়। নিয়ন্ত্রণও খারাপ ছিল না ইনিংসের শুরুতে। গতির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ—টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পেস আক্রমণে এই সংমিশ্রণ যে কখনো ছিল না বললেই চলে। দুইয়ের সমন্বয় হলে কী হয়, সেটি আঁচ করা গেছে পাল্লেকেলে টেস্টের তৃতীয় দিন মধ্যাহ্নবিরতির আগ দিয়ে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ের সময়। ৮ ওভারে মাত্র ১১ রান তুলতে পেরেছেন দুই লঙ্কান ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে ও লাহিরু থিরিমান্নে। অল্পের জন্য থিরিমান্নে রক্ষা পেয়েছেন। তাসকিনের স্পেলের চতুর্থ ওভারে আম্পায়ার এই বাঁহাতিকে আউটও দিয়েছিলেন। পরে রিভিউ নিয়ে টিকে যান এই বাঁহাতি।

শুধু তাসকিন নন, ছোট্ট হলেও প্রথম স্পেলে ভালো বল করেছেন আবু জায়েদও। তিন পেসার কেমন করেন, সেটিই হবে আজকের দিনের মূল আকর্ষণ। তাঁদের দিকে আগ্রহী চোখ থাকবে। এই তিন পেসার টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান দিতে পারেন কি না, দেখার বিষয় হবে সেটিই।

গতি আর নিয়ন্ত্রণ দিয়ে পরীক্ষায় ফেলতে হবে লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের।
ছবি: এএফপি

এই টেস্টে মূল দায়িত্ব নিতে হবে পেসারদেরই। ঘরের মাঠে টেস্ট খেলার সুযোগই হয় না পেসারদের। সুযোগ যা একটু আসে দেশের বাইরে গেলেই। সুযোগ কাজে লাগানো যাকে বলে, সেটি কখনোই হয়নি। ২০১৯ সালে ভারত সফর, ২০২০ সালে পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশের সুযোগ ছিল স্বাগতিকদেরও গতির ঝলকানি ফিরিয়ে দেওয়ার। কিন্তু সেসব কিছুই হয়নি। কিছু ভালো বল হলেও বাজে বল হয়েছে প্রচুর। দেদার রান খরচাও হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে চাপ ধরে রাখার দক্ষতায় ঘাটতি ছিল স্পষ্ট।

ইবাদতের কথা ধরুন, পাল্লেকেলে টেস্টের আগে ৬ টেস্টে ৭ ইনিংসে বল করে তাঁর উইকেট ৬টি। ওভারপ্রতি ৩.৭৭ রান করে খরচ করেন তিনি। গতি ও উচ্চতা ভালো হলেও নিয়ন্ত্রণের অভাব থাকায় অধিনায়ক ইবাদতকে টানা বোলিং করানোর আত্মবিশ্বাস পাবেন না। আরেক পেসার তাসকিনও ঠিক একই ধাঁচের বোলার। ৫ টেস্টের ১০ ইনিংসে মাত্র ৭ উইকেটের মালিক তাসকিনের ইকোনমি ৪.৪০। নিউজিল্যান্ড সিরিজে দারুণ বোলিং করা তাসকিন এখন নিজেকে অনেকটাই বদলে ফেলেছেন। কিন্তু সেটা সাদা বলে প্রমাণ করলেও লাল বলে তা করাটা এখনো বাকি তাঁর

ব্যতিক্রম হচ্ছেন আবু জায়েদ। ১০ টেস্টে মাত্র ১৪ ইনিংস বল করার সুযোগ পেয়ে ৩০ উইকেট নিয়েছেন তিনি। নিয়ন্ত্রণ ও সুইং দিয়ে নিয়মিত উইকেট শিকার করছেন ২৭ বছর বয়সী এ পেসার। সর্বশেষ টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬ উইকেট নেন। সচরাচর টেস্ট দলের স্পিনারদের ভিড়ে জায়েদকে পালন করতে হয় পার্শ্বনায়কের ভূমিকা। এবার শ্রীলঙ্কায় মূল দায়িত্বে জায়েদ কেমন করেন, সেটি কিন্তু আগ্রহের একটা বড় জায়গা।