বাঁচা-মরার ম্যাচ ছিল। আইপিএলে প্লে-অফের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে জিততেই হতো চেন্নাই সুপার কিংসকে। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে কাল সে ম্যাচেই কিনা হতশ্রী খেলে আইপিএল ইতিহাসে নিজেদের সবচেয়ে বড় হারের কলঙ্ক গায়ে মাখাল মহেন্দ্র সিং ধোনির দল!
১০ উইকেটে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বলতে গেলে ছিটকেই গেছে ধোনির চেন্নাই। স্বাভাবিকভাবেই এমন হারের বিশ্লেষণ হবে চারদিকে। শুধু তো এই হার নয়, এবার টুর্নামেন্টজুড়েই চেন্নাই ছিল ছন্নছাড়া। মুম্বাইয়ের কাছে কালকের হার সেটিতে যেন চূড়ান্ত লজ্জা এঁকে দিয়েছে। হারের বিশ্লেষণে অনেকের চোখে অনেক দিকই উঠে আসছে। সাবেক ভারতীয় ওপেনার বীরেন্দর শেবাগ কালকের হারের দায়টা চাপাচ্ছেন দলে সুযোগ পাওয়া তরুণদের কাঁধে। শেবাগের চোখে, তরুণেরা ধোনিকে ডুবিয়েছে।
কালকের আগে ১০ ম্যাচে চেন্নাইয়ের ৩ জয়ে পয়েন্ট ছিল মাত্র ৬। শেষ চার ম্যাচের চারটিই জিতলে শেষ চারের আশা বেঁচে থাকে—এমন সমীকরণ নিয়ে শারজায় কাল রোহিত শর্মাবিহীন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে খেলতে নামে ধোনির চেন্নাই। ভাগ্য বদলের আশায় একাদশে তিন-তিনটি বদলও আনা হয়। অভিজ্ঞ শেন ওয়াটসন, কেদার যাদব ও পীযুষ চাওলাকে বেঞ্চে বসিয়ে সুযোগ দেয় দুই তরুণ রুতুরাজ গায়কোয়াড়, নারায়ন জগদিশান ও অভিজ্ঞ লেগ স্পিনার ইমরান তাহিরকে।
কিন্তু শুরুতেই ধসের মুখে চেন্নাই— ৩ রানে ৪ উইকেট নেই! ওপেনিংয়ে নেমে রুতুরাজ আউট শূন্য রানে, চারে নেমে জগদিশানও কোনো রান করতে পারেননি। একটা সময়ে আইপিএলে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড (৪৯) ভেঙে দেওয়ার শঙ্কায় পড়ে যান চেন্নাই সমর্থকেরা। শেষ পর্যন্ত স্যাম কারেনের ৪৭ বলে ৫২ রানের ইনিংসে ৯ উইকেটে ১১৪ রান করে চেন্নাই।
কিন্তু সেটিকেও পাত্তা দেয়নি মুম্বাই। ইশান কিশানের ৬৮ আর কুইন্টন ডি ককের ৪৬ রানে লক্ষ্যটা ৪৬ বল ও ১০ উইকেট হাতে রেখেই পেরিয়ে যায়।
১১ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে আট দলের আইপিএলের পয়েন্ট তালিকার তলানিতে আছে চেন্নাই। এখনো অঙ্কের হিসেবের মারপ্যাঁচে প্লে-অফে খেলার সুযোগ আছে, কিন্তু সেটি সম্ভবত চেন্নাইয়ের অতি আশাবাদী সমর্থকও হিসেবে ধরছেন না!
জয় দিয়ে এবারের আইপিএল শুরু করলেও পঞ্চম এসে দ্বিতীয় জয় পেয়েছে চেন্নাই, সর্বশেষ ছয় ম্যাচে জয় মাত্র একটি, সর্বশেষ তিন ম্যাচেই হার—এবারের মৌসুমটা চেন্নাইয়ের জঘন্যই কেটেছে। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর কি আন্তর্জাতিক, কি ঘরোয়া—সব ধরনের ক্রিকেট থেকে ১৪ মাস স্বেচ্ছানির্বাসনে যাওয়া ধোনি এই টুর্নামেন্ট দিয়েই ফিরেছিলেন, তাঁরও ফেরাটা সুখকর হলো না। ধোনি নিজেও অবশ্য খুব একটা ভালো খেলেননি।
কিন্তু পরশু হারের বিশ্লেষণে শেবাগ ধোনি বা অন্য কারও আগে সেদিনই সুযোগ পাওয়া দুই তরুণেরই সমালোচনা করলেন বেশি। তরুণদের পারফরম্যান্স ভালো না হওয়াতেই ধোনির কষ্টটা বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে শেবাগের, ‘মুম্বাইয়ের বিপক্ষে হারটা অনেক দিন কষ্ট দেবে (চেন্নাই ও ধোনিকে)। কষ্টটা আরও বেশি হবে, কারণ এমএস ধোনির হয়তো মনে হবে, ‘‘আজ দলের তরুণদের সুযোগ দিয়ে দেখলাম। আরেকবার তারা আমাকে হতাশ করল। ওরা নিজেদের জন্য হলেও অন্তত কিছু রান করত! টুর্নামেন্টের স্বাদ পাওয়ার জন্য হলেও কিছুক্ষণ ক্রিজে কাটাত।”
ক্রিকবাজে বিশ্লেষণে শেবাগ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যদি দলটাকে ১৪০-১৫০ রানের মতো সম্মানজনক একটা স্কোরেও নিয়ে যেত, দলের পারফরম্যান্সে হয়তো খুশি হতো ধোনি। তরুণেরা ওকে ডুবিয়েছে বলেই ধোনি আরও বেশি কষ্ট পাবে। এখান থেকে ওরা কীভাবে ফিরে আসে, সেটি দেখার মতোই ব্যাপার হবে।’
চেন্নাইয়ের পরের ম্যাচ রোববার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে।