ডি ককের ‘স্মার্টনেসে’ মুগ্ধ এক পাকিস্তানি
খেলা শেষ হয়ে গেছে গত পরশু। কিন্তু পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের রেশ রয়ে গেছে এখনো। রেশ আসলে পুরো ম্যাচের নয়, ম্যাচের একটি মুহূর্তের। আরও স্পষ্ট করে বললে শেষ ওভারে পাকিস্তানের ওপেনার ফখর জামানের রানআউটের। রানআউটটি নিয়ে বিতর্ক এখনো চলছে। এ রানআউট মেনে নিতে পারেননি পাকিস্তানের অনেক সাবেক ক্রিকেটার।
ম্যাচের পর পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতার বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কক ক্রিকেটের চেতনাবিরোধী কাজ করেছেন। কিন্তু মাঠের আম্পায়াররা ডি ককের কোনো ‘ভুল’ দেখতে পাননি। তবে ডি ককের কাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেই যাচ্ছেন পাকিস্তানিরা। দলটির বোলিং কোচ ওয়াকার ইউনিস তো রানআউটের পর ডি ককের ‘মিচকে হাসি’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তবে পাকিস্তানের সাবেক স্পিনার দানিশ কানেরিয়া ডি ককের কোনো ভুল দেখছেন না। তিনি বরং ডি কককে ‘স্মার্ট’ ক্রিকেটারের আখ্যা দিয়েছেন! ফখর জামানকে রানআউট করতে গিয়ে ডি কক যে ‘স্মার্টনেস’ দেখিয়েছেন, সেটাতে মুগ্ধ কানেরিয়া।
১৭ রানে হেরে যাওয়া সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৯৩ রান করে রানআউট হয়েছেন ফখর জামান। পাকিস্তানি সমর্থক আর সাবেকদের দাবি, ফখর প্রতারণার শিকার হয়েছেন! ডি কক তাঁকে আউট করতে ‘ফেক ফিল্ডিং’-এর আশ্রয় নিয়েছেন। শেষ ওভারের প্রথম বলটা থেকে দ্বিতীয় রানের জন্য ছুটছিলেন ফখর। দক্ষিণ আফ্রিকান উইকেটরক্ষক ফিল্ডারকে আঙুল উঁচিয়ে ইশারায় এবং মুখে নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে থ্রো করতে বলেন। সেটা দেখে ফখর নিজের গতি একটু কমিয়ে দেন, যেহেতু তিনি দৌড়াচ্ছিলেন ব্যাটিং প্রান্তে। কিন্তু ফিল্ডারের থ্রো আসে উইকেটকিপারের কাছেই এবং ফখর সেটা যখন বুঝতে পারেন, তখন তিনি বেশ দূরে। সরাসরি থ্রো লাগে স্টাম্পে।
ডি ককের এমন আচরণ নিয়ে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার আর সমর্থকেরা প্রশ্ন তুলেছেন ঠিক, কিন্তু ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে ফখর রানআউট হওয়ার জন্য নিজেকেই দায়ী করেছেন। তাঁর কথা, সতীর্থ ব্যাটসম্যান হারিস রউফ ঠিকভাবে তাঁর প্রান্তে পৌঁছাতে পারবেন কি না, তা খেয়াল করতে গিয়ে দ্রুত দৌড়ানোর কথা ভুলে গিয়েছিলেন! ফখরের এমন কথার পরও পাকিস্তানের সাবেকেরা ডি ককের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলা থামাচ্ছেন না। এমন সময়েই কিনা পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটারদের একজন কানেরিয়া ডি ককের পাশে দাঁড়ালেন!
পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকেরই এখন নিজেদের ইউটিউব চ্যানেল আছে। কানেরিয়াও এর বাইরে নন। নিজের ইউটিউব চ্যানেলেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন কানেরিয়া। কথা বলার আগে তিনি ফেক ফিল্ডিং নিয়ে এমসিসির তিনটি নিয়ম দর্শককে দেখান। এরপর তিনি বলেছেন যে তাঁর মনে হয়নি প্রোটিয়া উইকেটকিপার এর একটি নিয়মও ভেঙেছেন। ফখর জামানকে বোকা বানিয়ে রানআউট করার বিষয়টি ডি কক খুব চতুরতার সঙ্গে করেছেন বলেই মনে হয়েছে কানেরিয়ার।
পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কানেরিয়া বলেছেন, ‘কুইন্টন ডি কক দৌড়ে স্টাম্পের কাছে যায়। এরপর সে বোলার লুঙ্গি এনগিডির দিকে তাকায়। এনগিডি তখন অন্য প্রান্তে ফিল্ডারের কাছ থেকে আসা বল ধরার জন্য অপেক্ষা করছিল। এটা দেখেই জামান পেছনে ঘুরে হারিস রউফের অবস্থান দেখার চেষ্টা করে। বুঝতে চেষ্টা করে সে নিরাপদে পৌঁছাতে পারবে কি না। পুরো প্রক্রিয়ায় তাকে বোকা বানানো হয়েছে এবং সে আউট হয়ে গেছে। তাই ডাবল সেঞ্চুরিটাও করতে পারেনি।’
কানেরিয়া এরপর এ বিষয়ে নিয়ম ভাঙা না ভাঙা নিয়ে কথা বলেন, ‘মূলত এই ঘটনায় আইসিসির কোনো নিয়ম ভাঙা হয়নি। আমি মনে করি, তার (ডি কক) মতো দারুণ স্মার্ট কোনো ক্রিকেটার এটাই করে। অতীতেও আমরা দেখেছি কাউকে বোকা বানিয়ে আউট করার ক্ষেত্রে খেলোয়াড়েরা কী করে।’