টেস্ট ইতিহাসের ভয়ংকরতম পেসত্রয়ী সাউদি-বোল্ট-ওয়াগনার
সময়ের সেরা পেস আক্রমণ কোন দলের? এই আলোচনায় তাঁদের নামটা একটু পরেই আসে। অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জশ হ্যাজলউড ত্রয়ীকে এগিয়ে রাখেন বেশির ভাগ মানুষ। এরপর আসে ইংল্যান্ডে জিমি অ্যান্ডারসন-স্টুয়ার্ট ব্রড, দক্ষিণ আফ্রিকায় ডেল স্টেইন-কাগিসো রাবাদার নাম। আজকাল ভারতের পেস বোলিং আক্রমণও কম যায় না। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের তিন পেসার টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্ট, নিল ওয়াগনারের নাম একটু দেরিতেই নেন সবাই। অথচ কিউইদের এই পেসত্রয়ী টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে জুটি বেঁধে বোলিং করার অবিশ্বাস্য রেকর্ড করে বসে আছেন! একসঙ্গে খেলেছেন এমন ৩৬ ম্যাচে ৪৯০ উইকেট—টেস্ট ইতিহাসের যেকোনো পেসত্রয়ীর চেয়ে বেশি উইকেট এখন এই তিন কিউই পেসারের।
সাউদির আউট সুইং, বোল্টের ইন সুইং আর ওয়াগনারের বাউন্সার ও গতির বৈচিত্র্যে নিউজিল্যান্ড পেয়েছে অবিশ্বাস্য এক বোলিং আক্রমণ। কয়েক বছর ধরে এই তিন পেসারের কারণেই নিউজিল্যান্ড ঘরের মাঠে টেস্ট হারতেই ভুলে গেছে! সাউদি-বোল্টের জন্য নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন এমনিতেই আদর্শ। সঙ্গে সবুজ উইকেট তো আছেই। আর ওয়াগনারের জন্য নিউজিল্যান্ডের নরম মাটির উইকেট। যেখানে বাউন্সারের উচ্চতা আঁচ করা কঠিন। কিছু আসে মাথা ধেয়ে, কিছু আবার পাঁজর বরাবর। কিছু আসে কোমর বরাবর। আর সঙ্গে ওয়াগনারের গতির বৈচিত্র্য তো আছেই। ১২৫ কিলোমিটার থেকে ১৪০ পর্যন্ত ওঠানামা করে ওয়াগনারের গতি। এমন বৈচিত্র্যময় পেসত্রয়ী টেস্ট ইতিহাসে কমই আছে।
যেমন কার্টলি অ্যামব্রোস, ইয়ান বিশপ, কোর্টনি ওয়ালশরা ছিলেন নিউজিল্যান্ডের এই তিন পেসার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁরাও কম উইকেট নেননি। ৩৭ টেস্ট একসঙ্গে খেলে নিয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪১২ উইকেট। তিনজনের কেউই সুইংয়ে তেমন বিশ্বাস করতেন না। নিয়ন্ত্রণ আর লাইন-লেংথের সঙ্গে গতি মিশিয়ে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিতেন।
ইংল্যান্ডের অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ, স্টিভ হার্মিসন ও ম্যাথু হগার্ড ত্রয়ীও ছিল দুর্দান্ত। চোটাঘাতে ভেঙে না পড়লে এই ত্রয়ী আরও উইকেট নিতে পারত। একসঙ্গে ৩৩ টেস্ট খেলে ৩৮৩ উইকেট তাঁদের। সুইং, রিভার্স সুইং ও গতি—সবই ছিল এই তিন বোলারের ভান্ডারে। দক্ষিণ আফ্রিকার ডেল স্টেইন, মরনে মরকেল, ভারনন ফিল্যান্ডার জুটিও অনেকটা তাই। একসঙ্গে ৩১ ম্যাচ খেলে ৩৬৮ উইকেট নিয়েছেন এই তিন পেসার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরেক ত্রয়ী মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নার ও ম্যালকম মার্শালের রেকর্ডও অবিশ্বাস্য। মাত্র ২৬ ম্যাচ একসঙ্গে খেলেছেন এই তিন কিংবদন্তি। উইকেট নিয়েছেন ৩৩১টি। ইংল্যান্ডের অ্যান্ডারসন ও ব্রডের সঙ্গে প্রথম স্টিভেন ফিনেরও ভালো জমেছিল (২২ ম্যাচে ২৬৫ উইকেট)। চোট ও ফর্মের কারণে ফিন দল থেকে বাদ পড়লে যোগ দেন ক্রিস ওকস। তাঁর সঙ্গেও অ্যান্ডারসন-ব্রডের দারুণ জমে (২৪ ম্যাচে ২৬২ উইকেট)।
স্টার্ক, কামিন্স, হ্যাজলউড মাত্র ১৭ ম্যাচ একসঙ্গে খেলছেন। অল্প সময়েই ২২৩ উইকেট শিকার করেছেন এই পেসাররা।
গ্লেন ম্যাকগ্রা, ব্রেট লি, জেসন গিলেস্পিরা একসঙ্গে দুনিয়া কাঁপিয়েছেন। এই তিন পেসার একসঙ্গে ২২ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ২৪৩ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকার মাখায়া এনটিনি, শন পোলক, আন্দ্রে নেল ১৯ ম্যাচ খেলেছেন একসঙ্গে। ২২৮ উইকেট নিয়ে তাঁরাও সেরা ত্রয়ীর তালিকায় আছেন।
এঁদের ছাড়িয়ে যেতে বেশি ম্যাচ লাগবে হালের অস্ট্রেলীয় পেসত্রয়ীর। স্টার্ক, কামিন্স, হ্যাজলউড মাত্র ১৭ ম্যাচ একসঙ্গে খেলছেন। অল্প সময়েই ২২৩ উইকেট শিকার করেছেন এই পেসাররা। স্টার্কের বাঁহাতি অ্যাঙ্গেল অস্ট্রেলীয় বোলিং আক্রমণে বাড়তি বৈচিত্র্য আনে। নতুন বলের সুইংটা স্টার্ক খুঁজে নেবেনই। কামিন্স ও হ্যাজলউডের নিয়ন্ত্রণ অবিশ্বাস্য। ছোট ছোট সুইংয়ে দুজনই সমান পাকা। আর গতিতে স্টার্ক এগিয়ে থাকলেও কামিন্স, হ্যাজলউডও কম না। এই তিন পেসার ছন্দে থাকলে অবিশ্বাস্য কীর্তি ঘটতে বাধ্য। কদিন আগেই যেমন ভারতকে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের অবিশ্বাস্য প্রদর্শনীতে মাত্র ৩৬ রানে অলআউট করে অস্ট্রেলিয়া।