চার বলে চার ছক্কা, কাপ উইন্ডিজের
লক্ষ্য ১৫৬। আগের ম্যাচেই যে দলটা ১৯২ তাড়া করে ২ বল বাকি থাকতে জিতেছে, তাদের কাছে এ আর এমন কী! যে দলে ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল আর লেন্ডল সিমন্সের মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানরা খেলেন, তারা কি এ রান দেখে দমে যাওয়ার পাত্র! ইতিহাস অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে ছিল না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে এর আগে এত বেশি রান তাড়া করে জেতেনি কোনো দল। কিন্তু ইডেনে কাল সেই ইতিহাসই নতুন করে লিখল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মারলন স্যামুয়েলসের অসাধারণ এক ইনিংস আর ম্যাচের শেষ ওভারে প্রথম চার বলে কার্লোস ব্রাফেটের চার ছক্কায় শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ ২ বল হাতে রেখে জিতে নিল ৪ উইকেটে।
ইতিহাস হলো অন্য এক ভাবেও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই প্রথম দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতল কোনো দল। একই দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী দল মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জেতায় উদযাপনটা হলো ‘ডাবল’ আনন্দে।
তাড়া করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন ১১ রানেই ৩ উইকেট হারাল, ইডেনের গ্যালারির প্রবল আশাবাদী ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান সমর্থকও যেন ঘেমে উঠলেন। ৩ উইকেটের মধ্যে একটি খোদ ক্রিস গেইলের, অন্য দুজন জনসন চার্লস আর লেন্ডল সিমন্স। ২.৩ ওভারেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ডোয়াইন ব্রাভোর সঙ্গে ৭৫ রানের জুটি গড়ে সেই ধাক্কা সামলে নিলেন মারলন স্যামুয়েলস। কিন্তু সে জন্য তাদের দুজনকে খেলতে হয়েছে ৬৯ বল। আস্কিং রান রেটটা তাই বেড়ে যায় অনেক। ২৭ বলে ২৫ রান করে ব্রাভো আউট হওয়ার পর সেই আস্কিং রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে উইকেট দিয়ে আসেন আন্দ্রে রাসেল আর অধিনায়ক ড্যারেন স্যমিও। কিন্তু স্যামুয়েলস তখনো ছিলেন শেষ ভরসা হয়ে। শেষদিকে এসে যোগ্য সঙ্গী পেলেন কার্লোস ব্রাফেটকে। শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১৯ রান। কিন্তু বেন স্টোকসের ওভারের প্রথম ৪ বলেই চারটি ছক্কা মেরে ইংলিশদের স্বপ্ন ভেঙ্গে দেন ব্রাফেট। শেষ পর্যন্ত স্যামুয়েলস অপরাজিত ছিলেন ৬৬ বলে ৮৫ রানে। ব্রাফেট করেছেন ১০ বলে অপরাজিত ৩৪।
এর আগে টুর্নামেন্টে টানা ৬ষ্ঠ টস জিতে ৬ষ্ঠ বারের মতো ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যথার্থতা প্রমাণ করতেই যেন শুরুতেই বল হাতে জ্বলে ওঠেন স্যামুয়েল বদ্রি। ইংল্যান্ডকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান এই লেগ স্পিনারই। শুরুর ৩ উইকেটের মধ্যে রয় ও মরগান তাঁর শিকার। শেষ পর্যন্ত ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে পেয়েছেন ২ উইকেট।
দ্বিতীয় বলেই জেসন রয় আউট হয়ে যাওয়ার পর রুট ক্রিজে এলেন। তাঁর চোখের সামনেই দ্বিতীয় ওভারে অ্যালেক্স হেলস গেলেন, পঞ্চম ওভারে এউইন মরগান। ২৩ রানে ৩ উইকেট নেই! এমন অবস্থায় অন্য কেউ হলে হয়তো নিজেকে গুটিয়ে নিতেন। কিন্তু রুট গুটিয়ে না গিয়ে পাল্টা চালালেন। সেই আক্রমণে কিছুক্ষণের জন্য দিশাও হারালেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলাররা। শেষ পর্যন্ত ১৫তম ওভারে গিয়ে রুট যখন আউট হলেন, নামের পাশে ৩৬ বলে ৫৪ রান।
জশ বাটলারকে নিয়ে ৬১ রানের দারুণ একটা জুটি গড়েছিলেন রুট। ওই রানও এসেছে মাত্র ৬.৪ ওভারে। কিন্তু ২২ বলে ৩৬ রান করে কার্লোস ব্রাফেটের বলে ডোয়াইন ব্রাভোকে ক্যাচ দিয়ে বাটলারের ফেরার পর রুটকে আর সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। ওপাশ থেকে পর পর বেন স্টোকস ও মঈন আলীকে আউট হয়ে যেতে দেখেই যেন ধৈর্য হারালেন রুট। শর্ট ফাইন লেগে সুলেমান বেনের হাতে ক্যাচ দিলেন ব্রাফেটের বলে। শেষদিকে ডেভিড উইলির ১৪ বলে ২১ রানের ঝড়ে ইংল্যান্ডের স্কোরটা দেড় শ পার হয়। উইলিকেও জনসন চার্লসের ক্যাচ বানিয়ে আউট করেছেন ব্রাফেট। ৪ ওভারে ২৩ রানে ৩ উইকেট, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে সফল বোলারও ব্রাফেটই।