ফাইনাল!
দীর্ঘ ২৯ দিনের লড়াই শেষে আজ ফাইনালের পালা। মুখোমুখি দুই তাসমান সাগরের দুই পাড়ের দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই প্রথম ফাইনালে উঠল নিউজিল্যান্ড।
অস্ট্রেলিয়া এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলছে। দুবাইয়ে আর কিছুক্ষণ পরই টস করতে নামবেন দুই দলের অধিনায়ক।
মহারণের আগে গা–গরম
টস জিতে আগে বোলিং নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ড দলে বদল একটি, চোটে পড়া ডেভন কনওয়ের জায়গায় দলে ঢুকেছেন টিম সাইফার্ট। অস্ট্রেলিয়ার একাদশ অপরিবর্তিত।
নিউজিল্যান্ড একাদশ:
মার্টিন গাপটিল, ড্যারিল মিচেল, কেইন উইলিয়ামসন, গ্লেন ফিলিপস, টিম সাইফার্ট, জিমি নিশাম, মিচেল স্যান্টনার, অ্যাডাম মিলনে, টিম সাউদি, ইশ সোধি ও ট্রেন্ট বোল্ট।
অস্ট্রেলিয়া একাদশ:
ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চ, মিচেল মার্শ, স্টিভ স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, ম্যাথু ওয়েড, প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, অ্যাডাম জাম্পা ও জশ হ্যাজলউড।
সংখ্যার খেল
১৮০
দুবাইয়ে আগের ২০টি টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করে ১৮০ রান করা দল কখনো হারেনি।
১০
এবারের বিশ্বকাপে দুবাইয়ে ১২ ম্যাচের মধ্যে ১০ বারই টস জয়ী দল শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতেছে।
১৯৮১
১৯৮১ সালের পর কোনো নকআউট ম্যাচে কখনো অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। এ সময়ে দুই দল নকআউট পর্বে ম্যাচ খেলেছে ১৬টি।
ক্যাচ হাতছাড়া করলেন ওয়েড
শুরুটা বেশ ভালোই হয়েছে নিউজিল্যান্ডের। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে মিচেল স্টার্ককে চার মেরে শুরু করা মার্টিন গাপটিল দ্বিতীয় ওভারে জশ হ্যাজলউডের বলেও চার মেরেছেন একটি। তৃতীয় ওভারে স্পিন নিয়ে আসে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ওভারের প্রথম বলেই বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা মেরেছেন ড্যারিল মিচেল।
ভাগ্যকেও পাশে পেয়েছে নিউজিল্যান্ড। ম্যাক্সওয়েলের ওভারের তৃতীয় বলেই গাপটিলের ব্যাটের নিচের পাশে লেগেছিল বল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান উইকেটকিপার ম্যাথু ওয়েড কঠিন ক্যাচটা ধরতে পারেননি। তৃতীয় ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের রান বিনা উইকেটে ২৩।
ওয়েডের হাতে ক্যাচ দিয়েই ফিরলেন মিচেল
আগের ওভারে ম্যাক্সওয়েলের বলে গাপটিলের ক্যাচ হাতছাড়া করা ওয়েডের ক্যাচেই পতন নিউজিল্যান্ডের প্রথম উইকেট। তবে ব্যাটসম্যান গাপটিল নন, মিচেল। হ্যাজলউডের স্লোয়ার বল মিচেলের ব্যাট ছুঁয়ে গেল উইকেটের পেছনে, ওয়েড এবার আর ক্যাচ নিতে ভুল করলেন না।
৮ বলে ১ ছক্কায় ১১ রান করে ফিরলেন মিচেল। ২৮ রানে ভাঙল নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি।
পাওয়ার প্লে-তে নিউজিল্যান্ড পেল ৩২ রান
প্রথম তিন ওভারে ২৩ রান করা নিউজিল্যান্ডের রানের গতিতে বাধা পড়েছে ড্যারিল মিচেল আউট হওয়ার পর। পরের তিন ওভারে কেইন উইলিয়ামসন ও মার্টিন গাপটিল নিতে পেরেছেন মাত্র ৯ রান। পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের রান ১ উইকেটে ৩২। এবারের বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লে-তে এটাই নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে কম রান। এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড পাওয়ার প্লে-তে করেছিল ৩৬ রান।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে জশ হ্যাজলউড দারুণ বোলিং করেছেন, ৩ ওভারে মাত্র ১১ রান দেওয়ার পাশাপাশি তুলে নিয়েছেন মিচেলের উইকেট।
টানা দুই চারে উইলিয়ামসন ঘোচালেন ৩২ বলের খরা
সেই যে চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে হ্যাজলউডের বলে চার মেরেছিলেন গাপটিল, এরপর নিউজিল্যান্ডকে দারুণভাবে চেপে ধরেছিল অস্ট্রেলিয়া। বাউন্ডারি আসেনি নিউজিল্যান্ডের, অস্ট্রেলিয়ানদের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং আর ফিল্ডিং সাজানোতে এক-দুই রান নেওয়ার জায়গাও কমে গিয়েছিল। অষ্টম ওভার পর্যন্ত ৪৮ বলের মধ্যে ২৮টিই ডট পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া!
শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের বাউন্ডারি-খরা ঘুচেছে অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসনের ব্যাটে। নবম ওভারে মিচেল মার্শের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে টানা দুই চার মেরেছেন উইলিয়ামসন। এর আগে ৩২ বলে কোনো চার বা ছক্কা পায়নি নিউজিল্যান্ড! উইলিয়ামসনের দুই চারের দ্বিতীয়টিতে নিউজিল্যান্ডের রানও পঞ্চাশ পেরিয়েছে।
দশম ওভারে জাম্পার ওভারে আবার কোনো বাউন্ডারি আসেনি। সেই ওভারে ৬ রান নিয়ে ইনিংসের প্রথম অর্ধেক, অর্থাৎ ১০ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের রান ১ উইকেটে ৫৭।
ক্যাচ মিসে চার, তারপর চার, এরপর নো বলেও আবার চার
স্টিভ ওয়াহ কি দেখেছেন জশ হ্যাজলউডের ক্যাচ হাতছাড়া করার দৃশ্যটা? মিচেল স্টার্কের বলে ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়েছিলেন উইলিয়ামসন, সহজ ক্যাচই ছিল। কিন্তু ফাইন লেগে থাকা হ্যাজলউড ক্যাচটা ধরতে তো পারেনইনি, উল্টো তাঁর হাতে লেগে হলো চার! কথিত আছে, ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ক্যাচ হাতছাড়া হওয়ার পর দক্ষিণ আফ্রিকার হার্শেল গিবসকে অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ বলেছিলেন, ‘বিশ্বকাপটাই ফেলে দিলে!’ হ্যাজলউড আজ ক্যাচ ছাড়লেন, তা-ও মাত্রই ছন্দ খুঁজে পেতে থাকা উইলিয়ামসনের। ক্যাচের সঙ্গে বিশ্বকাপটাও কি ফেলে দিলেন হ্যাজলউড? সময় বলবে।
আপাতত এতটুকু বলা যায়, উইলিয়ামসনকে আরও ভয়ংকর হতে ‘সাহায্য’ করেছেন হ্যাজলউড। আর মিচেল স্টার্ককে বানিয়েছেন ‘শাহিন শাহ আফ্রিদি!’ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই শাহিনের বলে ম্যাথু ওয়েডের ক্যাচ হাতছাড়া হয়, এর পরের তিন বলে মাথা ঠান্ডা রেখে বল করতে পারেননি পাকিস্তানের বাঁহাতি ফাস্ট বোলার। পরের তিন বলে খেয়েছেন তিন ছক্কার মার, তাতেই ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া। আজ শাহিন আফ্রিদির মতো তিন ছক্কা খাননি, তবে টানা তিন চারের মার খেয়েছেন স্টার্ক। এর মধ্যে তৃতীয় চারের সময় পিচে না পড়া বলটা উইলিয়ামসনের কোমরের ওপরে থাকায় হলো ‘নো বল।’ ফ্রি-হিট থেকে নিউজিল্যান্ড পেল আরও দুই রান। ওভারে এসেছে ১৯ রান। ১১ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের রান ১ উইকেটে ৭৬।
জাম্পা ফেরালেন গাপটিলকে
মিচেল স্টার্কের আগের ওভারে ১৯ রান নিলেন উইলিয়ামসন, কিন্তু কিউইদের উত্তেজনা পরের ওভারের প্রথম বলেই মিইয়ে দিলেন অ্যাডাম জাম্পা। তাঁকে উড়িয়ে মারতে ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়লেন রান নিতে খাবি খেতে থাকা গাপটিল। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছিল, জাম্পার বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের বড় অস্ত্র হতে পারেন গাপটিল, সেই গাপটিলই জাম্পার বলে ফিরলেন। ফিরলেন ৩৫ বলে ৩ চারে ২৮ রান করে।
টানা দুই ছক্কায় উইলিয়ামসনের ফিফটি
উইলিয়ামসন সম্ভবত আজ ঠিক করেই রেখেছেন, চার বা ছক্কা মারলে একসঙ্গে অন্তত দুটি করেই মারবেন! অষ্টম ওভারে মিচেল মার্শকে টানা দুই চারে আক্রমণ শুরু করেছিলেন, ওই দুই চারের আগে ৩২ বলে বাউন্ডারি পায়নি নিউজিল্যান্ড। এরপর স্টার্কের ওভারে একবার জীবন পেয়ে মারলেন টানা তিন চার।
মাঝে ১২তম ওভারে গাপটিল ফেরায় নিউজিল্যান্ড যদিও-বা কিছুটা হতাশ হয়ে থাকে, সেটি কেটে যাচ্ছে অধিনায়কের ব্যাটেই। ১৩তম ওভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে টানা দুই ছক্কা মারলেন উইলিয়ামসন! দ্বিতীয় ছক্কায় তাঁর অর্ধশতকও হয়ে গেল, মাত্র ৩২ বলে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে দ্রুততম অর্ধশতক এটি।
নিউজিল্যান্ডের ১০০
প্যাট কামিন্সের করা ১৪তম ওভারের পঞ্চম বলে ‘বাই’ এক রান নিয়ে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে ১০০ রান হয়ে গেল। ১৪ ওভার শেষে তাদের রান ২ উইকেটে ১০১। শেষ ৪ ওভারে ৪৫ রান নিয়েছে কিউরা, শেষ ৬ ওভারে ৬১। আক্রমণে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উইলিয়ামসনই, ৩৫ বলে ৫৪ রান তাঁর।
শেষ পাঁচ ওভারে কত করবে নিউজিল্যান্ড?
উইলিয়ামসন আগ্রাসী ব্যাটিং করছেন, তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন চারে গ্লেন ফিলিপসও। ১৫তম ওভারের প্রথম বলে জাম্পাকে ছক্কা মারেন ফিলিপস, পঞ্চম বলে দারুণ শটে মেরেছেন চার। ১৫ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের রান ২ উইকেটে ১১৪। ১০ ওভার শেষে ছিল ১ উইকেটে ৫৭, সেটি দ্বিগুণ হয়ে গেল ১৫ ওভার শেষে!
এবার স্টার্কের ওভারে ২২ রান উইলিয়ামসনের!
মিচেল স্টার্ককে যেন পাড়ার বোলার মনে করাচ্ছেন উইলিয়ামসন। স্টার্কের করা আগের ওভারে, অর্থাৎ ১১তম ওভারে একবার জীবন পেয়ে ১৯ রান নিয়েছিলেন উইলিয়ামসন, ১৬তম ওভারে আবার স্টার্ক বোলিংয়ে আসতেই তাঁর ওপর চওড়া নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। শুধু চতুর্থ বলটাতে কোনো বাউন্ডারি হলো না।
প্রথম দুই বলে চারের পর তৃতীয় বলে স্টার্কের অফ কাটারকে পায়ের ওপর থেকে উড়িয়ে মারলেন স্কয়ার লেগের সীমানার ওপারে। শেষ দুই বলে আবার দুই চার। ওভারে এল ২২ রান! ১৬ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ড ২ উইকেটে ১৩৬, উইলিয়ামসনের রান ৪২ বলে ৭৭!
স্টার্ক ৩ ওভারেই দিয়েছেন ৫০ রান!
জীবন পাওয়ার আগে-পরে দুই উইলিয়ামসন
স্টার্কের বলে হ্যাজলউডের হাতে তাঁর ক্যাচ হাতছাড়া হওয়ার সময় ২১ বলে ২১ রান ছিল উইলিয়ামসনের। কিন্তু জীবন পাওয়ার পরে? ২১ বলে করেছেন ৫৬ রান!
১৭তম ওভারে উইলিয়ামসনদের রানে ‘কিছুটা’ বাধ দিতে পেরেছেন প্যাট কামিন্স। কোনো বাউন্ডারি আসেনি সে ওভারে, রান হয়েছে ৮টি। ১৭ ওভারে নিউজিল্যান্ড ২ উইকেটে ১৪৪।
ফিলিপসের তিন বল পর নেই উইলিয়ামসনও
অস্ট্রেলিয়াকে অবশেষে মুক্তি দিলেন জশ হ্যাজলউড। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাঁর ‘নাকল বলে’ উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়েন ফিলিপস। কিন্তু তখনো অস্ট্রেলিয়ার দুশ্চিন্তা হয়ে উইলিয়ামসন তো ছিলেন। তৃতীয় বলে ফাইন লেগ দিয়ে দারুণ চারে দুশ্চিন্তাটা আরও বাড়িয়ে দেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। কিন্তু পঞ্চম বলে হ্যাজলউডকে এগিয়ে এসে লং অফে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ব্যাটে-বলে ঠিকমতো হলো না তাঁর, ধরা পড়লেন লং অফে স্টিভ স্মিথের হাতে।
কী চোখধাঁধানো এক ইনিংসই না খেললেন উইলিয়ামসন! ৪৮ বলে ৮৫ রান, চার ১০টি, ছক্কা ৩টি!
দুই উইকেটের ধাক্কায় ১৮তম ওভারে মাত্র ৫ রান নিতে পেরেছে নিউজিল্যান্ড। ১৮ ওভার শেষে তাদের রান ৪ উইকেটে ১৪৯। ক্রিজে আছেন জিমি নিশাম ও টিম সাইফার্ট।
বেঁচে গেলেন নিশাম
শেষ বলে ডিপ মিডউইকেটে মেরে দুই রান নিতে গিয়েছিলেন জিমি নিশাম। তাঁর শটের গতি ছিল অনেক, দুই রান নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণই ছিল। মিডউইকেট থেকে ফিল্ডারের থ্রো ধরে অস্ট্রেলিয়ান উইকেটকিপার ওয়েড যখন স্টাম্প ভাঙলেন, নিশাম ক্রিজে পৌঁছাতে পেরেছেন কি না, তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ারের রিভিউতে দেখা গেল, নিশাম বেঁচে গেছেন।
কামিন্সের করা ওভারটির তৃতীয় বলে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে দারুণ একটা ছক্কা মেরেছিলেন নিশাম। ওভারে এসেছে ১৩ রান। ১৯ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ড ৪ উইকেটে ১৬২। শেষ ওভারে কত রান নিতে পারবে নিউজিল্যান্ড? ১৮০ পেরোতে পারবে? এই মাঠে আগের ২০ বারে যে দল আগে ব্যাট করে ১৮০ রান করেছে, কোনো বারই হারেনি!
অস্ট্রেলিয়াকে ১৭৩ রানের লক্ষ্য দিল নিউজিল্যান্ড
শেষ ওভারে এসে কিছুটা ছন্দ খুঁজে পেয়েছেন মিচেল স্টার্ক। আগের তিন ওভারে ৫০ রান দেওয়া অস্ট্রেলিয়ান বাঁহাতি ফাস্ট বোলার শেষ ওভারে দিয়েছেন ১০ রান। প্রথম বলে অবশ্য ইয়র্কার দেওয়ার চেষ্টায় সফল হতে পারেননি স্টার্ক, সেই বলে বাউন্ডারি মেরেছেন সাইফার্ট। কিন্তু পরের পাঁচ বলে মাত্র ৬ রান দিয়েছেন স্টার্ক।
নিউজিল্যান্ড ইনিংস শেষ করেছে ৪ উইকেটে ১৭২ রান নিয়ে। সেটি তাড়া করে বিশ্বকাপ জিততে পারবে অস্ট্রেলিয়া?
দুই দশে দুই মেরুর নিউজিল্যান্ড
প্রথম দশ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের রান ছিল ১ উইকেটে ৫৭। আট ওভার শেষে তো নিউজিল্যান্ডের রান ছিল মাত্র ৪০!
কিন্তু ইনিংসের দ্বিতীয়ার্ধে, অর্থাৎ পরের দশ ওভারে ১১৫ রান তুলেছেন উইলিয়ামসনরা! নিউজিল্যান্ডের ১৭২ রান এখন পর্যন্ত ছেলেদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে কোনো দলের সর্বোচ্চ।
২১ রানে জীবন পাওয়া উইলিয়ামসন শেষ পর্যন্ত চোখধাঁধানো ইনিংস খেলে আউট হয়েছেন ৮৫ রান করে। ওই ক্যাচ মিসটাই শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াকে কাঁদাবে? দেখা যাক!
ব্যাটিংয়ে নেমেছে অস্ট্রেলিয়া, প্রথম ওভারে এল ১ রান
প্রথম ওভারে অ্যারন ফিঞ্চের ভালোই পরীক্ষা নিয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট। কখনো সুইং, তো কখনো শর্ট বল। তৃতীয় বলে ওয়ার্নার এক রান নিয়ে স্ট্রাইকে দিয়েছিলেন ফিঞ্চকে। ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান সেই ১-ই।
বোল্টের শিকার ফিঞ্চ
প্রথম ওভারে বোল্টের বলে ভুগেছিলেন ফিঞ্চ। সেই ওভারে অস্ট্রেলিয়া নিতে পেরেছে মাত্র ১ রান। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারে টিম সাউদির বলে দারুণ পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। টানা দুই চারে মেরেছেন, সেই ওভারে এসেছে ১০ রান। তৃতীয় ওভারে বোল্টের প্রথম বলে এগিয়ে এসে লং অফে বাউন্ডারি মেরেছিলেন ফিঞ্চ। কিন্তু পরের বলেই আউট!
আগের বলে ‘নাকল বলে’ চার খাওয়ার পর এবার বাউন্সার মেরেছিলেন বোল্ট, এগিয়ে এসে মারতে চাওয়া ফিঞ্চের ব্যাটে বলে হলো না। ব্যাটের ওপরের দিকের কানায় লেগে বল উঠে গেল। ডিপ স্কয়ার লেগে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন ড্যারিল মিচেল। ফাইন লেগ থেকে ডিপ স্কয়ার লেগ পর্যন্ত দৌড়ে এসে ক্যাচটা নিয়েছেন মিচেল!
ফিঞ্চ ফিরেছেন ৭ বলে ৫ রান করে। অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটি ভাঙল ১৪ রানে।
পাওয়ার প্লে-তে অস্ট্রেলিয়ার রান ৪৩
ফিঞ্চ আউট হলেও মিচেল মার্শ ও ডেভিড ওয়ার্নার মিলে অস্ট্রেলিয়ার রানের চাকা সচল রেখেছেন দারুণভাবে। চতুর্থ ওভারে ছক্কা মেরে অ্যাডাম মিলনেকে বোলিংয়ে ‘স্বাগত’ জানানো মার্শ পরের দুই বলে মেরেছেন আরও দুটি চার। পরের ওভারে সাউদির স্লোয়ারে ছক্কা হাঁকিয়েছেন ওয়ার্নার। ফিঞ্চ আউট হওয়ার পর ৩ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ছিল ১ উইকেটে ১৫, পরের দুই ওভারেই এল যথাক্রমে ১৫ ও ১০ রান।
ষষ্ঠ ওভারে অবশ্য মিলনে রানে কিছুটা বাধ দিতে পেরেছেন। এই ওভারে এল ৩ রান। পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ১ উইকেটে ৪৩। নিউজিল্যান্ডের রান এ সময়ে ছিল ১ উইকেটে ৩২।
বাকি ১০ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ৯১ রান
পাওয়ার প্লে শেষে ফিল্ডাররা ছড়িয়ে পড়তেই দুই প্রান্তে স্পিনার নিয়ে এসেছে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাটসম্যান ওয়ার্নার ও মার্শ যেন সেটিরই অপেক্ষায় ছিলেন! ইশ সোধির করা সপ্তম ওভারে তা-ও কোনো বাউন্ডারি ছাড়া ৭ রান এসেছে, কিন্তু মিচেল স্যান্টনারের করা অষ্টম ওভারে মার্শের এক ছক্কায় এল ১০ রান। সে তো শুরু!
সোধির করা নবম ওভারে প্রথমবার স্বরূপে দেখা দিলেন ওয়ার্নার। ওই ওভারের আগে ২৬ বলে ২৬ রান করা ওয়ার্নার দ্বিতীয় বলে ‘বেসবল শটে’ মারলেন চার, ওভারের শেষ দুই বলেও মারলেন চার ও বিশাল এক ছক্কা! সেই ওভারে এসেছে ১৭ রান। দশম ওভারে অবশ্য স্যান্টনার দিয়েছেন ৫ রান।
১০ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার রান ১ উইকেটে ৮২। ওয়ার্নার ৩৩ বলে ৪৫ রানে অপরাজিত, মার্শের রান ২০ বলে ৩০। তুলনার স্বার্থে বলা যায়, ১০ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের রান ছিল ১ উইকেটে ৫৭।
বিশাল ছক্কায় ওয়ার্নারের অর্ধশতক
পাওয়ার প্লে-র আগে মূলত এক-দুইয়ের ওপর ভর করে খেলতে থাকা ওয়ার্নার পাওয়ার প্লে-র পর থেকে আগ্রাসী হয়ে উঠেছেন। পাওয়ার প্লে-র ৬ ওভার শেষ হওয়ার সময় তাঁর রান ছিল ২০ বলে ১৯, সেই ওয়ার্নারই নিউজিল্যান্ডের দুই স্পিনারের ওপর চড়াও হয়ে রানের গতি বাড়িয়েছেন দারুণভাবে। ১১তম ওভারে জিমি নিশামকেও ছাড়েননি। চতুর্থ বলে নিশামকে বিশাল ছক্কা—তাঁর ইনিংসের তৃতীয় ছক্কা—হাঁকিয়ে অর্ধশতকেও পৌঁছে গেছেন ওয়ার্নার, বল লেগেছে ৩৪টি। এর মধ্যে চার মেরেছেন ৪টি।
অন্য প্রান্তে মার্শও দারুণ হিসেবী আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছেন। ২ চার ও ৩ ছক্কায় তিনি অপরাজিত ২৫ বলে ৩৯ রান করে। নিশামের ১১তম ওভারের প্রথম বলে মার্শও ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন। ওই ওভারে ১৫ রান নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রান ১১ ওভারে ১ উইকেটে ৯৭।
ওয়ার্নার আউট!
ট্রেন্ট বোল্টের করা ১৩তম ওভারে বোল্ড আউট হন বিপজ্জনক ডেভিড ওয়ার্নার। ৩৮ বলে ৫৩ রান করে আউট হলেন এ বাঁহাতি ওপেনার। উইকেটে এখন মিচেল মার্শের সঙ্গে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। জয়ের জন্য ৪২ বলে ৬৪ রান দরকার অস্ট্রেলিয়ার। ১৩ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়া ২ উইকেটে ১০৯।
মার্শের ফিফটি
১৪তম ওভারে ইশ সোধিকে ছক্কা মেরে ফিফটি তুলে নেন মিচেল মার্শ। ওই ওভারে আরও একটি চার মারেন তিনি। ৩৩ বলে ৫৯ রানে ব্যাট করছিলেন মার্শ। ১৪ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়া ২ উইকেটে ১৪৫। জয়ের জন্য ৩৬ বলে ৪৮ রান দরকার অস্ট্রেলিয়ার।
শেষ ৫ ওভারে চাই ৩৭ রান
১৫ ওভার শেষে ২ উইকেটে ১৩৬ রান তুলেছে অস্ট্রেলিয়া। জয়ের জন্য শেষ ৫ ওভারে ৩৭ রান চাই দলটির। মার্শ (৬১*) ও ম্যাক্সওয়েল (১০*) সে পথে এগিয়ে যাচ্ছেন।
আর ২৪ বলে ২৪ দরকার অস্ট্রেলিয়ার
প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপার দিকে ছুটে চলেছে অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ড শেষ মুহূর্তে কোনো চমক দেখিয়ে শিরোপাটাকে তাদের বানিয়ে নিতে পারবে? সম্ভাবনা কম বলেই মনে হচ্ছে।
মিচেল মার্শ নিজেকে বিশ্বমঞ্চে নতুন করে প্রমাণ করেছেন, তাঁর সঙ্গে জ্বলে উঠেছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও। আগের ওভারে মিলনেকে দুটি চার মারা ম্যাক্সওয়েল ১৬তম ওভারে সাউদির প্রথম তিন বলে মেরেছেন একটি করে চার ও ছক্কা। এই ওভারে এসেছে ১৩ রান। ১৬ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার রান ২ উইকেটে ১৪৯। ব্যাটিংয়ে অনেক আশা জাগানো নিউজিল্যান্ডকে মাঠে অনেক অসহায়ই মনে হচ্ছে।
বোল্টের হাতছাড়া মার্শের ক্যাচ
ট্রেন্ট বোল্টও তেমন কিছু করতে পারলেন না। আগের তিন ওভারে ৩৮ রান নেওয়া অস্ট্রেলিয়া ১৮তম ওভারে বোল্টের ছয় বলে নিয়েছে ১০ রান। ওভারের দ্বিতীয় বলে ডিপ মিডউইকেট ও লং অনের মাঝ দিয়ে দারুণ বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন মিচেল মার্শ।
ওভারের শেষ বলে বোল্টের স্লোয়ারে ব্যাটে বলে হয়নি মার্শের। বোল্টের হাতে ক্যাচ গিয়েছিল। কিন্তু বলটা হাতে জমাতে পারেননি নিউজিল্যান্ড পেসার। ওভারে ১০ রান নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার রান ২ উইকেটে ১৫৯। আর ১৮ বলে দরকার ১৪ রান।
মিলনে দিলেন ৩ রান
বড় দেরিই কি হয়ে গেল! ১৮তম ওভারে অ্যাডাম মিলনে মাত্র ৩ রান দিয়েছেন, কিন্তু অস্ট্রেলিয়া যা করার তো আগেই করে ফেলেছে। এই ওভারে ৩ রান আসার পরও এখনো হাতে থাকা বলের চেয়ে রান কম দরকার অস্ট্রেলিয়ার। আর ১২ বলে দরকার ১১ রান।
একটা ছক্কার দূরত্বে অস্ট্রেলিয়া!
সাউদির প্রথম বলে ৪ মেরেছেন মার্শ, পরের বলে নিয়েছেন ১ রান। আর ১০ বলে দরকার ৬ রান।
ম্যাক্সওয়েলের রিভার্স সুইপে বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়ার!
সাউদির করা ১৯তম ওভারের প্রথম চার বলে ৭ রান নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আর ৮ বলে দরকার ছিল ৪ রান। ম্যাক্সওয়েল স্বভাবসুলভ রিভার্স সুইপে বাউন্ডারি মেরে হিসেব মিলিয়ে দিলেন ৭ বল বাকি রেখেই!
নিউজিল্যান্ডের ১৭২ রান হেসেখেলে ৮ উইকেট হাতে রেখেই পেরিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
নিউজিল্যান্ডকে হতাশায় পুড়িয়ে অবশেষে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ
ওয়ানডে বিশ্বকাপ তারা পাঁচবার জিতেছে, আর কারও যেখানে দুটির বেশি নেই। যদিও দুবছর আগে চালু হওয়া টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা নিউজিল্যান্ডই জিতেছে, সেখানে অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে খেলতে পারেনি, কিন্তু সে তো মাত্রই শুরু হয়েছে। এর আগে টেস্টে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে অনেকবারই উঠেছে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একটা শিরোপার জন্য অস্ট্রেলিয়ার অপেক্ষা ছিল অনেকদিনের। সেই ২০০৭ সাল থেকে চলছে সংক্ষিপ্ত সংস্করণের বিশ্বকাপে শিরোপার জন্য অস্ট্রেলিয়ানদের দিন গোনা। অবশেষে দুবাইয়ে এসে হলো আজ অপেক্ষার সমাপ্তি।
নিউজিল্যান্ডের জন্য আরেকবার রইল হতাশা। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে, কিন্তু সর্বশেষ দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও হেরে যাওয়া কিউইদের নিজেদের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালেও হতাশই হতে হলো।
ব্যাট হাতে নিউজিল্যান্ড আশা জাগিয়েছিল। অধিনায়ক উইলিয়ামসনের ৮৫ রানের অসাধারণ ইনিংসে ১৭২ রান করেছিল। কিন্তু ওয়ার্নারের পর মার্শের হিসেবী আগ্রাসনে এত বড় লক্ষ্যও কী অনায়াসেই না পেরিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া!