টি-টোয়েন্টিতে ডেথ ওভারে 'কিপ্টেমি'তে সেরাদের সারিতেই মোস্তাফিজ
টি-টোয়েন্টিতে ডেথ ওভারের বোলিং সহজ কাজ নয়। ২০ ওভারের ক্রিকেটের শেষের কয়েক ওভারে বল করতে বড় হৃদয় থাকতে হয় বোলারদের। উপভোগ করতে জানতে হয় প্রচণ্ড চাপে থাকার মুহূর্তগুলো। তবেই বড় ব্যাট ও ছোট বাউন্ডারির এই যুগে ব্যাটসম্যানদের দমিয়ে রাখা সম্ভব।
খুব বেশি বোলার অবশ্য কাজটা পারেন না। হাতে গোনা কয়েকজনের নাম মাথায় আসবে যারা ডেথ ওভারের বোলিং উপভোগ করেন। শ্রীলঙ্কাকে ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতানো লাসিথ মালিঙ্গার নামটা থাকবে সবার ওপরে। ডেথ ওভারে বোলিংয়ের সময় তাঁর মুখে থাকে চওড়া হাসি! তিনি জানেন ব্যাটসম্যান কী করতে চাইছে, আর তাঁর হাতে কী অস্ত্র আছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগের মতো নিয়মিত না হলেও মালিঙ্গা এখনো ধার হারাননি। গত বছর আইপিএল চেন্নাই সুপার কিংসের মুখ কাছ থেকে শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের মালিঙ্গা, সেই শেষ ওভারের বোলিং দিয়েই।
মালিঙ্গা ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে আসতে না আসতেই তাঁর মতো আরও বেশ কয়েকজন ডেথ ওভারের বিশেষজ্ঞ পেয়ে গেছে ক্রিকেট। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টিতে ডেথ ওভার, অর্থাৎ ১৬-২০ ওভারে ইকোনমি রেট বিবেচনায় তৈরি সে তালিকায় চার নম্বরে আছেন বাংলাদেশের মোস্তাফিজুর রহমান।
ডেথ ওভারে ওভারপ্রতি সবচেয়ে কম রান দেওয়ার এই তালিকায় মোস্তাফিজের ঠিক ওপরেই আছেন ভারতের যশপ্রীত বুমরা। শীর্ষে থাকা নামটি অবশ্য চমকে দিতে পারে—টাইমাল মিলস। সময়ের আলোচিত বোলারদের মধ্যে ছয় নম্বরে আছেন পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির, দ্বিতীয় ওয়াহাব রিয়াজ। মিচেল স্টার্কের নামও আসতে পারত তালিকায়। অনেকে তো স্টার্ককে সাদা বলের ক্রিকেটের আদর্শ বোলার মনে করেন। কিন্তু বড় টুর্নামেন্ট ছাড়া খুব বেশি ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি খেলেন না এই বাঁহাতি অস্ট্রেলীয় পেসার। তাই পরিসংখ্যানে স্টার্ককে খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
পরিসংখ্যানে অবশ্য ভালোই দাপট উপমহাদেশীয় পেসারদের। যেমন ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ইকোনমি রেটের দিক থেকে সেরা পেসারদের মধ্যে অধিকাংশই ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার। শীর্ষে থাকা ইংলিশ ফাস্ট বোলার টাইমাল মিলসের ডেথ ওভারের ইকোনমি ৭.৩৬, অর্থাৎ টি-টোয়েন্টিতে ইনিংসের শেষের দিকে ওভারগুলোতে গড়ে ৭.৩৬ রান করে দেন মিলস। কিন্তু এখন আর নিয়মিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন না এই বাঁহাতি।
৭.৪২ ইকোনমি পাকিস্তানি ওয়াহাব রিয়াজের। যশপ্রীত বুমরা ও মোস্তাফিজুর রহমান আছেন তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে। দুজনই ডেথ ওভারে ৮ রান করে দেন। পাকিস্তানের জুনায়েদ খান, মোহাম্মদ আমির, ইংল্যান্ডের জফরা আর্চার আছেন মোস্তাফিজদের কাছাকাছি। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিস মরিস, শ্রীলঙ্কার ইসুরু উদানা ও ভারতের সিদ্ধার্থ কৌলও ডেথ ওভারে ভালো করে নাম কামিয়েছেন।
২০১৬ সাল থেকে সেরা ডেথ ওভারের বোলারদের মধ্যে বেশির ভাগই বাঁহাতি। মিলস, ওয়াহাব, মোস্তাফিজ, জুনাইদ, আমির ও উদানাদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যায় স্টার্কের নামও। ব্যতিক্রম শুধু বুমরা। ডানহাতি হয়েও ডেথ ওভারে তাঁর রেকর্ড অবিশ্বাস্য। অনেকটা মালিঙ্গার মতো। মালিঙ্গার মতো ব্যতিক্রমী অ্যাকশন অবশ্য বুমরার বড় শক্তি। মজার তথ্য হচ্ছে, ক্যারিয়ারের শুরুতে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস দলে মালিঙ্গাকেই মেন্টর হিসেবে পেয়েছিলেন বুমরা।
প্রশ্ন হচ্ছে, বাঁহাতি হলে ডেথ ওভারে সুবিধাটা কী? ক্রিকেট হচ্ছে কোণের খেলা। কোণের ব্যবহার ঠিকমতো করতে পারলেই সফল হওয়া সম্ভব। বাঁহাতি বোলারদের সহজাত কোণের কারণেই তাদের মারা কঠিন। ডানহাতি ব্যাটসম্যান হলে বাঁহাতি বোলারদের কোণের বিপরীতে বড় শট খেলা কঠিন। অধিকাংশ ডানহাতি ব্যাটসম্যান বড় শট খেলেন মিড উইকেট দিয়ে। বাঁহাতি বোলারদের তৈরি করা কোণের কারণে মিড উইকেটে খেলা কঠিন। আমির, স্টার্ক, ওয়াহাবরা আবার সুইং করে বল ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের প্যাডে ফেলেন, কখনো কখনো স্টাম্প উড়ে যায়। হাত খুলে মারার আগে এই ভয়েও থাকতে হয় ব্যাটসম্যানদের। বোলার হিসেবে ব্যাটসম্যানের মনে যত বেশি প্রশ্ন তোলা যায় ততই ভালো। বাঁহাতি বোলাররা যে কোনো ডানহাতি বোলার থেকে বেশি প্রশ্ন করার সামর্থ্য রাখেন।
মোস্তাফিজ এ জন্যই বিশ্বের সেরা ডেথ বোলারদের একজন। আর বাংলাদেশে বাঁহাতি বোলারদের মধ্যে তিনিই সেরা। আমিরদের মতো বল ভেতরে আনায় পটু নন, কিন্তু বাঁহাতি কোণ, কাটার, বাউন্সার ও ইয়র্কার মোস্তাফিজের সেরা হওয়ার হাতিয়ার। আর সঙ্গে ডেথ ওভারের বোলিং উপভোগ করার বিষয়টি তো আছেই।
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ইকোনমি রেটের দিক থেকে সেরা পেসার
টাইমাল মিলস - ৭.৩৬
ওয়াহাব রিয়াজ - ৭.৪২
যশপ্রীত বুমরা - ৮.০৬
মোস্তাফিজুর রহমান - ৮.১২
জুনাইদ খান - ৮.১২
মোহাম্মদ আমির - ৮.১৪
জফরা আর্চার - ৮.১৫
ক্রিস মরিস - ৮.৩৯
ইসুরু উদানা - ৮.৪৯
সিদ্ধার্থ কৌল - ৮.৫১