জয়সওয়াল-হেটমায়ারে রাজস্থানের জয়
পাঞ্জাব কিংসের সুযোগ ছিল পয়েন্ট টেবিলে রাজস্থান রয়্যালস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে ধরার। ওদিকে জয় পেলেই রাজস্থানের প্লে-অফ নিশ্চিত করার পথে আরেকটু এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। হাই স্কোরিং এক ম্যাচে রাজস্থানই পেরেছে লক্ষ্য অর্জন করতে। পাঞ্জাবের দেওয়া ১৯০ রানের লক্ষ্য ২ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখে ছুঁয়ে ফেলেছে রাজস্থান। যশস্বী জয়সওয়ালের দারুণ ইনিংস আর শিমরন হেটমায়ার ঝড়ে দারুণ জয় পেয়েছে সঞ্জু স্যামসনের দল।
পাঞ্জাব দলে কার কী ভূমিকা, সেটা আগ থেকেই ঠিক করা। শিখর ধাওয়ার অ্যাংকরের ভূমিকা পালন করবেন। অন্যদিকে দ্রুত রান তুলবেন সঙ্গীরা। পাঞ্জাব কিংস সে ছন্দেই এগোচ্ছিল। একদিকে ১৫ বলে ১২ রান করেছেন ধাওয়ান, অন্য প্রান্তে ১৫ বলে ৩১ রান জনি বেয়ারস্টো। ৫ ওভার শেষে ৪৬ রান পাঞ্জাবের। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ঘটল দুর্ঘটনা। প্রথম বলেই আউট ধাওয়ান।
পাঞ্জাব দলে ঝড় তোলা ব্যাটসম্যানের অভাব নেই, কিন্তু এক প্রান্ত ধরে খেলার ব্যাটসম্যান নিয়েই ঝামেলা। জনি বেয়ারস্টো নিজের ব্যাটিংয়ে রাশ টানলেন, আক্রমণের দায়িত্ব নিলেন ভানুকা রাজাপক্ষে। প্রথম ১০ ওভারে তাই আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ৯০ এর কাছাকাছি চলে গেছে পাঞ্জাব।
১১তম ওভারে রাজাপক্ষে আউট হতেই অবশ্য অন্য ঝামেলার জন্ম হলো। নিজের ধরন বদলানো বেয়ারস্টোও বল প্রতি রান নিচ্ছিলেন, ওদিকে মায়াঙ্ক আগারওয়ালও। পরের ৪ ওভারে তাই মাত্র ২৯ রান এসেছে। বিপদ বাড়িয়ে ৩ বল ও ১ রানের মধ্যে বিদায় নিলেন দুজনই। ৪০ বলে ৫৬ রান করেছেন বেয়ারস্টো। অধিনায়ক আগারওয়ালের রান ১৫। ১৫ ওভার শেষে দলটির রান মাত্র ১২২।
লিয়াম লিভিংস্টোনকে ঘিরেই আশা ছিল পাঞ্জাবের। আগেই ম্যাচেই ১০ বলে ৩০ রান করেছিলেন ইংলিশ এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু আজ তিনিও কিছুটা ম্লান। ১৪ বলে ২২ রান করে আউট হয়েছেন দৃষ্টিকটুভাবে। কিন্তু জিতেশ শর্মা সেটা ভুলিয়ে দিয়েছেন। লিভিংস্টোনের সঙ্গে মাত্র ২৬ বলে ৫০ রান তোলার পর রিশি ধাওয়ানকে নিয়ে ৭ বলে ২০ রান তুলে দলকে ১৮৯ রান এনে দিয়েছেন। ৪ চার ও ২ ছক্কায় ১৮ বলে ৩৮ রান করেছেন এই উইকেটকিপার।
১৯০ রানের লক্ষ্যে রাজস্থান রয়্যালস নেমেছে তেড়েফুঁড়ে। আইপিএলে মাত্র চতুর্থ ম্যাচ খেলতে নামা যশস্বী জয়সওয়াল আজ নিজেকে প্রমাণ করতে নেমেছেন। তিন ম্যাচে ২৫ রান করা জয়সওয়াল আজ প্রথম ওভারেই ২ চার ও এক ছক্কায় ১৪ রান তুলেছেন। পরের দুই ওভারে একটু স্বাভাবিক ক্রিকেটে এসেছে ১২ রান। চতুর্থ ওভারটি ছিল বিনোদনে পরিপূর্ণ এক ওভার।
কাগিসো রাবাদার প্রথম বলে ছক্কা মেরে শুরু করেছেন জস বাটলার। পরের চার বলে তিন চারসহ আরও ১৪ রান। ৫ বলে ২০ রান তুলেও সন্তুষ্ট হননি বাটলার। শেষ বলটা ছিল ওয়াইড ইয়র্কার। স্কুপ করতে চেয়েছিলেন বাটলার। কিন্তু শরীর সময়মতো জায়গায় নিতে পারেননি। শর্ট থার্ডম্যানে রাজাপক্ষের ক্যাচ হয়ে ফিরলেন ১৬ বলে ৩০ রান করে। ৪৬ রানে প্রথম উইকেট হারাল রাজস্থান।
অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন নেমে পাওয়ার প্লের মধ্যেই ১৫ রান তুলে নিলেন। ৬ ওভার শেষে রাজস্থানের স্কোর ১ উইকেটে ৬৭।
এর পর এ ম্যাচে হারা কঠিন। নবম ওভারে ফিরলেন স্যামসন (১২ বলে ২৩)। তখনো দলের রানরেট ১০-এর ওপরে। দেবদূত পাড়িক্কালের কারণে সেটা একটু নিচে নেমে এলেও জয়সওয়াল চাপ বাড়তে দিচ্ছিলেন না। সুযোগ পেলেই চার মেরে রানের গতি বাড়িয়ে নিয়েছেন, ৩৩ বলে পেয়েছেন অর্ধশতক। ১৪ ওভার শেষে রাজস্থানের রানরেট ছিল ঠিক ১০। পরের ওভারে অর্শদ্বীপকে তুলে মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন জয়সওয়াল। ৪১ বলে ৬৮ রানের ইনিংসে ৯ চার ও ২ ছক্কা ছিল।
৩৪ বলে ৪৯ রান দরকার, এমন অবস্থায় নেমেছে শিমরন হেটমায়ার। অন্যদিকে পাড়িক্কাল। প্রথম ১০ বলে এসেছে ১০ রান। শেষ ৪ ওভারে দরকার ছিল ৩৯ রান।
অর্শদ্বীপের প্রথম ৩ বলেই দুই চারে ১০ রান তুলে নিয়েছেন হেটমায়ার। ১৭তম ওভার শেষে লক্ষ্য দাঁড়াল ২৭ রানে। ১৮তম ওভার ম্যাচ নিয়ে সব আবেদন মুছে দিয়েছে। প্রথম বলে পাড়িক্কাল চার মারলেন, তৃতীয় বলে হেটমায়ারের ছক্কা। ওভার শেষ হলো পাড়িক্কালের চারে।
২ ওভারে ১১ রান, উইকেটে ১০ বলে ২২ রান করা হেটমায়ার ও ২৯ বলে ৩০ রান তোলা পাড়িক্কাল। এই অবস্থায় দুর্দান্ত এক ওভার করেছেন অর্শদ্বীপ। মাত্র ৩ রান দিয়েছেন, পঞ্চম বলে পাড়িক্কালকে (৩১) আউট করেছেন। শেষ ওভারে লক্ষ্য ছিল ৮ রান। প্রথম বলেই ওয়াইড দিয়েছেন রাহুল চাহার। পরের বল লং অন দিয়ে গ্যালারিতে আছড়ে পড়ল। পরের দুটি বল ডট দিয়েছেন হেটমায়ার। চতুর্থ বলে লং অনে বল পাঠিয়ে ম্যাচ শেষ করেছেন ১৬ বলে ৩১ তোলা হেটমায়ার।