জিম্বাবুয়ের কাছে হারায় অধিনায়কত্ব হারালেন আফগান
আফগানিস্তানের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক আসগর আফগান। ২০১৯ বিশ্বকাপের কিছুদিন আগে আচমকা তাঁর কাছ থেকে অধিনায়কত্ব কেড়ে নেয় আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। এরপর অধিনায়কত্ব নিয়ে অনেক নাটক হয়েছে। গুলবদিন নাঈবের অধিনায়কত্বে বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর তিন সংস্করণে তিন অধিনায়কের পথেও হেঁটেছিল আফগানিস্তান। কিন্তু ব্যর্থতা পিছু ছাড়েনি। তাই আবার সেই পুরোনো অধিনায়কের কাছে ফিরেছিল আফগানিস্তান ক্রিকেট।
আফগানের অধীনে আবার সাফল্য পেতেও শুরু করেছিল আফগানিস্তান। অধিনায়ক হিসেবে সাফল্যের শতকরা হারে সর্বকালের সেরাদের কাতারে চলে গিয়েছেন আসগর আফগান। কিন্তু জিম্বাবুয়ের কাছে এক হারই কাল হলো তাঁর। আফগানের ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ কিছু সিদ্ধান্তেই নাকি তাদের কাছে হেরেছে আফগানিস্তান। আর সে কারণে আবার সব সংস্করণে এক অধিনায়কের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।
আপাতত টেস্ট ও ওয়ানডের নেতৃত্ব কারা দেবেন, সেটা ঠিক করেছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। টেস্টের সবচেয়ে নিয়মিত মুখ হাশমতউল্লাহ শহীদিকে এই দুই ফরম্যাটের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর সঙ্গে সহ–অধিনায়ক হিসেবে থাকছেন আরেক ব্যাটসম্যান রহমত শাহ। টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। তবে আগের মতোই সহ-অধিনায়ক হিসেবে লেগ স্পিনার রশিদ খানই থাকছেন।
গত মার্চে প্রথম আফগান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন হাশমতউল্লাহ শহীদি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সে ম্যাচে রেকর্ড গড়া ৩০৭ রানের এক জুটি গড়েছিলেন শহীদি। আফগানিস্তানের হয়ে টেস্টে এর আগে কখনো দেড় শ রানেরই কোনো জুটি ছিল না। মজার ব্যাপার, সে জুটিতে শহীদির সঙ্গী ছিলেন আসগর আফগান। ১৬৪ রানে আউট না হলে হয়তো শহীদির আগেই দ্বিশতকের ইতিহাস আফগানই করতেন। এ দুজনের ব্যাটিং–বীরত্বেই সে টেস্ট জিতে সিরিজে সমতা এনেছিল আফগানিস্তান। কিন্তু আফগানের জন্য ঝামেলা পাকিয়েছে সিরিজের প্রথম টেস্ট।
মার্চের সে সিরিজের প্রথম টেস্ট মাত্র দুই দিনে শেষ হয়েছিল। প্রথমে ব্যাটিং করা আফগানিস্তান দুই ইনিংসেই দেড় শ পেরোতে ব্যর্থ হয়েছিল। ১৩১ ও ১৩৫ রানে গুটিয়ে যাওয়া সে টেস্ট ১০ উইকেটে হেরেছে আফগানিস্তান। আর সে ম্যাচে আফগানের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তই নাকি দলের হারের কারণ। এ ব্যাপারে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এসিবির তদন্ত কমিটির করা এক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই আসগর আফগানের কাছ থেকে অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এটা জানা গেছে, অধিনায়ক হিসেবে আফগানের নেওয়া কিছু সিদ্ধান্তের কারণে মার্চে আবুধাবিতে হওয়া সিরিজের প্রথম টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছিল আফগানিস্তান।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের এমন সিদ্ধান্ত খুব একটা চমক জাগাচ্ছে না। ২০১৯ বিশ্বকাপের মাত্র দুই মাস আগে আফগানের কাছ থেকে অধিনায়কত্ব কেড়ে নিয়ে দলের পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছিল বোর্ড। প্রকাশ্যে এর প্রতিবাদ করেছিলেন রশিদ খান ও মোহাম্মদ নবীর মতো ক্রিকেটাররা। কিন্তু তবু গুলবদিন নাঈবের কাছেই ওয়ানডে অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়েছিল। রশিদকে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক করা হয়েছিল। তরুণ রহমত শাহকে বানানো হয়েছিল টেস্ট অধিনায়ক।
বিশ্বকাপ–ব্যর্থতার দায়ে শুধু নাঈবের ওয়ানডে অধিনায়কত্বই কেড়ে নেওয়া হয়নি, কোনো সুযোগ না দিয়েই রহমত শাহর টেস্ট অধিনায়কত্বও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আর সব সংস্করণের অধিনায়ক করে দেওয়া হয় রশিদ খানকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রতিপক্ষের মাঠে প্রথম টেস্ট জয়ও এনে দিয়েছিলেন রশিদ। তবু ২০১৯ সালের ডিসেম্বরেই আবার সব ফরম্যাটের অধিনায়ক বানিয়ে ফিরিয়ে আনা হয় আসগর আফগানকে।
নতুন মেয়াদে দেড় বছরও টিকতে পারেননি আফগানিস্তানকে ১১৫ ম্যাচে নেতৃত্ব দেওয়া আফগান। তাঁর নেতৃত্বে ৭৮ ম্যাচে জিতেছে আফগানিস্তান। অধিনায়ক হিসেবে টি-টোয়েন্টি টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচে (৪৬) নেতৃত্ব দেওয়ার বিশ্ব রেকর্ডও আফগানের। তবে আরেকটি বিশ্বকাপের আগেই আবার অধিনায়কত্ব হারাতে হলো তাঁকে।