ছক্কা মেরে ওয়াসিম আকরামকে মুগ্ধ করেছেন আসিফ আলী
দুবাইয়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গতকাল পাকিস্তানি সমর্থকদের সঙ্গে সমানের গ্যালারি মাতিয়েছেন আফগানরাও। পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানদের কাছ থেকে শেষ পর্যন্ত জয়টা ‘ছিনতাই’ করে নিয়ে গেছেন ব্যাটসম্যান আসিফ আলী। টুর্নামেন্টে টানা তিন জয়ে সেমিফাইনালে ওঠার পথে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে পাকিস্তান।
যে ম্যাচের ফলাফলটা পেন্ডুলামের মতো দুলছিল একসময়, সেই ম্যাচই ৬ বলের মধ্যে বের করে নিয়ে গেলেন আসিফ। ক্রিকেট–বিশ্বজুড়েই চলছে আসিফ-বন্দনা।
আসিফের অপরাজিত ৭ বলে ২৫ রানের ক্যামিও ইনিংসে মুগ্ধ সবাই। আসিফের ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ও সাবেক অধিনায়ক ওয়াসিম আকরামও। এই ব্যাটসম্যানের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, তাঁদেরও একহাত নিয়েছেন আকরাম।
গতকাল শেষ তিন ওভারে মাত্র ২৬ রান দরকার ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু সহজ সেই সমীকরণ কঠিন হয়ে গেল আচমকা। আফগান পেসার নাভিন–উল–হক ১৮তম ওভারে দিয়েছেন মাত্র ২ রান। এর মাঝে ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানের সহ–অধিনায়ক শাদাব খান। কিন্তু ওই সময় নন–স্ট্রাইক প্রান্তে থাকা আসিফ ওই রানটি তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
শেষ ১২ বলে তখন পাকিস্তানের প্রয়োজন ২৪ রান। স্ট্রাইকে ১ বলে মাত্র ১ রান করা আসিফ। তবে এর পরের ৬ বলে তিনি যা করলেন, তাতে দুবাইয়ে আফগানদের হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। ১৯তম ওভারে জানাতের প্রথম বলেই লংঅফ দিয়ে আসিফ মারলেন ছক্কা। পরের বলটি ডট দেন জানাত। এরপর ওভারে আরও একটি বল ডট হয়েছে। কিন্তু মিড উইকেট, লংঅফ ও এক্সট্রা কাভার দিয়ে করিম জানাতকে আরও তিনবার উড়িয়ে মেরেছেন আসিফ। ৬ বল বাকি থাকতেই ম্যাচ শেষ!
অন্ধের মতো নয়, বরং আসিফ পরিকল্পনা করেই ব্যাট চালিয়েছেন ওই ওভারে। এভাবে যে তিনি ম্যাচ শেষ করতে পারেন সেই বিশ্বাস ছিল ওয়াসিম আকরামেরও। তাই তো আসিফকে সময়ের সেরা ফিনিশার বলেছেন ওয়াসিম আকরাম। টুইট করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন, ‘আসিফ আলী সবচেয়ে সেরা ফিনিশার। কী অসাধারণ পারফরম্যান্স পাকিস্তানের!’
এমন পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও উঠেছে আসিফের হাতে। অথচ আসিফের দলে ঢোকানো নিয়ে অনেক কথা হয়েছে পাকিস্তানে। দিন শেষে সেসব সমালোচনার জবাব ব্যাটেই দিয়েছেন আসিফ। আর এতেই খুশি ওয়াসিম আকরাম। ম্যাচ শেষে এ স্পোর্টসের লাইভ অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘পাকিস্তানিরা একটা কথাই শিখেছে, সব সময় তারা বলে এসেছে, ওকে তো যোগ্যতার ভিত্তিতে দলে নেওয়া হয়নি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এখন তাহলে কে হাসছে? এখন হাসছে আসিফ আলী। একজন খেলোয়াড়কে একটা নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু কখনোই সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া ঠিক না।’
আসিফ যেন জানতেন, এক ওভার আগেই খেলা শেষ করে দিতে পারবেন। ম্যাচের পর নিজের পরিকল্পনার কথাও জানিয়ে দেন আসিফ, ‘আমি ম্যাচ পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছিলাম। কোন কোন বোলারের বোলিং বাকি, ফিল্ডিং কেমনভাবে সাজানো রয়েছে, সেই অনুসারেই পরিকল্পনা করি। শোয়েব ভাইকে বলেছিলাম নাভিন ভালো বল করছে। তা ছাড়া যে প্রান্তে আমি ব্যাট করেছি সেখান থেকে বাউন্ডারিটা তুলনায় ছোট। এই প্রান্ত থেকে ২৫ রানও তুলতে পারব, সেটাই শাদাবকে বলেছিলাম। সেভাবেই জয়টা তুলে নিয়েছি।’