চেয়ারে নিজেকে বেঁধে যা বোঝালেন কোহলি
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে প্রায় এক মাস ধরে। টুর্নামেন্টের প্রথম দিন থেকে ফাইনাল পর্যন্ত ধরলে ২৮ দিন। অর্থাৎ ফাইনালে ওঠা দুই দলের খেলোয়াড়দের প্রায় এক জৈব সুরক্ষাবলয়ের মধ্যে থাকতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে জৈব সুরক্ষাবলয়ের মধ্যে এত দিন থাকতে কেমন লাগে, তা বুঝিয়ে দিলেন বিরাট কোহলি।
ইনস্টাগ্রামে আজ একটি ছবি পোস্ট করেছেন ভারত অধিনায়ক। বিরস বদনে বসে আছেন চেয়ারে। দড়ি দিয়ে তাঁর হাত দুটো চেয়ারের পেছনে বাঁধা। খানিকটা জিভ বের করে বুঝিয়েছেন, এভাবে থাকতে থাকতে তিনি ক্লান্ত। এই ছবি পোস্ট করে কোহলি লিখেছেন, ‘জৈব সুরক্ষাবলয়ের মধ্যে খেলতে এমন লাগে।’
কোহলির পোস্ট করা ছবিটি নিশ্চিতভাবেই কোনো বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ের ফাঁকে তোলা। আইপিএলের (করোনায় স্থগিত হওয়ায়) দুই পর্বে দীর্ঘদিন জৈব সুরক্ষাবলয়ে থাকতে হয়েছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু অধিনায়ককে। এর ধকল কাটিয়ে না উঠতেই কোহলিকে ঢুকতে হবে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জৈব সুরক্ষাবলয়ে। হোটেল থেকে মাঠ, মাঠ থেকে হোটেল—জৈব সুরক্ষাবলয়ে এর বাইরে জীবন বলতে কিছু নেই। এই একঘেয়েমি জীবনের মধ্যে থেকে ভারতীয়দের প্রত্যাশা মেটাতে হবে কোহলির দলকে। প্রত্যাশা মানে শিরোপা জেতা, যা করতে হলে টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হবে ফাইনাল পর্যন্ত, অর্থাৎ জৈব সুরক্ষাবলয়ে থাকতে হবে প্রায় এক মাস।
দেশের জন্য এটুকু সহ্য করতে ভারত অধিনায়কের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ক্রিকেটাররাও তো মানুষ, শরীর ও মন ঠিকই বিদ্রোহ করে বসে। জফরা আর্চারের কথাই ধরুন। গত বছর ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ চলাকালে জৈব সুরক্ষাবলয়ের মধ্যে ছিলেন আর্চার। কিন্তু এভাবে আর কত দিন! নিয়ম ভেঙে আর্চার একটু বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, আর তাতে জৈব সুরক্ষাবলয় ভাঙার জন্য নিষিদ্ধ হন।
জৈব সুরক্ষাবলয় ধরে ক্রিকেটারদের সচেতনতা বাধ্যতামূলক। দু-এক ম্যাচ রান না পেলে মনটা একটু হালকা করতে, কাঁধের ভূত নামাতে হোটেল থেকে একটু বেরোনোর সুযোগ নেই। এর পাশাপাশি কোয়ারেন্টিন–জীবন তো আছেই। সেটা একরকম কয়েদখানাই।
পাকিস্তানি ওপেনার শান মাসুদ জৈব সুরক্ষাবলয়ে থাকার ধকল কেমন, তা বোঝাতে এর আগে বলেছিলেন, ‘একঘেয়ে জীবন মানসিকভাবে অপ্রস্তুত করে ফেলে। সেরা খেলোয়াড়েরা বলেন, সে-ই সবচেয়ে ভালো খেলোয়াড়, যে জানে কখন (খেলায়) থাকতে হবে আর কখন (খেলায়) থামতে হবে। কিন্তু যদি সব সময় একই পরিবেশে থাকতে হয়—মাঠ থেকে হোটেলে, হোটেল থেকে মাঠ—তাহলে পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়ে। কারণ, সব সময় একই পরিবেশে একই সব কাজের পুনরাবৃত্তি করতে হচ্ছে। অর্থাৎ অন্য কিছুতে মনটা ফুরফুরে করার সুযোগ নেই, একটু থামার সময় নেই।’
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু হবে ১৭ অক্টোবর। এই টুর্নামেন্টের আগে নিজেকে চেয়ারে বেঁধে কোহলি যেন বোঝালেন, ক্রিকেটারদের কিসের মধ্য দিয়ে যেতে হবে! কোহলির পোস্টে কেভিন পিটারসেন অবশ্য এই জৈব সুরক্ষাবলয়ে থাকার ধকলের ব্যাপ্তিটা শুধু ক্রিকেটারদের মধ্যেই রাখেননি, ‘খেলোয়াড়/সম্প্রচারকদের আর এসব মানতে রাজি নই। দারুণ ছবি।’