ঘরের মাঠের চেনা বাংলাদেশ
ঘরের মাঠ আর ওয়ানডে ক্রিকেট—এই দুই মিলে গেলেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেন সুখের হাওয়া বইতে শুরু করে। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডে সিরিজ ধবলধোলাই করার পর দেশ-বিদেশে মিলিয়ে তিন সংস্করণে বাংলাদেশ ১০ ম্যাচ খেলে জয়ের দেখা পায়নি একটিতেও।
আবার যেই না ঘরের মাঠে ওয়ানডে ক্রিকেট ফিরল, ভোজবাজির মতো পাল্টে গেল সব। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেটা জিততে তেমন কোনো কষ্ট করতে হয়নি বাংলাদেশ দলকে।
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর থেকে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে মাত্র একটি। ২০১৬ সালের সেই সিরিজে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ওয়ানডের বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটি ঘরের মাঠে বাংলাদেশের টানা অষ্টম জয়।
এর আগে ২০১৪-২০১৫ সালে টানা ১০ ম্যাচ জয় ঘরের মাঠে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রেকর্ড। শ্রীলঙ্কাকে এবার ধবলধোলাই করলেই মাশরাফি বিন মুর্তজার বাংলাদেশের সেই রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবে তামিম ইকবালের দল।
বাংলাদেশের ঘরের মাঠে দুর্গ গড়ার শুরু মাশরাফি ওয়ানডে দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর। নিজেদের কন্ডিশনের সুবিধাটা পুরোপুরি নেওয়া শুরু হয় তখন থেকেই। আর পেস ও স্পিনের সমন্বয়ে গড়া দারুণ বোলিং আক্রমণ বাংলাদেশের ধারাবাহিক সাফল্যের বড় কারণ।
বোলারদের ম্যাচে রাখতে মাঝারি মানের রান করা দরকার, এ জন্য তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা আছেন। আর ওয়ানডের আদর্শ সমন্বয় গড়ে দেওয়ার জন্য বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান তো আছেই।
নির্বাচক হাবিবুল বাশার এই সমন্বয়কেই বাংলাদেশের ঘরের মাঠের সাফল্যের বড় কারণ মনে করেন, ‘আগে আমাদের ফাস্ট বোলার ছিল না। ফাস্ট বোলাররা এখন ভালো। সঙ্গে আমাদের দুজন স্পিনার তো থাকেই। এই সমন্বয়টাই আদর্শ। ভালো করার জন্য সবচেয়ে জরুরি এটাই। আমাদের ভাগ্য ভালো যে সাকিব আমাদের দলে খেলে। সাকিব থাকাতে এমন সমন্বয়ে খেলতে পারছি।’
ঘরের এই দাপট বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন হলেও তা ধরে রাখা আরও বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন সাবেক অধিনায়ক, ‘ভালো খেলাটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জিতছি। সবাইকে হারাচ্ছি। এটা কিন্তু ধারাটা ধরে রাখাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই চাপটা দলের ওপর সব সময় থাকে।’
এমন দাপুটে বাংলাদেশকে অবশ্য দেশের বাইরে খুঁজেই পাওয়া যায় না। নিউজিল্যান্ড সফর থেকেই তো ওয়ানডেতে ধবলধোলাই হয়ে এল বাংলাদেশ। ধারাবাহিকভাবে বাইরে খারাপ খেলার কারণটাও দলের সমন্বয় সম্পর্কিত, ‘আমাদের এখনকার এই সমন্বয়টা ঘরের বাইরের জন্যও ভালো। অনেক দল চাইলেও এমন সমন্বয় দাঁড় করাতে পারে না। কিন্তু আমরা নানা কারণে আমাদের সেরা দলটা মাঠে নামাতে পারি না। ধারাবাহিকভাবে ওদের সবাইকে যদি খেলাতে পারতাম, তাহলে একটা সময় গিয়ে ফল আসতই।’
নিউজিল্যান্ডে সাকিবকে পায়নি বাংলাদেশ। এক সাকিবের না থাকায় পুরো দলের ব্যাটিং ও বোলিং সমন্বয় পাল্টে ফেলতে হয়। বিদেশের মাটিতে যেখানে দলে দরকার স্থিতিশীলতা, সেখানে বাংলাদেশ দলের চিত্রটা থাকে উল্টো। দলের তরুণ ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাব বিদেশে বাংলাদেশের বাজে খেলার আরেক কারণ।
সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান তাঁর জায়গা থেকে কাজ করছেন তরুণদের আরও ধারাবাহিক করার ক্ষেত্রে, ‘আমাদের ‘‘এ’’ দলের অনেক সফর ছিল, যা করোনার কারণে হচ্ছে না। আমাদের অভিজ্ঞরা যেমন খেলছে, তাদের কাছাকাছি কিন্তু যেতে পারছে না তরুণেরা। সেদিনের ম্যাচটায় কিন্তু রান করেছে ওই অভিজ্ঞরাই। আমাদের তরুণদের আরও ধারাবাহিক করে তোলার চেষ্টা করতে হবে।’