গল্পটা এবার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেল
ঠিক প্রথম টেস্টের পঞ্চম দিনের প্রতিচ্ছবিই তো!
এই অ্যান্টিগাতেই সপ্তাহখানেক আগে প্রথম টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ৩৭৫ রান। ১ উইকেটে ৩৪ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শেষ করায় পঞ্চম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার হয়েছিল ৩৪১ রান। এক সপ্তাহের মধ্যে গল্পটা ঠিক ১৮০ ডিগ্রি বদলে গেল। এবার শুধু দলের নাম এদিক-ওদিক হয়ে গেল, সংখ্যাগুলো প্রায় একই আছে।
আজ অ্যান্টিগাতেই দুই টেস্টের সিরিজের শেষ দিন। দ্বিতীয় টেস্ট জিতে সিরিজও জিতে নিতে শ্রীলঙ্কার লক্ষ্য ৩৭৭ রান! এর মধ্যে গতকাল চতুর্থ দিনেই ২৯ রান করে ফেলেছে লঙ্কানরা। আজ টেস্টের পঞ্চম দিনে তাই আর দরকার ৩৪৮ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ১০ উইকেট।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ কাল দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ২৮০ রান করার পরই ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দিয়েছে। এরপর লঙ্কান দুই ওপেনার—অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে ও সিরিজে দারুণ ছন্দে থাকা লাহিরু থিরিমান্নে কোনো অঘটন আর ঘটতে দেননি। করুণারত্নে কাল চতুর্থ দিন শেষে অপরাজিত ছিলেন ১১ রানে, থিরিমান্নে ১৭ রানে।
তবে ফলের হিসাবেও প্রথম টেস্টের পুনরাবৃত্তি ঘটলে আজ অ্যান্টিগায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা শ্রীলঙ্কা কোনো দলই হাসতে পারবে না। দিন সাতেক আগে শেষ হওয়া প্রথম টেস্টে যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পঞ্চম দিনে ৩৭৫ রানের লক্ষ্যে ২৩৬ রান করার পরই দিন শেষ হয়ে যায়, টেস্ট হয় ড্র। এবারও তেমন কিছুই ঘটবে? বলবে সময়।
শেষ পর্যন্ত টেস্টটা ড্র হয়ে গেলে হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাফেটকেই দায় নিতে হবে। দায়টা আরও আগে ইনিংস ঘোষণা না করার। শেষ সেশনে দুষ্মন্ত চামিরার বলে যখন আউট হচ্ছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক, তখনই দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিবীয়দের রান হয়ে যায় ৪ উইকেটে ২২৭। লিড ততক্ষণেই হয়ে গেছে ৩২৩ রানের। কিন্তু ব্রাফেট আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেছেন। অপেক্ষাটা বৃথা যায়নি। পঞ্চম উইকেটে জেসন হোল্ডার ও জশুয়া দা সিলভা গড়েন ৪১ বলে ৫৩ রানের জুটি।
দিন শেষে ব্রাফেট নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যায় বলছিলেন, ‘আমি বোলারদের লড়াই করার জন্য স্কোরবোর্ডে আরও কিছু রান তোলার সময় নিতে চেয়েছি।’ ৩২৩ রানের লিড থেকে শ্রীলঙ্কার জন্য লক্ষ্যটা যে ৩৭৭ রানে দাঁড়াল, তাতে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে তো উইন্ডিজ একটু এগিয়ে গেছেই, ব্যাপারটাকে ক্রিকেটীয় দিক থেকেও বিশ্লেষণ করলেন ব্রাফেট, ‘উইকেটটা এখনো ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো আছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমাদের বোলাররা শেষ দিনে খুব ভালো লড়াই করবে।’
তার আগে কাল চতুর্থ দিনে অবশ্য ব্রাফেট নিজেই সামনে থেকে লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন। যদিও সেখানে একটু হতাশা থাকবে তাঁর। চার বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার টেস্টে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া থেকে অল্পের জন্য বঞ্চিত হয়েছেন ২৮ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
প্রথম ইনিংসে ওপেনিংয়ে নেমে দলের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে করেছিলেন ১২৬ রান, কাল দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হলেন ৮৫ রান করে। ২০১৭ সালে লিডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ইনিংসে ১৩৪ ও ৯৫ রানের দুই ইনিংসে উইন্ডিজকে দারুণ এক জয় এনে দিয়েছিলেন ব্রাফেট।
প্রথম ইনিংসে সাড়ে আট ঘণ্টা ক্রিজে থেকে ৩৫৪ বল খেলেছিলেন ব্রাফেট। তবে ইনিংস ঘোষণার তাড়া ছিল বলেই দ্বিতীয় ইনিংসে গতি একটু বেশি ছিল ব্রাফেটের ব্যাটে। এবার ইনিংসটা হলো প্রায় পাঁচ ঘণ্টার, ১৯৬ বলের। তবে খেটে খেটে রান নেওয়াতেই যেন তাঁর গর্ব। প্রথম ইনিংসে তবু ১৩টা চার মেরেছিলেন ব্রাফেট, কাল দ্বিতীয় ইনিংসে ৮৫ রান করার পথে চার মেরেছেন মাত্র ৪টি। ছক্কা–টক্কা তো অনেক দূরের ব্যাপার।
দলকে ১৪ রানে রেখে তাঁর ওপেনিং সঙ্গী জন ক্যাম্পবেল (১০) ফিরে যান, এরপর জার্মেইন ব্ল্যাকউডের (১৮) সঙ্গেও ব্রাফেটের জুটিটা খুব একটা বড় হলো না। ৪৪ রানের সেই জুটি ভাঙার পরই মূলত আসল লড়াই শুরু ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
কাইল মেয়ার্সের নামটা বাংলাদেশি ক্রিকেট সমর্থকমাত্রই নিশ্চিত মনে রেখেছেন, গত জানুয়ারিতে চট্টগ্রামে অভিষেকে চোখধাঁধানো ডাবল সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেওয়া সেই মেয়ার্সকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ব্রাফেট গড়েন ৮২ রানের জুটি। তাতে আগ্রাসনটা বেশি মেয়ার্সের ব্যাটেই ছিল, ৮২ রানের ৫৫-ই এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। ৭৬ বলের ইনিংসে ৮টি চার মেরেছেন মেয়ার্স।
মায়ার্স বিদায় নিলে ক্রিজে আসেন জেসন হোল্ডার। তাঁর সঙ্গে আবার বড় জুটি গড়ে লঙ্কানদের হতাশ করেন ব্রাফেট। এবারে জুটিটা হলো ৮৭ রানের। ব্রাফেটের বিদায়ে সেই জুটি ভাঙার পর হোল্ডার ধরেন হাল। অন্য প্রান্তে দা সিলভা ১৬ বলে অপরাজিত ছিলেন ২০ রানে, আর হোল্ডার শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেছেন ৭১ রান করে। তাঁর ৮৮ বলের ইনিংসটি সাজানো ৭ চারে।
এর আগে ৮ উইকেটে ২৫০ রান নিয়ে কাল চতুর্থ দিন শুরু করা লঙ্কানদের প্রথম ইনিংস শেষ করে দিতে চার ওভারও পুরোপুরি লাগেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। চতুর্থ ওভারে তিন বলের মধ্যেই হিসাব চুকেবুকে শেষ। আগের দিন ৪৯ রানে অপরাজিত পথুম নিশঙ্কা ফিফটি পেয়েছেন, এ-ই যা প্রাপ্তি লঙ্কানদের। অ্যান্টিগাতে সিরিজের প্রথম টেস্টে অভিষেকে সেঞ্চুরি করা নিশঙ্কা কাল ৫১ রান করেই আউট। দিনের চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে তাঁকে ফেরানোর দুই বল পরই বিশ্ব ফার্নান্দোকেও আউট করে লঙ্কান ইনিংসের শেষ টেনে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার কেমার রোচ।