খাজা মুসলিম বলে...
তিন দিনের মধ্যেই হোবার্ট টেস্ট জিতে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডকে ৪-০ ব্যবধানে হারিয়ে অ্যাশেজ ধরে রেখেছে দলটি। অ্যাশেজের মাত্র কয়েক দিন আগে দলের অধিনায়ককে যৌন বার্তা-বিতর্কে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল। সেই অস্ট্রেলিয়া দাপট দেখিয়েছে সিরিজজুড়ে। চতুর্থ টেস্টে বৃষ্টি বাধা না হলে হয়তো এবারও ইংল্যান্ডকে ধবলধোলাই হতে হতো।
আজ তাই সিরিজ জয়ের পরই আরাধ্য ভস্মাধার নিয়ে উল্লাসে মেতেছিল অস্ট্রেলিয়া। উদ্যাপনের অংশ হিসেবে প্রথাগত উপায়ে শ্যাম্পেনে ভেজার পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু সে উৎসবে বাদ সাধেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। ওভাবে উদ্যাপন করলে মুসলিম উসমান খাজা তার অংশ হতে পারবেন না বলে মানা করে দিয়েছেন নতুন অধিনায়ক। কামিন্সের এ আচরণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভালোবাসা আদায় করে নিয়েছে।
আজ হোবার্টে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৫৫ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ২৭১ রানের লক্ষ্যে নেমে বিনা উইকেটে ৬৮ রান তুলে ফেলে ইংল্যান্ড। সে দলই ৫৬ রানে ১০ উইকেট হারিয়ে ১২৪ রানে অলআউট হয়েছে। সিরিজজুড়েই প্যাট কামিন্সের বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব এভাবেই ইংল্যান্ডকে ম্যাচ থেকে বারবার ছিটকে দিয়েছে। শেন ওয়ার্ন, মাইকেল ভন, ইয়ান চ্যাপেল ও মাইক হাসির মতো সাবেক ক্রিকেটাররা তাই সুযোগ পেলেই তাঁর প্রশংসায় মেতেছেন।
মেলবোর্ন টেস্টে অধিনায়ক কামিন্সের আরেকটি দিক সবার নজর কেড়েছিল। অভিষিক্ত স্কট বোলান্ড সে টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে অবিশ্বাস্য এক স্পেলের জন্ম দিয়েছিলেন। মাত্র ৮ রানে ৬ উইকেট পেয়েছিলেন এই পেসার। পাঁচ উইকেট পাওয়ার পর ওভার শেষে বোলান্ড নিজের ফিল্ডিং পজিশনে যাচ্ছিলেন। কিন্তু মাঝপথে তাঁকে ডেকে পাঠান কামিন্স এবং তাঁকে সীমানায় পাঠিয়ে দেন। উদ্দেশ্য? যাতে সীমানার পাশে দাঁড়িয়ে সমর্থকদের অভিবাদন সরাসরি গ্রহণ করতে পারেন বোলান্ড।
আজও অধিনায়কত্বের মানসিক দিকটা আবার দেখালেন কামিন্স। আজ শিরোপা জেতার পর পডিয়ামে উল্লাস করছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথাগতভাবে তখন শ্যাম্পেনের বোতল এনে উদ্যাপন করার পরিকল্পনা করছিলেন কিছু সতীর্থ। কিন্তু মুসলিম উসমান খাজা অ্যালকোহল থেকে নিজেকে দূরে রাখার জন্য পডিয়ামের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেটা খেয়াল করে কামিন্স সঙ্গে সঙ্গে বোতল সরিয়ে নিতে বলেন এবং খাজাকে পডিয়ামে ডেকে পাঠান। শুধু মাঠের খেলায় নয়, বাইরেও সতীর্থদের এভাবে দেখভাল করতে পারার ক্ষমতা কামিন্সের অধিনায়কত্বের দক্ষতা হিসেবে সবার সামনে তুলে ধরছে।
এমনিতেই অস্ট্রেলিয়ায় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত খাজার ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে ওঠার যাত্রাটা কঠিন ছিল। এর মধ্যে দেশটির সংস্কৃতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার পথে বাধা হয়ে উঠেছিল তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাস। ক্রিকেটার হিসেবে বেড়ে ওঠার সময় মদ্যপান না করার ব্যাপারটা তাঁর জন্য বাধার কারণও হয়ে উঠেছিল, ‘মাঝেমধ্যে আমারও আগ্রহ জাগত, যখন ছেলেরা বলত, “আরে আয়, একবার পান করেই দেখ না। ” আমি এ ব্যাপারে সব সময় শক্ত ছিলাম। অন্য সব ক্ষেত্রে আমি বাকিদের মতো হতে চেয়েছি, অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে বেড়ে উঠতে চেয়েছি।’
কিছুদিন আগে ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’–এর সঙ্গে কথোপকথনে এ কারণে যে আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা দিয়েছিল, সেটাও জানিয়েছেন খাজা, ‘আমি ওদের সঙ্গে পান করতে যেতাম না। দীর্ঘ একটা সময় আমি ভাবতাম, “না যাওয়াতে বেশ ভালো কিছু আড্ডায় যাওয়া হলো না। কত গল্প করা হচ্ছে না”। ভাবতাম, “আহা আমি ছেলেদের একজন হওয়ার সুযোগ হারাচ্ছি। ” এসব জিনিসই আমাকে আলাদা করে দিচ্ছে।’