কোহলিকে নিয়ে শাস্ত্রীর কথায় ‘অসৎ উদ্দেশ্য’ দেখেন মাঞ্জরেকার
রবি শাস্ত্রী ভারতের কোচের পদ ছেড়েছেন এখনো তিন মাসও হয়নি। কিন্তু এর মধ্যেই ছোট-বড়, পরিচিত-অপরিচিত অনেক সংবাদমাধ্যমে অনেক কথা বলে শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছেন। তবে সর্বশেষ যে কারণে জায়গা করে নিয়েছেন, সেটি খুব একটা ভালো কিছু নয়।
ভারতের টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডের নেতৃত্ব হারানো কোহলি টেস্টের অধিনায়কত্ব থেকেও সরে দাঁড়ানোর পর কোহলিকে নিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন শাস্ত্রী। কিন্তু কোহলিকে নিয়ে সেই শাস্ত্রীর কথাই বিতর্ক জাগাচ্ছে অনেক বেশি।
গতকাল পাকিস্তানের সাবেক ব্যাটসম্যান সালমান বাট এ নিয়ে কথা বলেছেন। আর আজ ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মাঞ্জরেকার এ নিয়ে বলেছেন, শাস্ত্রীর এই দ্বিতীয় সংস্করণ বা ‘শাস্ত্রী ২.০’-কে তাঁর খুব একটা ভালো লাগছে না। কোহলিকে নিয়ে শাস্ত্রীর কথার পেছনে অ্যাজেন্ডাও দেখছেন মাঞ্জরেকার।
অধিনায়ক হিসেবে কোহলির সাফল্যে ভাসানো সময়ের বেশির ভাগজুড়ে ভারতের কোচ তো শাস্ত্রীই ছিলেন, কোহলিকে নিয়ে শাস্ত্রীর কথা তাই আলাদা গুরুত্ব পায়। কোচ-অধিনায়ক হিসেবে শাস্ত্রী আর কোহলির রসায়নও জমেছিল বেশ দারুণ। কিন্তু একদিকে শাস্ত্রী সরে গেলেন কোচের দায়িত্ব থেকে, এরপর একে একে ভারতের সব সংস্করণের দলের অধিনায়কত্ব হারালেন কোহলি।
টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছেড়েছিলেন স্বেচ্ছায়, তখনো শাস্ত্রীই কোচ হিলেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর শাস্ত্রী সরে যান কোচের পদ থেকে, কোহলি তো আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক আর থাকবেন না।
এরপর হঠাৎই কোহলিকে ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয় ভারতের ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই), আর কদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজে হারের পর কোহলি নিজেই টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন। মাস তিনেকের মধ্যে ভারতের ক্রিকেটের ‘রাজা’ থেকে ‘শুধুই একজন’ বনে গেলেন কোহলি।
কিন্তু কোহলির টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ার পেছনে অন্য কিছুর ঘ্রাণ পাচ্ছেন শাস্ত্রী। ভারতের দৈনিক ইন্ডিয়া টুডের সঙ্গে আলাপে দুই দিন আগে শাস্ত্রী বলেন, কোহলি টেস্ট অধিনায়ক থেকে গেলে টেস্টে অন্তত ৫০-৬০ জয় নিয়ে ক্যারিয়ার শেষ করত। কিন্তু কোহলির এই সাফল্য ভারতীয় ক্রিকেটেই অনেকের হজম হতো না!
ব্যস, আর বিতর্ক থেমে থাকে কীভাবে! ভারতের সংবাদমাধ্যম নিউজএইটিনে সঞ্জয় মাঞ্জরেকার সমালোচনা করেছেন শাস্ত্রীর। একসময়ে শাস্ত্রীর সঙ্গে ভারতীয় দলে খেলেছেন, ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করায় শাস্ত্রীর কোচিংয়ের সময়ের ভারতকেও দেখেছেন মাঞ্জরেকার। তবে শাস্ত্রীর এখনকার মন্তব্যের কোনো কারণ খুঁজে ব্যাখ্যা পাচ্ছেন না মাঞ্জরেকার। এই শাস্ত্রী তাঁর চোখে ‘শাস্ত্রী ২.০’ এবং এই শাস্ত্রীকে তাঁর খুব একটা ভালো লাগছে না।
‘বুঝতেই পারছি না (শাস্ত্রী এমন কেন বললেন)। আমি রবি শাস্ত্রীর অনেক বড় ভক্ত ছিলাম। তাঁর সঙ্গে খেলেছিও। খেলোয়াড়দের অনেক সাহায্য করেন তিনি, মাঠে দারুণ লড়াকু একজন ক্রিকেটার, সিনিয়র হিসেবেও দারুণ। কিন্তু এই শাস্ত্রী ২.০-কে আমি বুঝতে পারছি না’—বলছেন মাঞ্জরেকার।
কোহলিকে নিয়ে শাস্ত্রীর এই মন্তব্যের পেছনে অন্য উদ্দেশ্যও দেখছেন মাঞ্জরেকার, ‘তাঁর প্রতি অসম্মান দেখাতে চাই না। কিন্তু তাঁর মন্তব্যটা খুব বেশি একটা বুদ্ধিদীপ্ত কিছু হলো না। বোঝাই যাচ্ছে এর পেছনে একটা অ্যাজেন্ডা আছে। ক্রিকেটীয় দিক থেকে খুব একটা ভালো পর্যবেক্ষণ বলা যাচ্ছে না এটিকে।’
এর আগে গতকাল পাকিস্তানের বিতর্কিত সাবেক অধিনায়ক সালমান বাট নিজের ইউটিউব চ্যানেলে শাস্ত্রীর মন্তব্যের পক্ষেই বলেছেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই শাস্ত্রী অন্য অনেকের পরিস্থিতিটা অনেক ভালো জানেন। আমরা সবাই জানি, ভারত ও পাকিস্তানের দলের পরিবেশ একই রকম। দুর্ভাগ্যবশত এ রকম মানসিকতা এখনো আছে বলেই উঁচু মানের অ্যাথলেটরা নিজেদের সেরাটা দিতে পারে না। দুর্ভাগ্যজনক, কিন্তু এটাই সত্যি।’