টেস্ট ক্রিকেটকে পুনর্জীবিত করতে বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের ভূমিকা রাখতে বলে ধারণা ইয়ান চ্যাপেলের। আর এ ক্ষেত্রে ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলির ওপরই সবচেয়ে বেশি ভরসা রাখছেন সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক।
চ্যাপেলের ধারণা, বর্তমানে যে ধরনের ক্রিকেট খেলা হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে ভালো ক্রিকেটার খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই ‘ধর তক্তা মার পেরেক’ ক্রিকেটের কারণে ক্রিকেটের বড় শক্তিগুলোও একসময় খেলোয়াড়–সংকটে ভুগবে বলে ধারণা সরাসরি মত জানানোর জন্য বিখ্যাত এই অস্ট্রেলিয়ানের।
ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোতে নিজের কলামে চ্যাপেল এ ব্যাপারে তাঁর দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে দাপট দেখানোর জন্য যে দক্ষতা দরকার, সেটা অনেক কম বয়সেই অর্জন করতে হয়। সে দক্ষতা আবার বিভিন্ন ধাপে প্রতিযোগিতার মধ্যে খেলে শাণিয়ে নিতে হয়। এটা তখনই সম্ভব হবে, যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ দেশে কার্যকর ডেভেলপমেন্ট পদ্ধতি চালু থাকা। এটা যদি হয় তাহলেই টেস্ট ক্রিকেট প্রাণবন্ত থাকবে, না হলে একেবারে শেষ হয়ে যাবে এই খেলা।’
সাবেক অধিনায়কের চোখে বর্তমান ক্রিকেটারদেরই এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। আর এ কাজে কোহলিকেই নেতা মানছেন চ্যাপেল, ‘যদি দক্ষতা ঠিকভাবে শাণ দেওয়া হয়, তাহলে একজন খেলোয়াড় যেকোনো ধরনের ক্রিকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে—কোহলিই এর সবচেয়ে ভালো উদাহরণ। খেলোয়াড়েরা যদি আসলেই বিশ্বাস করে, টেস্টই ক্রিকেটের চূড়া, তাহলে তাদের উচিত খেলাটার ভবিষ্যৎ নিয়ে একত্র হওয়া। আর কোহলিকে তাদের মুখপাত্র বানানোর চেয়ে ভালো কোনো কিছু হতে পারে না।’
চ্যাপেলকে সবচেয়ে বেশি দুঃখ দিচ্ছে বর্তমানদের ক্রিকেটারদের নিম্ন মান। নিচু স্তরের ক্রিকেটে সমস্যা রয়ে যাওয়াতেই এমন বলে ধারণা চ্যাপেলের, ‘বছরের পর বছর ধরে একজন স্কুল ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার বনার প্রক্রিয়াটা খুবই স্বচ্ছ ছিল। কম বয়সে যত পারো ম্যাচ খেলো এবং কোনো পর্যায়ে সাফল্য পাবে, তখনই পরের ধাপে ওঠার সময়। খেলোয়াড় তার সামর্থ্যের শীর্ষে গিয়ে থেমে যেত অথবা তাদের অর্জিত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সাফল্যের সম্ভাবনা সৃষ্টি করত। এই পদ্ধতি খুবই কাজের ছিল। কিন্তু অর্থ আয়ের উদ্দেশ্যে এই পদ্ধতিকে নষ্ট করা হচ্ছে। খেলোয়াড়দের দক্ষতা সৃষ্টিতে কোনো নজরই দেওয়া হচ্ছে না।’
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের কারণে খেলোয়াড়দের ফিল্ডিং দক্ষতা ও উদ্ভাবনী শট খেলার ক্ষমতা বেড়েছে—এমন কথার সঙ্গেও একমত নন চ্যাপেল। এর পক্ষে তাঁর যুক্তি হলো, ‘প্রায়ই বলা হয়, খেলোয়াড়দের উন্নতি হয়েছে। এ কথার মানে পরিষ্কারভাবে বোঝা দরকার। যদি এ দিয়ে বলা হয়, ব্যাটসম্যানদের বড় শট খেলার ক্ষমতা বেড়েছে—তাহলে সত্যি। কিন্তু লম্বা সময় ধরে ভালো বোলিং স্পেল সামলাতে পারে কি? অধিকাংশ ক্ষেত্রে উত্তর হবে—বড় না। মানুষ যখন ফিল্ডিং নিয়ে বলে, তখনো এটা সত্য। কোনো সন্দেহ নেই, মাঠে অ্যাথলেটিক ক্যাচের সংখ্যা বেড়েছে এবং যেভাবে ধরা হয় দুর্দান্ত লাগে দেখতে। কিন্তু স্লিপ ফিল্ডিংয়ের কি উন্নতি হয়েছে? অবশ্যই না। নিয়মিত যেসব সুযোগ সৃষ্টি হয়, সেটা পায়ের কাজে খুবই ক্ষুদ্র কোনো ভুলের জন্য হয়। অথচ সে ভুলগুলো ঠিক করা হচ্ছে না।’