‘কোহলি ৫০ করলেও লোকে ওকে ব্যর্থই বলে’
বিরাট কোহলি তাহলে নিজের সাফল্যেরই শিকার? ভারতের কিংবদন্তি অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন তেমনটাই মনে করছেন। এত বছর ধরে সাফল্যের চূড়ায় উঠেছেন বলেই এখন ছোটখাটো সাফল্যও মানুষের চোখে পড়ে না, এমনটাই মনে হচ্ছে আজহারের।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে কোহলির ব্যাটে শতক নেই। এবারের আইপিএল তো কেটেছে দুঃস্বপ্নের মতো। দুটি অর্ধশতক পেলেও সেটি কেউ মনেই রাখেননি, ১৬ ম্যাচে যে মাত্র ৩৪১ রান করেছেন কোহলি! তবে আগের বছরগুলোতে দর্শকেরা কোহলির ব্যাটে শতকে অভ্যস্ত বলেই এখন আর কোহলির ৫০ রানের ইনিংসগুলোকেও তেমন বিশেষ কিছু মনে হয় না মানুষের কাছে, এমনটাই মনে হচ্ছে আজহারউদ্দিনের।
এই মুহূর্তে ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটিই কোহলির ব্যাটে রান-খরা। কিছুদিন আগপর্যন্তও প্রসঙ্গটা কোহলির ব্যাটে শতকের খরা ছিল, কিন্তু এবারের আইপিএলে তিনটি ‘গোল্ডেন ডাক’সহ মাত্র ২২.৭৩ গড়ে কোহলিকে রান করতে দেখার পর ‘শতকের খরা’র বদলে ‘রান-খরা’ নিয়েই কথা হচ্ছে বেশি। কতজন এ নিয়ে কত পরামর্শও দিয়েছেন কোহলিকে! ভারতের জাতীয় দলে কোহলির সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রী তো আইপিএল চলার সময় বলেই দিলেন, এখন আইপিএল থেকে বিরতিতে যাওয়া উচিত তাঁর।
রান-খরার মধ্যে ভারতের জাতীয় দলে কোহলির কর্তৃত্বও খর্ব হয়েছে। গত আইপিএলেই নিজের দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছেন কোহলি। গত অক্টোবরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে ভারতীয় দলের অধিনায়কত্বও ছেড়ে দেন। ক্লান্তিকেই কারণ হিসেবে দেখিয়েছিলেন কোহলি। তখন ভাবা হচ্ছিল, সংক্ষিপ্ত সংস্করণের অধিনায়কত্ব ছেড়ে কোহলি রান করায় মনোযোগ দেবেন।
তা টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর ভারতের ক্রিকেট বোর্ডই (বিসিসিআই) কোহলিকে ওয়ানডের অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর অভিমানে কোহলি নিজেই টেস্টের অধিনায়কত্বও ছেড়ে দেন। তাতে শাপেবরই হবে বলে ধারণা ছিল অনেকের। ২০১৯ সালের নভেম্বরে কলকাতায় বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে সেই যে ১৩৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন কোহলি, এরপর সব সংস্করণ মিলিয়ে ৭৩ ইনিংসে কোনো শতক নেই, অর্ধশতক অবশ্য ২৪টি করেছেন।
কিন্তু আজহারউদ্দিনের কথাটাই হয়তো সত্যি। গড়ে প্রায় প্রতি তিন ইনিংসে একটি করে ৫০ রানের ইনিংস অন্য অনেক ব্যাটসম্যানের জন্য দারুণ হতে পারে, কোহলির ক্ষেত্রে সেটি পাত্তাই পাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭০টি শতক হাঁকানো কোহলি নিজের মান এতটাই উঁচুতে নিয়ে গেছেন যে এখন আর ৫০-এ মানুষের মন ভরে না। খালিজ টাইমসে আজহারউদ্দিনও তা-ই বলছিলেন, ‘কোহলির ক্ষেত্রে যেটা হয় যে ও যদি ৫০-ও করে, মানুষ বলবে ও ব্যর্থ। তবে এমন পরিস্থিতিতে (রান-খরা) সব ক্রিকেটারকেই পড়তে হয়েছে, সেরা খেলোয়াড়েরাও খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যায়।’
সেটি কাটিয়ে ওঠার উপায় কী? কোহলিকে নিয়ে বিশ্লেষণে আরও অনেকের মতো একই দাওয়াই-ই দিয়েছেন আজহারউদ্দিন—একটা ভালো ইনিংস! ভারতের ইতিহাসে নজরকাড়া ব্যাটিংয়ের জন্য বিখ্যাতদের একজন আজহারউদ্দিনের বিশ্লেষণ বলছে, ‘ওর টেকনিকে কোনো সমস্যা নেই। মাঝেমধ্যে ভাগ্যকেও পাশে দরকার হয়। ও যদি একটা বড় ইনিংস খেলতে পারে, একটা বড় শতক, তাহলেই ওর আগ্রাসন আর আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে।’
আজহার কথা বলেছেন ভারতের উঠতি তারকাদের একজন হার্দিক পান্ডিয়াকে নিয়েও। চোটের কারণে ক্যারিয়ারে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিলেন, গত অক্টোবরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভারতীয় দলে তো পান্ডিয়ার জায়গা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। সেই পান্ডিয়াই এবার আইপিএলে দারুণ খেলেছেন, তাঁর অধিনায়কত্বেই আইপিএল অভিষেকে শিরোপা জিতেছে গুজরাট টাইটানস। আগামী অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পান্ডিয়াই ভারতের বড় অস্ত্র হতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে।
তবে আজহারউদ্দিনের একটা সংশয় আছে। চোটের পর থেকে এখনো বোলিংয়ে একেবারে নিয়মিত নন পান্ডিয়া। টি-টোয়েন্টিতে ৪ ওভার বোলিং অবশ্য করছেন। তবে আজহারউদ্দিন নিঃসংশয় হতে পারছেন না, ‘ওর ভালো কিছু করে দেখানোর ক্ষমতা আছে। ভারতীয় দলে ভালোই করেছে। তবে চোটের কারণে ও দলে নিয়মিত হতে পারছে না। এখন ফিরে এসেছে, ৪ ওভার করে বোলিংও করেছে। যদিও কতক্ষণ পর্যন্ত বোলিং করে যেতে পারবে, সেটি জানি না। তবে ও অলরাউন্ডার বলে আমরা চাই ও নিয়মিত বোলিং করুক।’