কোহলিই ভারতের সেরা অধিনায়ক, পরিসংখ্যানে, অন্য কারণেও
দুই বছরেরও বেশি সময় হয়েছে বিরাট কোহলি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শতক পাননি। এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে দল টেস্ট সিরিজ হেরে গেছে ২-১ ব্যবধানে। কোহলি হঠাৎ করেই ঘোষণা দিলেন, টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব আর করবেন না। এর আগে টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন, আর ওয়ানডের নেতৃত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে কোহলির জায়গাটা পেয়েছেন রোহিত শর্মা। ভারতের ক্রিকেটে এখন আলোচনা চলছে টেস্ট ক্রিকেটে কোহলির জায়গায় ভারত দলের পরবর্তী অধিনায়ক হবেন কে। এই আলোচনার মধ্যেই আবার চলছে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে কোহলি কতটা সফল ছিলেন, তা নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ।
পরিসংখ্যান বলছে, টেস্টে ভারতের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক কোহলি। দলকে ৬৮টি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে জিতিয়েছেন ৪০ টেস্ট। জয় আর হারের অনুপাত ২.৩৫। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে ভারত ৬০টি টেস্ট খেলে জিতেছে ২৭টিতে, জয় আর হারের অনুপাত ১.৫। বর্তমানে বিসিসিআইয়ের প্রধান সৌরভ গাঙ্গুলীর নেতৃত্বে ভারত ৪৯ টেস্টের মধ্যে জিতেছে ২১টি। সৌরভের জয় আর হারের অনুপাত ১.৬১৫।
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ও ক্রিকেট পণ্ডিত ইয়ান চ্যাপেল অবশ্য এসব পরিসংখ্যানে যাননি। তাঁর কাছে কোহলি ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অন্যদের চেয়ে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছিলেন অন্য কারণেও। দলের জন্য আর জয়ের জন্য তাঁর মধ্যে যে আবেগ ও কর্মচাঞ্চল্য ছিল, সেটা কখনোই তিনি আলগা হতে দেননি। আর আবেগের বশে তিনি কখনো ভুল সিদ্ধান্তও নেননি বলে মনে করেন চ্যাপেল।
ক্রিকেটবিষয়ক খবরের ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফোকে চ্যাপেল বলেছেন, ‘ভারতের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক বিরাট কোহলি। মহেন্দ্র সিং ধোনির সফল অধ্যায় শেষে কোহলি যখন ভারতের নেতৃত্ব নেন, বড় একটা দুশ্চিন্তা ছিল তাঁর মাত্রাতিরিক্ত আবেগ একজন অধিনায়ক হিসেবে তাঁকে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করে কি না!’
কিন্তু বাস্তবে যে সে রকম কিছু হয়নি, চ্যাপেল বললেন সেটাই, ‘কোনো সন্দেহ নেই যে অধিনায়ক হিসেবে কোহলি অন্যদের চেয়ে আলাদা। সে তার আবেগ ঢিলা হতে দেয়নি। কিন্তু সে দলকে খুব ভালোভাবে নেতৃত্বও দিয়েছে। সহ-অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানের সাহায্যে সে বিদেশের মাটিতে ভারতকে এমন সাফল্য এনে দিয়েছে, যা আগের কোনো ভারতীয় অধিনায়ক পারেনি।’
বিদেশের মাটিতে অধিনায়ক কোহলির সাফল্যের বিষয়ে চ্যাপেল বলেছেন, ‘বিদেশের মাটিতে তার বড় দুটি ব্যক্তিগত সাফল্য ২০১৮-১৯ সালে অস্ট্রেলিয়া এবং ২০২১ সালে ইংল্যান্ডে। ঘরের মাঠে তার ভারত দল ছিল অপরাজেয়। ঘরের মাঠে কোহলির নেতৃত্বাধীন ভারত ৩১ টেস্ট খেলে মাত্র একটি করে ম্যাচ অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছে।’
ভারত দলকে টেস্ট ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারাটাকেই কোহলির নেতৃত্বের সবচেয়ে সফল দিক মনে করেন চ্যাপেল, ‘সব সংস্করণেই সাফল্য আছে তার। তবে কোহলির বড় লক্ষ্য ছিল টেস্ট জগতে দলকে সাফল্য এনে দেওয়া। এটা ঠিক যে কোহলি দল খুব শক্তভাবে পরিচালনা করেছে, কিন্তু তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট খেলতে চাইত এবং জয়ের জন্য উন্মুখ থাকত।’
কোহলির উত্তরসূরি হিসেবে যে কয়টি নাম বেশি শোনা যাচ্ছে, তার মধ্যে আছেন রাহানে ও ঋষভ পন্ত। পরবর্তী অধিনায়ক যিনিই হোন না কেন, কোহলি যেমন সৌরভ ও ধোনির সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পেরেছেন, তাঁরা কি সেটা পারবেন?