মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আজ শুরুতেই অধিনায়ক বনাম অধিনায়কের লড়াই। সিলেট সিক্সার্স অধিনায়ক নাসির হোসেন বনাম চিটাগং ভাইকিংস অধিনায়ক লুক রনকি।
নাসিরের শুরুটা হলো বাজে—প্রথম বলেই লং অফ দিয়ে রনকির ছক্কা! পরের বলেই লাগামটা নিজের হাতে নিয়ে নিলেন নাসির—বোল্ড চিটাগং অধিনায়ক! রনকিকে দিয়ে শুরু। একে একে সৌম্য সরকার, লুইস রিচ, ফন জিল, তানভীর হায়দারকে ফিরিয়ে বারবার উল্লাসে মেতে উঠলেন সিলেট অধিনায়ক। নাসিরের দুর্দান্ত বোলিংয়ে চিটাগং ১২ ওভার খেলে ৬৭ রানে অলআউট, বিপিএলে যেটি চতুর্থ সর্বনিম্ন স্কোর।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ‘বাজে’ উইকেটে স্পিনারদের রাজত্ব দেখা গেছে কালই। আজ সেটি শতভাগ কাজে লাগালেন নাসির। টানা ৪ ওভার বোলিং করে ৩১ রান খরচায় পেয়ে গেলেন ৫ উইকেট। চিটাগংয়ের হারানো প্রথম ৬ উইকেটের ৫টিই নাসিরের। টি-টোয়েন্টি তো অবশ্যই, এটাই তাঁর ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। কালকের মতো আজ অবশ্য গ্যালারি ভরে ওঠেনি। নাসিরের বোলিং-জাদুর সাক্ষী তাই শ পাঁচেক দর্শক।
টুর্নামেন্টের প্রথম ওভারটা করেছেন নাসিরই। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচের প্রথম ওভারেই নাসির বুঝিয়েছেন, শুধু দল নয়, সিলেট সিক্সার্সের বোলিং আক্রমণেরও নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। ১০ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়ে দলের সফলতম বোলার নাসিরই।
শুধু পরিসংখ্যান দিয়েও বোঝানো যাবে না বোলার নাসির কতটা বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং করছেন নিয়মিত। ২০ নভেম্বর ঢাকায় রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচটাই ধরুন, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম-ক্রিস গেইলকে একাই আটকে রেখেছিলেন ২৬ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। তাঁর প্রথম দুই ওভারে নিতে পেরেছিলেন মোটে ১ রান! প্রথম ২ ওভারে ডট বল ১১টি। পরের ২ ওভারে অবশ্য ২টি ডট বল। নিজের শেষ ওভারে পেয়েছেন ম্যাককালামের উইকেটটি। নাসিরের বোলিং বিশ্লেষণ ৪ ওভারে ১ মেডেন ২৭ রান দিয়ে ১ উইকেট।
১৭ নভেম্বর রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে প্রথম ওভারে দেন ৩ রান। ২ ওভারে ১০ রান। নিজের তৃতীয় ওভারে দিয়েছেন মাত্র ২ রান। ওই ম্যাচে ডট বলের সংখ্যা ১৩। ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে নাসির পেলেন ১ উইকেট। ৫ নভেম্বর সিলেটে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকলেও দিয়েছিলেন ১১টা ডট বল।
টি-টোয়েন্টিতে উইকেটের চেয়ে ডট বল যে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটি নাসির ভালো করেই জানেন। জানেন বলে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়েই তাঁর বেশি মনোযোগ। ইনিংসের শুরুতে বোলিংয়ে এসে ডট বল দিয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানকে চাপে রেখেছেন। তাঁর আফসোস হতে পারে, ভালো বোলিং করেও দল জয়ের দেখাটা পাচ্ছিল না। আজ অবশ্য নাসিরের আফসোসটা দূর হওয়ার কথা!
জবাবে সাবলীল ব্যাটিং করেছেন দুই ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। ৬৮ রানের মামুলি টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে কোনো উইকেট হারায়নি তাঁরা, জিতেছে ১০ উইকেটে। ৩১ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা সিলেট সিক্সারসের অধিনায়ক নাসির। সিলেটের জয় ছাপিয়েও বড় হয়ে ধরা পড়ছে পিচের বেহাল দশা। টিকেট কেটে খেলা দেখতে যাওয়া দর্শকদের পয়সা উশুল হলো না। বিদেশি খেলোয়াড়ের আধিক্য, দেশি ক্রিকেটারদের সুযোগ না পাওয়ার সঙ্গে ভাঙা পিচে টি-টোয়েন্টি খেলানোর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠল বিপিএলের দিকে।