কিংবদন্তি বোথামের জন্মদিনে তাঁরই রেকর্ড সাকিবের মুকুটে
>ইয়ান বোথামের আজ জন্মদিন। জন্মদিনেই তাঁকে একটি রেকর্ড হারাতে হলো সাকিবের কাছে। বোথামের জন্মদিনে বোথামকেই ছাড়াতে কেমন লাগল বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়কের?
হ্যাপি বার্থ ডে স্যার ইয়ান বোথাম! 'বিফি'র ৬৩তম জন্মদিনটা আজ কেমন কাটছে, আপাতত জানার উপায় নেই। তবে সাকিব আল হাসানের দিনটা যে দুর্দান্ত কেটেছে, তা নিয়ে আর সন্দেহ কী! সংবাদ সম্মেলন শেষে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক চমকে দিয়ে যে তথ্যটা দিলেন, তাতে বলা যায় বোথামের জন্মদিন মানে সাকিবেরও শুভ দিন!
কীভাবে? সাকিবের কাছ থেকেই শুনুন, 'ঠিক ছয় বছর আগে, এই দিনে আমার ১০০ টেস্ট উইকেট হয়েছিল। সেটিও এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, খুলনা টেস্টে ড্যারেন স্যামিকে আউট করে ১০০ উইকেট পূর্ণ হয়েছিল। ওই দিনও (২৪ নভেম্বর) ছিল বোথামের জন্মদিন।'
সেদিন বোথামকে টপকে যাওয়ার মতো রেকর্ড না হলেও আজ হয়েছে। ২০০ উইকেট ও ৩০০০ রান করতে ইংলিশ কিংবদন্তি অলরাউন্ডারের লেগেছে ৫৫ টেস্ট। সেখানে সাকিবের লেগেছে ৫৪ টেস্ট। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই এই অর্জন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বাঁহাতি অলরাউন্ডার অবশ্য মৃদু আপত্তি করলেন। তাঁর কথা, দল জিতেছে, আগে প্রশ্ন হবে দলের অর্জন নিয়ে। সাকিবের কাছে ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলের সাফল্য যে আগে, '২০০ উইকেট পাওয়ার অনুভূতিটা ভালো হতো না যদি না জিততাম। যেহেতু জিতেছি এখন অনুভূতি অনেক ভালো।'
দলের জয়, নিজের অর্জন—এক অন্য সাকিবকেই দেখা মিলল ম্যাচ শেষে। সংবাদ সম্মেলন শুরুই করলেন দিলখোলা হাসিতে। প্রায় প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিলেন হাসিটা ধরে রেখে। আজ জন্মদিনে বোথামও এত হাসতে পারছেন কি না কে জানে!
১২ বছরের ক্যারিয়ারে সাকিব এমন হাসির উপলক্ষ অনেকেই পেয়েছেন। চলেছেন এগিয়ে। এত অর্জন, এত কীর্তি একেকটা মাইলফলক ছুঁয়ে ছুঁয়ে, ফুলের পাপড়ি ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেভাবে এগিয়ে চলে রঙিন প্রজাপতি। লম্বা সময় ধরে ধারাবাহিক ভালো খেলা, নিজেকে ক্রমেই অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া—কীভাবে পারেন? সাকিবকে এসব খুব একটা স্পর্শই করে না, 'আমি জানি না, হয়তো লাগে (ভালো), বুঝতে পারি না আসলে। যখন ম্যাচটা জিতে যাই, তখন খুশিটা একটু বেশি লাগে। কিন্তু ম্যাচ না জিতলে, দল ভালো ফল না করলে এই অর্জনগুলো আসলে ওইভাবে প্রকাশ করা যায় না। এখন এসব নিয়ে প্রশ্ন হচ্ছে, তখন হারের ব্যাখ্যা নিয়েই প্রশ্ন হতো। অনুভূতিগুলো আসলে একটার সঙ্গে আরেকটা সম্পর্কিত। দল ভালো করার সঙ্গে ব্যক্তিগত অর্জন চলে আসে, তখন ভালো লাগে। কিন্তু উল্টোটা হলে তখন খুব একটা অর্থ থাকে না। এই কারণেই আমি বলি, যত বেশি দল জিততে থাকবে, আর আমি যদি অবদান রাখতে পারি, আসলে এই অর্জনগুলো এমনি চলে আসবে।'
সাকিবের কথার সারমর্ম ওটাই, দল ভালো করলেই তিনি তৃপ্ত হন বেশি। দল জিতলেই তাঁর মুখে ফোটে হাসি। এই হাসিটা নিয়ে যখন জহুর আহমেদের সবুজ ঘাস মাড়িয়ে ফিরছেন ড্রেসিংরুমে, এক সাংবাদিক 'কঠিন' প্রশ্ন করে বসলেন, যে ২০০ উইকেট পেয়েছেন, এর মধ্যে কোনটি সবচেয়ে স্মরণীয়? অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলেন না। তাহলে সেরা স্পেলের কথাই বলুন। আরও ভাবনায় পড়ে গেলেন সাকিব। অনেক ভেবে-টেবে শুধু এতটুকুই বলতে পারলেন, '২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভালো বোলিং করেছিলাম।'
২০০৮ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাংলাদেশ মাত্র দুটি ইনিংসে বোলিং করার সুযোগ পেয়েছিল। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের ভোগাতে পেরেছিলেন একমাত্র সাকিবই। নিয়েছিলেন (৫+৬) ১১ উইকেট। ওই সময় থেকেই দুর্দান্ত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা সাকিবের। এত অর্জনের পরও উত্থানের সেই পর্বটা তিনি তাই ভুলতে পারেন না।