জাস্টিন ল্যাঙ্গারের পদত্যাগ নিয়ে এত দিন মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। কোচ ল্যাঙ্গারের পক্ষে স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিং, অ্যাডাম গিলক্রিস্টরা কথা বললেও কামিন্সের সেটি দূরে দাঁড়িয়ে দেখাটা পছন্দ হচ্ছিল না অনেকেরই। অবশেষে নীরবতা ভেঙে কামিন্স জানিয়ে দিলেন, দলের কোচিংয়ে এখন নতুন ধারা প্রয়োজন। তিনি আরও জানিয়েছেন, দলের সাপোর্ট স্টাফ ও খেলোয়াড়েরা ল্যাঙ্গারের ব্যাপারে নিজেদের মতামত দিয়েছেন, তিনি সেই মতকে শ্রদ্ধা করেন।
শনিবার ল্যাঙ্গারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও অ্যাশেজজয়ী কোচের চুক্তি ছয় মাস বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেটি গ্রহণ না করে দলের কোচের পদ থেকে সরে দাঁড়ান ল্যাঙ্গার। এরপর সাবেক ফাস্ট বোলার মিচেল জনসন কামিন্সকে ‘মেরুদণ্ডহীন অধিনায়ক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দলে নিজের পছন্দমতো কোচ নিয়োগে কামিন্সের যে ‘লক্ষ্য’, ল্যাঙ্গারের পদত্যাগ সেটিরই সূত্র ধরে।
এমন একটা অবস্থায় কামিন্স আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, সবার মতো তাঁরও একটা নিজস্ব চিন্তাভাবনা আছে, তিনি সেটিতে স্থির থাকতে চান।
কামিন্সের বক্তব্য, ‘অনেক সাবেক ক্রিকেটার আমার কাছে এসে নীরবে নিজেদের পরামর্শ দিয়েছেন, যেটি আমি স্বাগত জানাই। অনেকেই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলে তা করেছেন, সেটিকেও আমি স্বাগত জানাই এবং মনে করি, তাঁরা সেটা করেছেন খেলা ও তাঁদের বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা থেকেই। অতীতের সব তারকাকে আমি বলতে চাই, আপনারা যেমন সব সময় নিজেদের বন্ধুর প্রতি অবিচল, ঠিক তেমনি আমারও ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা রয়েছে।’
ইস্যুটি নিয়ে এত দিন মুখ বন্ধ করে রাখার ব্যাপারে কামিন্সের মন্তব্য, ‘জাস্টিন ল্যাঙ্গার অস্ট্রেলিয়ার কোচের পদ থেকে পদত্যাগ করার পর থেকে অনেক কথা হচ্ছে। বোধগম্য কারণেই আমি আজকের আগে এটি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করিনি। এখন ল্যাঙ্গার যেহেতু পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্তব্য করেছে এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াও এ ব্যাপারে কথা বলেছে, আমি এখন এ ব্যাপারে নিজের বক্তব্য সবাইকে জানাতে পারি।’
অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক আরও বলেছেন, ‘ল্যাঙ্গার স্বীকার করেছেন যে তাঁর কোচিংয়ের ধরন বেশ কঠোর। সে এ ব্যাপারে অন্যান্য কোচিং স্টাফ ও খেলোয়াড়দের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করেছে। তবে আমি মনে করি, এই ক্ষমা প্রার্থনার কোনো প্রয়োজন ছিল না। কারণ, খেলোয়াড়েরা ল্যাঙ্গারের এই কঠোরতার ব্যাপারে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছিল। আসলে ল্যাঙ্গারের কঠোরতাটা মূল ব্যাপার নয় খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের কাছে। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের উন্নতিতে, বর্তমান শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে দলের এখন কোচিংয়ের নতুন এক ধরন দরকার। খেলোয়াড়দের দক্ষতার আরও উন্নতির প্রয়োজন।’
খেলোয়াড়েরা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে কোচিংয়ের নতুন ধরনের কথাই বলেছেন বলে জানিয়েছেন দায়িত্ব নিয়েই দেশকে অ্যাশেজ জেতানো এই অধিনায়ক, ‘এই ব্যাপারগুলোই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে জানিয়েছে দলের খেলোয়াড়েরা। কোচিং স্টাফের সদস্যরাও একই কথা বলেছে বলেও আমি জেনেছি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া এরপর পরিবর্তেনের পথেই হেঁটেছে। যদিও সিদ্ধান্তটা যথেষ্ট সাহসী। কারণ দল সাফল্য পাচ্ছিল। এমন একটা সময় আমাকে তারা যে দায়িত্বটা দিয়েছে, সেটি আমি গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছি এবং তা পালন করছি। আমার সতীর্থদের প্রতিও আমার দায়িত্ব আছে।’
ল্যাঙ্গারের কোচিং পদ্ধতির কঠোরতার ব্যাপারে বলতে গিয়ে কামিন্স অবশ্য তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছেন, ‘ভালো কিছু থেকেই ব্যাপারটি এসেছে—অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট ও ব্যাগি গ্রিন টুপির প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা। এটি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটকে গত তিন দশকে অনেক কিছুই দিয়েছে। যেটি ল্যাঙ্গারকে খেলাটার একজন কিংবদন্তিতে পরিণত করেছে। তাঁর কঠোর কোচিং পদ্ধতি দলে ভালো এটা সংস্কৃতিও গড়ে তুলেছে। দলের মানও অনেক উন্নত করেছে। অস্ট্রেলিয়ান দলকে অনেক ভালো কিছু দিয়ে গেছেন তিনি। তাঁর অধীন দল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে। সবার পক্ষ থেকেই আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা করি এবং ভবিষ্যতে অস্ট্রেলিয়ান দলের ড্রেসিংরুমে তিনি সব সময়ই স্বাগত।’