ওয়াসিম–ওয়াকার এমন আচরণ করেছিলেন?
পাকিস্তান ক্রিকেটে খলনায়ক সেলিম মালিক। অথচ, এমন হওয়ার কথা ছিল না। আশি ও নব্বইয়ের দশকে মালিক বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান ছিলেন। ম্যাচ পাতানোয় জড়িয়ে তিনি সেই সম্মান হারিয়েছেন। ২০০০ সালে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ তদন্তে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় মালিককে আজীবন ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। এরপর আইনি লড়াই চালিয়ে অবশ্য আদালতে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করেন মালিক, কিন্তু সেভাবে আর কখনোই পাকিস্তান ক্রিকেটের দৃশ্যপটে ফিরতে পারেননি।
১৯৯২ সালে পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন মালিক। দেশের হয়ে ১০৩ টেস্টে ৫৭৬৮ রান তাঁর। গড় ৪৩.৮৯। পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা। ১৫ শতক, ২০ অর্ধশতক, সর্বোচ্চ সংগ্রহ ২৩৭—যেকোনো ক্রিকেটারের জন্যই স্বপ্নের মতো পরিসংখ্যান। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তো বিশ্বেরই অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন আশি-নব্বইয়ের দশকে। ২৮৩ ম্যাচে ৩২.৮৮ গড়ে ৭ হাজারের বেশি রান। শতক ৫টি, অর্ধশতক ৪৭টি। ১৯৯৩ সালে তাঁর হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তান ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব। দীর্ঘদিন পর পাকিস্তানি গণমাধ্যমের সামনে এসে কথার ঝাঁপি খুলে দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন অধিনায়ক হওয়ার পর দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ওয়াসিম আকরাম আর ওয়াকার ইউনিসের কাছ থেকে তিনি কী ধরনের আচরণের শিকার হয়েছিলেন।
পাকিস্তানের জিও সুপার চ্যানেলকে মালিক বলেন, ‘আমি যখন ১৯৯৩ সালে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হই, তখন ওয়াসিম আকরাম আর ওয়াকার ইউনিসের কাছ থেকে খুব বাজে ব্যবহার পেয়েছিলাম। তারা তো দীর্ঘদিন আমার সঙ্গে রাগে-ক্ষোভে কথাই বলত না। অধিনায়ক হিসেবে এরপরও আমি তাদের কাছ থেকে সেরাটাই বের করে আনতাম। সেটি বুদ্ধি খাটিয়ে, কৌশলে।’
দলের অধিনায়ক তিনি, দুই সতীর্থ তাঁর সঙ্গে কথাই বলেন না, তাঁরা আবার দলের সেরা বোলিং অস্ত্র। কীভাবে সব সামলাতেন মালিক? তাঁর উত্তর, ‘এটা ঠিক ওয়াসিম আর ওয়াকার আমার খুব বড় দুই অস্ত্র ছিল, তবে সেটি পেশাদারি দিক থেকে। ওরা তো আমি অধিনায়ক হওয়ার পর অনেক দিন ঠিকমতো কথাই বলেনি। ওদের হাতে যখন বল তুলে দিতাম, তখন আমার হাত থেকে সেটি তারা রীতিমতো কেড়ে নিত। তারা সে সময় পুরোপুরি নিজেদের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের দিকে নজর দিয়েছিল। আমিও কিছু বলিনি। কারণ, ওরা যদি ভালো করে, তাহলে আমারই লাভ। সেটি দলের জন্যই ভালো।’
কিন্তু বোলারের সঙ্গে কথা না হলে অধিনায়কত্ব করাটা নিশ্চয়ই তাঁর জন্য কঠিন ছিল। মালিক জানিয়েছেন, তিনি কেবল কৌশলে তাঁদের তাতিয়ে দিতেন, ‘আমি কেবল বলতাম, ওয়াসিম, ওয়াকার, তোমরা বিশ্বের সেরা বোলার। তোমরা যদি খারাপ কর, তাহলে লোকেই তোমাদের দিকে আঙুল তুলবে। নিজেদের সুনামের জন্যই তোমাদের ভালো করতে হবে।’
পাকিস্তানকে খুব বেশি দিন নেতৃত্ব দেননি মালিক। ১৯৯৩ সালের শেষ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান দলের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি ১২টি টেস্টে অধিনায়কত্ব করে ৭টিতে জিতেছেন। ৩৪ ওয়ানডেতে জিতেছেন ২১টি।