ঝড়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে রাজি না হওয়ায় শনিবার অস্ট্রেলিয়া ছেলেদের জাতীয় দলের প্রধান কোচের পদ ছেড়ে দেন জাস্টিন ল্যাঙ্গার। এর পর থেকেই সিএকে ধুয়ে দিচ্ছেন ল্যাঙ্গারের সঙ্গে খেলা সাবেক ক্রিকেটাররা।
মুখ খুলেছেন স্টিভ ওয়াহ, ম্যাথু হেইডেন, শেন ওয়ার্ন, অ্যাডাম গিলক্রিস্টদের মতো অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তিরা। জাতীয় দলে তাঁদের যোগ্য সতীর্থ ছিলেন ল্যাঙ্গার। কোচ হিসেবে সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়েছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও অ্যাশেজ। কিন্তু সিএ মাত্র ছয় মাস চুক্তির প্রস্তাব দেওয়ায় সরে দাঁড়ান ল্যাঙ্গার।
অস্ট্রেলিয়া বর্তমান জাতীয় দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ের সঙ্গে ল্যাঙ্গারের সম্পর্কটাও তেমন ভালো নয়। তাঁর পদত্যাগ নিয়ে অধিনায়ক প্যাট কামিন্স থেকে দলের অন্য খেলোয়াড়দের মুখে কুলুপ থাকা মেনে নিতে পারেননি মিচেল জনসনের মতো সাবেকরা।
তবে ল্যাঙ্গারের পক্ষের স্রোতের বিপরীতে দাঁড়ানোর মতো লোকও আছেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে। তিনি ইয়ান চ্যাপেল। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক এবং খ্যাতিমান এই ধারাভাষ্যকার ল্যাঙ্গারের সাবেক সতীর্থদের স্রেফ ধুয়ে দিয়েছেন। হেইডেন, ওয়ার্ন ও গিলিদের ল্যাঙ্গারের ‘প্রচারযন্ত্র’ বলেছেন চ্যাপেল।
ল্যাঙ্গার সরে দাঁড়ানোর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সিএর দিকে আঙুল তুলে এ ঘটনাকে ‘চরম লজ্জা’ বলেন ওয়ার্ন। গিলির কাছে ল্যাঙ্গারের পদত্যাগের দিনটি অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের জন্য ‘করুণ’ একটা দিন।
গিলিদের পরের প্রজন্মের জনসন সমালোচনা করেন কামিন্সের আচরণের। ল্যাঙ্গারের পদত্যাগ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার এই টেস্ট অধিনায়ক টুঁ শব্দটি করেননি। তাঁর কোচিংয়ের ধরন ও ড্রেসিংরুম সামলানো নিয়ে অসন্তোষ আছে কামিন্স-ওয়ার্নারদের মধ্যে। কামিন্সকে ‘মেরুদণ্ডহীন’ বলে সমালোচনা করেন সাবেক পেসার জনসন।
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে এ নিয়ে তুমুল শোরগোলের মধ্যে অন্য একটা দিকও দেখিয়ে দিলেন চ্যাপেল। সত্তর দশকে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে ‘চ্যাপেল–যুগ’ সৃষ্টির এই সারথি সিএ এবং কামিন্সের প্রতি একতরফা সমালোচনা মেনে নিতে পারছেন না।
ল্যাঙ্গারের সাবেক সতীর্থদের প্রতি আঙুল তুলে ‘ওয়াইড ওয়ার্ল্ড অব স্পোর্টস’কে চ্যাপেল বলেছেন, ‘ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কড়া সমালোচনা করাটা খুব সহজ। কারণ, তারা তেমন একটা ভালো নয়। তাই এমন প্রতিক্রিয়াই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু আমি দুটি বিষয় নিয়ে বিরক্ত—কামিন্স যতটা সম্ভব সৎ থাকার চেষ্টা করেও প্রচুর সমালোচনার শিকার হচ্ছে...আর জাস্টিন ল্যাঙ্গারের প্রচারযন্ত্র নিজেদের কাজটা করে যাচ্ছে, সত্য-মিথ্যা অনেক কিছুই লোকে বিশ্বাস করছে।’
ল্যাঙ্গারের সঙ্গে খেলোয়াড়দের বিরোধ গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে নিষ্পত্তির চেষ্টা করেছিল সিএ। বোর্ডের বড় কর্মকর্তারা ল্যাঙ্গারকে নিয়ে খেলোয়াড়দের প্রতিনিধিত্ব করা টিম পেইন, অ্যারন ফিঞ্চ ও কামিন্সের সঙ্গে বসেছিলেন।
কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। কামিন্সকে ‘সৎ’ বলে চ্যাপেল হয়তো বোঝাতে চেয়েছেন, ল্যাঙ্গারের কোচিংয়ের ধরন যে অপছন্দ, সে বিষয়ে অটল থেকেই কোচ পদ ছাড়ার সময় কোনো কথা বলেননি অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক।
ল্যাঙ্গার সরে দাঁড়ানোর পর নতুন কোচ খুঁজছে সিএ। চ্যাপেল মনে করেন, কোচ বাছাইয়ে অবশ্যই টেস্ট অধিনায়ক কামিন্সের মতামত প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
এর কারণও ব্যাখ্যা করেন চ্যাপেল, ‘আমার মতে, অধিনায়ক নির্বাচনে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছে দুটি বিষয় গুরুত্ব পাওয়া উচিত—প্রথমটা হলো তাকে (অধিনায়ক) জিজ্ঞেস করা “কোচ লাগবে কি না?” এখন তো সবাই কোচ চায়, তেমন ইচ্ছা করলে জানতে হবে, “কাকে চাও?” আমার মতে, অধিনায়ক যাকে কোচ হিসেবে চায়, তাকেই পাওয়া উচিত। তাতে কাজটা ভালো হয়। আমি বুঝি না, একজন অধিনায়ক কেন কোচ নিয়ে মতামত দিতে পারবে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন নতুন অধিনায়কের কি পুরোনো কোচ পাওয়া উচিত? আর পেলে সে তার বিষয়ে কিছু বলতে পারবে না, এমনটা হলে আমি তা মানতে পারি না। প্যাট কামিন্স ক্রিকেট নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার যে কারও চেয়ে ভালো জানেন।’