সুযোগ ছিল বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১২ হাজার রান পূর্ণ করার। কিন্তু নিজের চরিত্রের সঙ্গে যায় না বলে তার আগেই ব্যাট তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন ৩৭ বছর বয়সী তুষার ইমরান।
২০০০ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া জাতীয় দলের এই ব্যাটসম্যান কাল অবসর নিয়েছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে। প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তুষার ফিরে তাকিয়েছেন তাঁর ক্যারিয়ারের দিকে, কথা বলেছেন তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়েও—
প্রশ্ন: ২১ বছরের ক্যারিয়ারে ইতি টানলেন। কেমন লাগছে?
তুষার ইমরান: খারাপ তো অবশ্যই লাগছে। এত বছরের ক্যারিয়ার শেষ করলাম, একটা শূন্যতা অনুভব করছি। খেলা তো কেউই ছাড়তে চায় না।
প্রশ্ন: মাঠে শেষ দিনটা কীভাবে কাটালেন?
তুষার: ভালোই...। কোয়াব (ক্রিকেটারদের সংগঠন) সংবর্ধনা দিয়েছে। সতীর্থরা সম্মান জানিয়েছে। তবে কোয়াবের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু প্রত্যাশা ছিল। ভেবেছিলাম কোয়াবের প্রধান আসবেন। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তিনি আসতে পারেননি।
প্রশ্ন: নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট?
তুষার: ঘরোয়া ক্রিকেটকে কিছু নিশ্চয়ই দিতে পেরেছি। আমি নিজের ওপর সন্তুষ্ট। মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারছি, এটাও বড় পাওয়া।
প্রশ্ন: ক্যারিয়ারের কোনো স্মরণীয় মুহূর্ত মনে পড়ছে?
তুষার: আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কথা বললে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়। সেখানে আমার অবদান ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেটের কথা বলতে গেলে আজকের (গতকাল) দিনটার কথাই বলব।
প্রশ্ন: আক্ষেপও আছে নিশ্চয়ই…
তুষার: তা তো আছেই। অনেক ম্যাচ জেতাতে পারতাম, সেটা পারিনি। ২০০১ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত যতবারই দল থেকে বাদ পড়েছি, ততবারই ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলে ফিরেছি। তবু দলে ফিরতে পারিনি। এটাও একটা আক্ষেপ।
প্রশ্ন: প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১২ হাজার রান থেকে মাত্র ২৮ রান দূরে থাকতে অবসর নিলেন। মাইলফলকটা কেন স্পর্শ করলেন না?
তুষার: এই মৌসুমেই যখন এই কয়টা রান করতে পারলাম না, তাই আর লম্বা করতে চাচ্ছি না। এবার আমি যেভাবে খেলেছি, সেটা আমার সঙ্গে যায় না। আমি যে ধারাবাহিকভাবে রান করি, সেটা পারিনি এবার। কাজেই এটাই মনে হয় অবসরে যাওয়ার সঠিক সময়।
প্রশ্ন: খুলনা বিভাগ জাতীয় ক্রিকেট লিগের সবচেয়ে সফল দল। দলটাকে নিশ্চয়ই মিস করবেন...
তুষার: খুলনায় সব সময় জাতীয় দলের ক্রিকেটার থাকে। এই দলে জায়গা করে নেওয়া সহজ নয়। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হতো আমাকে। সেই সুমন ভাইদের (হাবিবুল বাশার) সময় থেকেই এমন ছিল। এই প্রতিযোগিতাটা খুব মিস করব।
প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
তুষার: কোচিং করানোর ইচ্ছা আছে। এর মধ্যেই শেখ জামাল ক্রিকেট একাডেমিতে কাজ শুরু করেছি। ভালো প্রস্তাব পেলে কোচিংয়ের সঙ্গেই থাকব।
প্রশ্ন: এই লম্বা ক্যারিয়ারে ঘরোয়া ক্রিকেটে কী পরিবর্তন দেখলেন?
তুষার: আমরা যখন খেলা শুরু করেছিলাম তখন কোনো ম্যাচ ফি ছিল না। এখন তো ম্যাচ ফি আছে। পেশাদারত্ব আছে। তখন পেটে–ভাতে খেলতাম। এখন শুধু ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেই পরিবার চালানো যায়। এটাই ঘরোয়া ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন মনে হয়।
প্রশ্ন: তরুণদের জন্য কোনো বার্তা দিতে চান?
তুষার: হতাশ হওয়া যাবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যদি ভালো সময় না যায়, তাহলে হারিয়ে যাওয়া যাবে না। হতাশ না হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করতে হবে। নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। আমার মনে হয় ওরা মনোযোগ দিয়ে খেলে না।