দক্ষিণ আফ্রিকায় আসার পর যেন ব্যাটিং কোচদের মিলনমেলাই বসে গেল বাংলাদেশ দলে! প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো নিজে ব্যাটিং বিশেষজ্ঞ। আলাদা ব্যাটিং কোচ হিসেবে আছেন জেমি সিডন্স। জোহানেসবার্গে আবার প্রথম ওয়ানডের আগে তিন দিন ব্যাটসম্যানদের ‘পাওয়ারহিটিং’ শিখিয়ে গেছেন অ্যালবি মরকেল। ধারাভাষ্যকক্ষে থাকা আরও দুজনকে যোগ করলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় চার।
অবশ্য ধারাভাষ্যকক্ষের দুজনের সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশ দলের সম্পর্ক নেই। তাঁরা দুজনই বাংলাদেশ দলের সাবেক ব্যাটিং কোচ, দুজনই দক্ষিণ আফ্রিকান। একজন নিল ম্যাকেঞ্জি ও আরেকজন অ্যাশওয়েল প্রিন্স।
দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ব্যাটসম্যান ম্যাকেঞ্জি বাংলাদেশ দলের সাদা বলের ব্যাটিং কোচ হয়েছিলেন ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ২০২০ সালের আগস্টে ছেড়ে দেন বিসিবির চাকরি। এরপর গত বছর জিম্বাবুয়ে সফরের মধ্যে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং পরামর্শক হয়ে আসেন দক্ষিণ আফ্রিকারই আরেক সাবেক ব্যাটসম্যান প্রিন্স। শুরুতে আপৎকালীন কোচ হিসেবে যোগ দিলেও পরে তাঁর চুক্তি বাড়িয়েছিল বিসিবি। তবে সেই চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই দুই পক্ষের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে অদৃশ্য এক তিক্ততা দিয়ে।
প্রিন্স থাকা অবস্থাতেই নতুন ব্যাটিং কোচ হিসেবে বিসিবি চুক্তি করে সিডন্সের সঙ্গে। প্রিন্সকে প্রস্তাব দেওয়া হয় জাতীয় দল ছেড়ে হাইপারফরম্যান্স দলের দায়িত্ব নিতে। এমন অবনমন মেনে নিতে পারেননি সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান। সিদ্ধান্ত নেন চাকরিটাই ছেড়ে দেওয়ার।
সেই প্রিন্সকে আজ প্রেসবক্সে পেয়ে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন বাংলাদেশ থেকে সিরিজ কাভার করতে আসা সাংবাদিকেরা। প্রিন্সের দেশে এসে খেলছেন তাঁরই পুরোনো ছাত্ররা, ধারাভাষ্যকার হিসেবে প্রিন্স সেই খেলা দেখছেন বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিতে। প্রথম ওয়ানডেতে সেই দৃষ্টি কেমন দেখল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের?
বাংলাদেশের ইনিংস তখনো শেষ না হলেও তামিম-লিটনের দারুণ শুরুর পর সাকিবের ব্যাটেও রানের ফল্গুধারা। প্রিন্স যেন তখনই বুঝে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশ আজ অনেক দূরে যাবে, ‘তামিম-লিটন ভালো শুরু করেছ। যদিও ৪০-৫০-এর ঘরে আউট হয়ে গেছে দুজনই, ইনিংস লম্বা করতে পারেনি। মনে হচ্ছে সাকিবও ব্যাটিংটা উপভোগ করছে। দুটি দারুণ ছক্কা মারল। ওদের ব্যাটিং দেখে আসলেই ভালো লাগছে।’
প্রিন্সের তখনই মনে হচ্ছিল, এই উইকেটে বাংলাদেশ অনায়াসে ২৮০ করে ফেলবে। লড়াই করার মতো সংগ্রহ হবে সেটাই। পরে তো বাংলাদেশ থামল ৩১৫ রানে। এ প্রতিবেদন লেখার সময় দক্ষিণ আফ্রিকাও ৫৭ রান তুলতে হারিয়ে ফেলেছে ৩ উইকেট। এখান থেকে ম্যাচটাতে তামিম ইকবালের দল কেবল জয়ের স্বপ্নই দেখতে পারে।
নিউজিল্যান্ডে তারা টেস্ট ম্যাচ জিতেছে। এর আগে এটা কেউ বিশ্বাস করত? আমি কিন্তু করতাম।
বাংলাদেশ যে প্রথম ওয়ানডেতেই এত ভালো ব্যাটিং করল, ব্যাটসম্যানদের কৃতিত্ব দেওয়ার পাশাপাশি তাতে সেঞ্চুরিয়নের উইকেটেরও ভূমিকা দেখছেন প্রিন্স, ‘বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যাটিংটা উপভোগ করবে। কারণ, এখানে উইকেট ভালো। বল ব্যাটে আসে। মাঝেমধ্যে বাউন্স হয়তো একটু বেশি হয়, তবে সেটা খুব বেশি নয়। উইকেটে এমন সুষম বাউন্স থাকলে ব্যাটসম্যানদের জন্য খেলা সহজ।’
প্রসঙ্গক্রমে প্রিন্স মনে করিয়ে দিয়েছেন এ বছরের জানুয়ারির মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের কথা। বাংলাদেশ দলের সাবেক ব্যাটিং কোচ তো মনে করেন, নিউজিল্যান্ডকে হারানো ওই টেস্টেই পেস-সহায়ক কন্ডিশনে খেলার সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন ব্যাটসম্যানরা, ‘এ ধরনের কন্ডিশনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ভালো করার সামর্থ্য আছে। নিউজিল্যান্ডে তারা টেস্ট ম্যাচ জিতেছে। এর আগে এটা কেউ বিশ্বাস করত? আমি কিন্তু করতাম। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা নিউজিল্যান্ডেও বাউন্সারের সামনে ভালো খেলেছে।’
অল্প সময়ের জন্য হলেও বাংলাদেশ দলের সঙ্গে কাজটা উপভোগই করেছেন প্রিন্স। জাতীয় দলের তরুণ ব্যাটসম্যানদের নিয়ে বললেন আশার কথা, ‘এখন অনেক তরুণ ব্যাটসম্যান উঠে আসছে। মাহমুদুল হাসান, নাঈম শেখ, শামীম, আফিফ, শান্ত—সবাই ভালো ব্যাটসম্যান।’ বিসিবির নির্বাচকদের কাছে প্রিন্সের আহ্বান, ‘ওদের (তরুণ ক্রিকেটারদের) সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে নির্বাচকদের আরও ধারাবাহিক হওয়া প্রয়োজন। বারবার পরিবর্তন না হলেই ভালো। মানুষ সব সময় বড় স্কোরই দেখতে চায়। কিন্তু সেটা করা তো প্রতিদিন সম্ভব নয়। তরুণ খেলোয়াড়দের ব্যাপারে আরও ধৈর্য ধরতে হবে।’
পুরোনো ছাত্রদের প্রশংসায় ভাসালেও বিসিবির সঙ্গে সম্পর্কের শেষটা যে তাঁর ভালো লাগেনি, সেটি বোঝা গেছে প্রিন্সকে করা শেষ প্রশ্নের উত্তরে। প্রশ্নটা ছিল, এই যে এক সিরিজেই বাংলাদেশ দলে এত এত ব্যাটিং কোচের সম্পৃক্ততা, এ নিয়ে তাঁর মত কী? শীতল কণ্ঠে প্রিন্সের উত্তর, ‘এই প্রশ্ন আপনাদের বোর্ডকেই করা উচিত, আমাকে নয়।’