>আনা ফ্রাঙ্ক ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখা তাঁর ডায়েরির জন্য। অনেকে বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত এই অনিশ্চিত সময়টাও নাকি বিশ্বযুদ্ধের মতোই। ক্ষুদ্র এক অনুজীবের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবী তো যুদ্ধেই নেমেছে! তা এই সময়ে বাংলাদেশের ঘরবন্দী খেলোয়াড়েরা যদি ডায়েরি লিখতেন, কী থাকত তাঁদের লেখায়? খেলোয়াড়দের হাতে কলম তুলে দিয়ে সেটিই জানার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো—
সেদিন একজনের কাছে শুনলাম গবেষকেরা নাকি বলছেন, মে মাসে বাংলাদেশ থেকে করোনা বিদায় নিতে পারে। গেলে তো খুবই ভালো হয়। তবে সত্যি বলতে, আমি করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিটা ঠিক বুঝতে পারছি না। আমাদের এলাকার অবস্থা এখনো বেশ ভালো। মাঝে অবশ্য একজনের শনাক্ত হওয়ার খবর শুনেছিলাম। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। মার্চে খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সাতক্ষীরায় গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছি। এখান থেকে পুরো দেশের পুরো চিত্র বোঝা কঠিন।
ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে খবর এমনি চলে আসে। তবে ইদানিং ফেসবুক ব্যবহারের চেয়ে গেমসই বেশি খেলছি। কয়েকটি গেমস নামিয়ে নিয়েছি ফোনে। গেমস আমি ভালো খেলতে পারি না। এসব খুব একটা বুঝিও না। আমার স্ত্রী আবার এটিতে বেশ পটু। আমি যদি স্কোর ৫০০ করি, সে করে ৩০০০! যখন বুঝি না, বোঝানোর দায়িত্ব সেই নেয়।
আগে বাড়ি যাওয়ার জন্য খুব পাগল থাকতাম। খেলার ফাঁকে কখন ছুটি পাব, কখন বাড়ি যাব, এটা ভাবতাম। করোনাভাইরাসের কারণে গত দেড় মাস বাড়ি থাকার পর মনে হচ্ছে, এভাবে বাড়ি থাকায় আনন্দের কিছু নেই। আমি এভাবে বাড়ি থাকতে চাই না। কয়েক দিনের জন্য আসব, খাব, ঘুরব, মজা করব, আবার ঢাকায় কাজে ফিরে যাবে। এভাবে দিনের পর দিনে বাড়ি থাকতে খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এখন যেটা রুটিন হয়ে গেছে, ঘেরে যাই, বিলে যাই, যেখানে খুব একটা মানুষের ভিড় নেই। রাস্তায় যাই না। তবে দিনের সবচেয়ে বেশি সময় কাটে ছাদে কবুতরের সঙ্গে। কবুতর পোষা আমরা বড় শখ, ওখানেই দিনে অন্তত চার ঘণ্টা কেটে যায়। সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে কবুতরকে খেতে দিই। চেয়ার পেতে বসে বসে কবুতরের খাওয়া দেখি। দুপুরে আর বিকেলেও যাই কবুতর দেখতে।
মাঝেমধ্যে আমাদের উঠানে ফুটবল খেলি। আমরা চার ভাই, ভাতিজা, চাচাতো, ফুপাতো ভাই মিলে মোটামুটি ভালো দুটো দল হয়ে যায়। বাইরের কাউকে নিই না। ফুটবলটা খেলি যাতে শরীর থেকে ঘাম ঝরে। একেবারে শুয়ে-বসে কাটালে ফিটনেস ঠিক রাখা কঠিন। টুকটাক বোলিংও করি। একেবারে না করার চেয়ে কিছু করা ভালো।
করোনার সময়ে আসলে কমবেশি সবাই বিপদে আছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ আর মধ্যবিত্তরা। নিম্ন আয়ের মানুষেরা তবুও মুখ ফুটে চাইতে পারে। কিন্তু মধ্যবিত্তরা নিজের সংকটের কথা কাউকে বলতে পারে না। এদের কষ্টই বেশি।
করোনা সংকটে মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমাদের খেলোয়াড়েরা অনেকে অনেক কিছু নিলামে তুলছে দেখছি। আমি অবশ্য এটা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। বিষয়টা আগে বোঝার চেষ্টা করছি। আর মানুষের পাশে দাঁড়ালেও সেটা একেবারেই গোপন রাখতে চাই।