এবার টি-টোয়েন্টি জয়ের পালা

>

ওয়ানডেতে অভিষেকেই ঝড় তুলেছেন। ম্যাচসেরা অভিষেক টেস্টেও। টি–টোয়েন্টিতে মুস্তাফিজুর রহমানের জয়যাত্রার শুরু কি এই এশিয়া কাপেই? লিখেছেন রানা আব্বাস

মুস্তাফিজুর রহমান
মুস্তাফিজুর রহমান

সংবাদ সম্মেলনে মুস্তাফিজ রহমানের মন্তব্যগুলো হয় ‘টি-টোয়েন্টি’র মতোই। সংক্ষিপ্ত উত্তর। সংবাদ সম্মেলনও হয় স্বল্পদৈর্ঘ্যের!
টি-টোয়েন্টির সঙ্গে অবশ্য তাঁর ঘনিষ্ঠ একটা যোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মুস্তাফিজের আগমন এই সংস্করণ দিয়েই। গত এপ্রিলে পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র ম্যাচের সিরিজে নজরও কেড়েছিলেন পাকিস্তানের নামকরা ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়ে। সেদিন প্রথমে তাঁর হাতেই বল তুলে দিয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজারেরও বেশি রান করা শহীদ আফ্রিদিকে দিয়েই উইকেটের খাতা খুলেছিলেন মুস্তাফিজ। একবার জানিয়েছিলেন, ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত যতগুলো উইকেট পেয়েছেন, এটি তাঁর অন্যতম প্রিয়। অভিষেকে মুস্তাফিজের বোলিং ছিল এমন: ৪-০-২০-২। ডট বলই ছিল ১৬টি!
টি-টোয়েন্টি অভিষেকটা দারুণ হলেও দুর্দান্ত মুস্তাফিজের দেখা মিলল আসলে ওয়ানডেতেই। ৯ ওয়ানডেতে ২৬ উইকেট সাক্ষ্য দিচ্ছে, তিনি কতটা উজ্জ্বল এই সংস্করণে। ম্যাচসেরা হয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতেই। গত ডিসেম্বরে তো জায়গা করে নিলেন আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশেও। তার আগে জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক টেস্টেও দেখা মিলল দুরন্ত মুস্তাফিজের। বৃষ্টি-বিঘ্নিত চট্টগ্রাম টেস্টে ৪ উইকেট নিয়ে হলেন ম্যাচসেরা।
মুস্তাফিজের সাফল্যগাথা যেন ওয়ানডে ও টেস্টেই সীমাবদ্ধ। যে সংস্করণ দিয়ে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাব, সেটিতেই এ পর্যন্ত সাফল্য আসেনি বলার মতো। টি-টোয়েন্টির পরিসংখ্যানটা মন্দ নয়। ৭ ম্যাচে ১৪.৯০ গড় ও ৫.৪৫ ইকোনমিতে উইকেট ১০টি। তবে চোখ বন্ধ করে এখন পর্যন্ত মুস্তাফিজ-কাব্যের যে খণ্ডাংশগুলো চোখে ভাসবে, এর প্রায় সব কটিই ওয়ানডেতে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচসেরা হতে পারেননি একবারও!
তবে কি টেস্ট-ওয়ানডের তুলনায় টি-টোয়েন্টি কঠিন মুস্তাফিজের কাছে? জবাবে কূটনৈতিক, এবং সেই ‘টি-টোয়েন্টি উত্তর’ই মিলল, ‘খেলতে পারলে সব সংস্করণই সহজ।’ এরপরই অবশ্য স্পষ্ট হলো, তাঁর পছন্দের তালিকায় টি-টোয়েন্টির অবস্থান বেশ পরে, ‘আমার কাছে ওয়ানডে সবচেয়ে ভালো লাগে।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেই বিস্ময়ের পর বিস্ময় উপহার দেওয়া এই বাঁহাতি পেসার এ পর্যন্ত শুধু দ্বিপক্ষীয় সিরিজে খেলেছেন। প্রথমবারের মতো খেলতে যাচ্ছেন এশিয়ার ক্রিকেট-শ্রেষ্ঠত্ব নির্ণায়ক মঞ্চে। আর এই প্রথম এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারণ হতে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে, যে সংস্করণে তাঁর সাফল্য তুলনামূলক কম।
মুস্তাফিজের জন্য চ্যালেঞ্জটা তাই অনেক বড়। সেই চ্যালেঞ্জটা নিচ্ছেন আবির্ভাবেই বড় ভরসার জায়গা হয়ে ওঠা এই তরুণ, ‘এশিয়া কাপের দলে রাখার জন্য নির্বাচক-কোচকে ধন্যবাদ। এখন চেষ্টা করব নিজের সেরাটা দেওয়ার।’
মুস্তাফিজের ‘সেরাটা দেওয়া’ মানে নিশ্চয় জানেন—জয়ের গল্পটা দারুণভাবে লেখা, বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠা। মুস্তাফিজের হাত ধরে কি এবার আসবে সেই উপলক্ষ? মুছবে ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালের সেই কষ্ট?