এটাই বুঝি তামিমদের সেরা প্রস্তুতি
লোকে বলে, ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। ক্রিকেটে এই লোক কথা খাটে বাংলাদেশ দলের নিউজিল্যান্ড সফরের সঙ্গে।
সবচেয়ে বড় শত্রু সেখানকার কন্ডিশন, ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে সুইং ও সিম মুভমেন্টবান্ধব উইকেট। কিন্তু এবার ভালো প্রস্তুতি ছিল, তাই আশা করা হচ্ছিল, এবার অন্তত কিউই সুইং-সিম সামলাবেন তামিম-মুশফিকরা।
কিন্তু বাস্তবে যা হওয়ার তাই হলো— ভীতি, শঙ্কা এমন আর যা যা বলা যায় এবং সেসব শেকল ভাঙতে গিয়ে করা ভুলের খেসারত দিতে হলো এবারও।
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ তাদের কখনোই হারাতে পারেনি। এই খরা কাটানোর পণ করে এবার বেশ আগেভাগে সেখানে গেছে বাংলাদেশ দল। করোনায় কোয়ারেন্টিন এ ক্ষেত্রে শাপেবর।
আজ সিরিজের প্রথম ম্যাচ শুরুর আগে নিউজিল্যান্ডে ২৩ দিন কাটিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরা। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে যথেষ্ট সময়। সিরিজের আগে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালও বলেছেন, এর চেয়ে ভালো প্রস্তুতি আর হতে পারে না।
কিন্তু প্রথম ওয়ানডেতে পুরো ৫০ ওভার খেলতে না পারা এবং ১৩১ রানেই বাংলাদেশের অলআউট হওয়ার পর বলাই যায়–নাহ, আবারও অতি অল্প হইল! সে অল্প রান টপকাতে নিউজিল্যান্ড মাত্র ১ উইকেট হারিয়েই ৭ ওভারে করে ফেলেছে ৫৮ রান।
এই অল্প-টা প্রস্তুতির, শুধু ব্যাটে-বলে নয়, মানসিকভাবেও। ইউনিভার্সিটি ওভালের মাঠ ছোট হলেও সেখানকার ২২ গজে সুইং-মুভমেন্ট সবারই জানা। প্রতিপক্ষের কৌশল তো আর জানা যায় না, কিন্তু আঁচ করা যায়।
জাত ওপেনার হয়েও তামিম ইকবাল তা পারেননি। ট্রেন্ট বোল্ট তাঁর ব্যাটের কানা ছুঁয়ে কিংবা আশপাশ দিয়ে বল বেশি বেশি বের করার চেষ্টা করবেন জানা কথা। তবে চমকে দেবেন বল ভেতরে ঢুকিয়ে, ওটা তাঁর উইকেট নেওয়ার ডেলিভারি। তামিমের এলবিডব্লু এই 'মুখস্ত ফাঁদ'-এর শিকার।
আরেক ওপেনার লিটন দাসের আউটও এমন বৈচিত্রময় কিছু না। নিউজিল্যান্ডের উইকেটে বল স্বাভাবিকের চেয়ে একটু ওঠে বেশি।
ধারাভাষ্যকার ইয়ান স্মিথের ভাষায় 'টেনিস বল বাউন্স।' দুনিয়ার তাবৎ ওপেনার নিউজিল্যান্ডে নেমে এই উঠে আসা বল ঢিলে হাতে (সফট হ্যান্ড) খেলে থাকেন।
লিটন ঠিক কী ভেবে উল্টোটা করার ভুল করলেন তা বোঝা দায়। জিমি নিশামের বাউন্স একটু 'পুশ' করে খেলতে গিয়েই ক্যাচ তুললেন।
নতুন বলে ওপেনারদের এই অবস্থা হলে পরের ব্যাটসম্যানরা একটু চাপে পড়বেনই। এর সঙ্গে যদি যোগ হয় রান তোলার চাপ? ৪১.৫ ওভার ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ ২৫১টি বৈধ ডেলিভারি খেলেছে। এর মধ্য 'ডট' বলের সংখ্যা ১৮৫। রান এসেছে ৬৬টি ডেলিভারিতে। এর মধ্যে আবার চার-ছক্কা এসেছে ১১টি ডেলিভারিতে।
অর্থাৎ এক-দুই করে রান এসেছে মাত্র ৫৫ ডেলিভারিতে। ৫০ ওভারের ম্যাচে সিঙ্গেলস নিয়ে রান তোলার চাপ কাটানোর কৌশলটা বাংলাদেশের যে এখনো শিখতে হবে, তার প্রমাণ এই হিসেব।
পুরো ৫০ ওভার খেলতে হলে জুটি গড়ার দরকার ছিল। তিন-চারটি জুটি ভালো শুরু পাওয়ার পরও টিকতে পারেনি। সর্বোচ্চ জুটি ২৭ রানের। ব্যাটসম্যানশিপ বলে যে একটা কথা আছে, তাঁর বহিঃপ্রকাশ ছিল না কারও ইনিংসেই।
মুশফিকুর রহিমের কাছ থেকে আজ আরেকবার এমন কিছু দেখার প্রত্যাশা ছিল। কল্পিত 'ফিফথ স্টাম্প'এর বল জোর করে কাট করতে গিয়ে তা মাটি করেছেন, অত অল্প জায়গার মধ্যে ওই শট খেলা যে ঝুঁকিপূর্ণ তা ভুলে গিয়েছিলেন রান তোলার চাপে পড়ে।
সৌম্য সরকারের ওপর অবশ্য তেমন চাপ ছিল না। তিনে নামায় ইনিংস টানার গুরুদায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। কিন্তু সৌম্য ঠিক কি করতে চেয়েছিলেন তাঁর সঠিক ব্যাখ্যা তিনিই ভালো দিতে পারবেন। প্রথম ওভারে তামিমের মতো পয়েন্ট দিয়ে ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন? তাহলে ক্যাচটা কাভারে উঠল কীভাবে?
এটাই বুঝি তামিমদের সেরা প্রস্তুতি!