একটু বেশিই ধীরে খেলেছেন তামিম
>বড় কিছুর আশা নিয়েই বিশ্বকাপে গিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। গত আড়াই বছরের পরিসংখ্যান বলছে, এ বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা পারফরমার হওয়ার সব রকম সম্ভাবনাই ছিল তাঁর মধ্যে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একরাশ হতাশা নিয়েই বিশ্বকাপ শেষ করতে হচ্ছে তামিমকে।
শুধু রানের দিক থেকে দেখতে গেলে এবারের বিশ্বকাপ তামিম ইকবালের ‘সেরা’ বিশ্বকাপ। এবারের আগেও তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন, কোনবারই ২০০ রান করতে পারেননি। এবার রান করেছেন ২৩৫। রান বিবেচনায় সবচেয়ে সফল বিশ্বকাপ তো তামিম এবারই কাটালেন!
পরিসংখ্যান যে সব সময় সঠিক আভাস দেয় না, তার বড় উদাহরণ হতে পারে এটি। রানের দিক থেকে সেরা বিশ্বকাপ, অথচ তামিম চাইলে এবারের বিশ্বকাপটাকে স্মৃতি থেকে মুছেই ফেলতে চাইবেন। এত আড়ষ্ট, এত ধীর গতির তামিমকে যে এর আগে কখনো দেখা যায়নি।
বেশ কয়েক বছর ধরেই দলের চাহিদা অনুযায়ী নিজের আক্রমণাত্মক খেলার ধরন পাল্টে ফেলেছেন তামিম। দল তাঁর কাছ থেকে চায় বড় ইনিংস। ৪০ ওভার পর্যন্ত তামিম উইকেটে থাকবেন, তাঁকে ঘিরে আবর্তিত হবে দলের বাকি ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং—গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ব্যাটিং এমন ব্যাকরণ মেনেই চলছে। নতুন ভূমিকার সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছিলেন এক সময়ের মারকুটে ব্যাটসম্যান তামিম। ২০১৭ সালে এই ইংল্যান্ডের মাটিতেই হওয়া চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দলের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাটিং করেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন ১২৮ রান, পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও করেছিলেন ৯৫। কিন্তু সেই তামিম এবার বিশ্বকাপে কোথায় হারালেন!
প্রতিটি ম্যাচেই ধীরে-সুস্থে শুরু করেছেন তামিম। সেটিতে কোনো সমস্যা ছিল না, গত কয়েক বছর ধরে এভাবে খেলেই তো রানের পর রান করেছেন। কিন্তু বিশ্বকাপে এসে এ জায়গাতেই ব্যর্থ তামিম। শুরুতে ডটের পর ডট খেলে যে চাপ তৈরি করেছেন, বড় ইনিংস খেলে সেটি আর পুষিয়ে দিয়ে যেতে পারেননি। প্রমাণ মিলবে পরিসংখ্যানেও। এ বিশ্বকাপে অন্তত ২০০ রান করেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তামিমের গড় তৃতীয় সর্বনিম্ন! ৮ ইনিংসে মাত্র ২৯.৩৭ গড়ে ২৩৫ রান করেছেন তামিম। ২০০ রান করার পরেও গড় তামিমের চেয়ে কম এমন ব্যাটসম্যান মাত্র দুজন—আফগানিস্তানের রহমত শাহ (২৮.২২) ও নজিবুল্লাহ জাদরান (২৮.৭৫)।
২০১৭ সাল থেকে বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত পারফরম্যান্স দেখলে এই তামিমকে কিছুটা অচেনাই লাগার কথা। গত আড়াই বছরে তামিমের গড় যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্যই ঈর্ষণীয়, ৬০.৬৪! এই সময়ে ৩০ ইনিংস খেলে ১৬টিতেই ফিফটি করেছেন তামিম, অথচ বিশ্বকাপে ৮ ইনিংসে পঞ্চাশের দেখা পেলেন মাত্র একবার!
বড় স্কোর করতে পারেননি, এটি নিয়ে আক্ষেপ তো রয়েছেই। তবে এবারের বিশ্বকাপে তামিমের ব্যাটিং নিয়ে সবচেয়ে বড় আক্ষেপ বোধ হয় ব্যাটিং আর আউটের ধরন নিয়ে। মাত্র ৭১.৬৪ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট চালিয়েছেন তামিম। অন্তত ২০০ রান করেছেন, মানদণ্ডটা এমন ধরা হলে তামিমের চেয়ে কম স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যান! তামিমের ওপরে থাকা তিনজন হলেন—দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলা (৬৪.৮৫), আফগানিস্তানের রহমত শাহ (৬৫.১২) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের শাই হোপ (৭০.৪৩)। অথচ গত আড়াই বছরে এই তামিমই রান করেছেন ৭৯.২০ স্ট্রাইক রেটে! ধীরে তখনো খেলেছেন, কিন্তু পার্থক্যটা হলো, গত আড়াই বছরে তিনি বেশির ভাগ সময়ই দলের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড হতে পেরেছিলেন। এবার সেটা পারেননি।
এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ গিয়েছিল অন্তত সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন নিয়ে। সাকিব আল হাসানের ব্যাটে চড়ে সে স্বপ্নপূরণের অনেকটা কাছাকাছি যাওয়াও হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনালে না উঠতে পারার হতাশা নিয়েই দেশে ফিরতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। তামিম যদি গত আড়াই বছরের ফর্মটুকু ধরে রাখতে পারতেন, তাহলে হয়তো হতাশা নয়, স্বপ্নপূরণের আনন্দ নিয়েই ফিরতে পারত বাংলাদেশ।