এক যুগেও ভারতের কাছে হারের জ্বলুনি কমেনি শোয়েবের
ক্রিকেট বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই দুই দলের খেলোয়াড়দের কাঁধে বাড়তি চাপের বোঝা। দুই দলেই একই রকম আলোচনা হয়—বিশ্বকাপ জেতার আলোচনা পরে, আগে এই ম্যাচ জেত! এ কারণেই হয়তো বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পরাজিত দলের খেলোয়াড়দের মনে জ্বলুনিটা সহজে যায় না! এই যেমন ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ভারতের কাছে পাকিস্তানের হেরে যাওয়ার জ্বলুনিটা এখনো কমেনি পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার শোয়েব আখতারের।
সেবার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে হওয়া ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জেতে মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। কিন্তু ধোনির ভারতের জন্য ফাইনালের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সেমিফাইনাল। ম্যাচটি যে ছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে। মোহালির পাঞ্জাব ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন আইএস বিন্দ্রা স্টেডিয়ামে তুমুল চাপের সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ২৯ রানে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ভারত।
২০১১ বিশ্বকাপে খুব একটা ছন্দে ছিলেন না শোয়েব আখতার। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে মাত্র ৩টি উইকেট নিয়েছেন পিন্ডি এক্সপ্রেস। প্রথম ম্যাচে কেনিয়ার বিপক্ষে ৫ ওভার বোলিং করে ১০ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১০ ওভারের কোটা পূরণ করে ৪২ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে খুবই হতাশ করেছিলেন শোয়েব। ৯ ওভার বোলিং করে ৭০ রান দিয়ে নিয়েছেন মাত্র একটি উইকেট।
এমন পারফরম্যান্সের পর পাকিস্তানের টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে আর খেলানোর ঝুঁকি নেননি। এ ছাড়া সামান্য চোটও ছিল শোয়েবের। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচই ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তাঁর শেষ মাঠে নামা। কিন্তু শোয়েবকে এখনো পোড়াচ্ছে সেবারের সেমিফাইনালে খেলতে না পারার বিষয়টি, ‘২০১১ বিশ্বকাপের মোহালির স্মৃতি আমাকে এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়। তাদের উচিত ছিল আমাকে খেলানো। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট আমাকে খেলায়নি। এটা ঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না।’—স্পোর্টসক্রীড়াকে বলছিলেন শোয়েব।
শোয়েব এখানেই থামেন না। তিনি বলে চলেন, ‘আমি জানতাম যে আমার হাতে মাত্র দুটি ম্যাচ আছে। আমার মধ্যে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে (ফাইনাল) খেলার তীব্র ইচ্ছা ছিল। আমি চেয়েছিলাম, পাকিস্তানের পতাকা উঁচুতে থাকুক এবং দল ফাইনালে খেলুক।’ মোহালিতে ভারত এমনিতেই চাপে ছিল। দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ, সেমিফাইনালে আবার প্রতিপক্ষ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। ভারতের খেলোয়াড়দের এই চাপে থাকার সুবিধা পাকিস্তান নিতে পারেনি বলে এখনো আফসোস হচ্ছে শোয়েবের।
শোয়েব বলেছেন, ‘পুরো ভারত এবং সে দেশের সংবাদমাধ্যমের চোখ ছিল ভারত দলের ওপর। এর মানে সব চাপই ছিল তাদের ওপর। আর আমরা ছিলাম আন্ডারডগ। তাই আমি মনে করি, আমাদের চাপ নেওয়াটা উচিত হয়নি।’ শোয়েব এরপর সেমিফাইনালে তাঁকে দলে না রাখার বিষয়ে কথা বলেছেন, ‘তারা (টিম ম্যানেজমেন্ট) আমাকে আনফিট ঘোষণা করে। কিন্তু আমি অনুশীলনে টানা ৮ ওভার বোলিং করেছি।’
সেই ম্যাচে তিনি খেললে কী হতে পারত, কল্পনা থেকে এনে সেটাও বললেন শোয়াব, ‘আমি হয়তো শচীন আর শেবাগকে আউট করব। আমি জানতাম, শচীন আর শেবাগকে দ্রুত ফেরাতে পারলে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়বে। আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ডাগআউটে ৫-৬ ঘণ্টা বসে থেকে সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে হারতে দেখতে হয়েছে।’
ড্রেসিংরুমে একটু পাগলামিও করেছিলেন শোয়েব, ‘আমি কান্নাকাটি করার মানুষ নই। রাগ উঠলে আমি হাতের কাছে থাকা বিভিন্ন জিনিস ভেঙে ফেলি। ড্রেসিংরুমে আমি কিছু জিনিস ভেঙেছিলাম। কারণ, আমি খুব হতাশ হয়েছিলাম এবং রাগও হয়েছিল খুব। কারণ, আমি জানতাম, প্রথম ১০ ওভারই পার্থক্য গড়ে দেবে।’