এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হলেন শেহজাদ

বোর্ডের নীতিমালা ভঙ্গের মাশুল দিলেন শেহজাদ। ছবি: এএফপি
বোর্ডের নীতিমালা ভঙ্গের মাশুল দিলেন শেহজাদ। ছবি: এএফপি
মোহাম্মদ শেহজাদের শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ করেছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। বোর্ডের নীতিমালা ভঙ্গের দায়ে এক বছর কোনো ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারবেন না তিনি।


মোহাম্মদ শেহজাদের সঙ্গে আফগান বোর্ডের সম্পর্ক দিন দিন আরও বেশি তিতকুটে হয়ে যাচ্ছে যেন। বোর্ডের নীতিমালা ভঙ্গের দায়ে কিছুদিন আগে শেহজাদকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল আফগানিস্তানের ক্রিকেট বোর্ড। শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি, ফলে শেহজাদ ছিলেন দোলাচলে। গতকাল সে অনিশ্চয়তাটুকুও মিটিয়ে দিল বোর্ড। এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে শেহজাদকে। এ সময়ে কোনো ধরনের ক্রিকেট খেলতে পারবেন না তিনি।

বোর্ড নীতিমালা ভঙ্গের দায়ে শেহজাদকে অভিযুক্ত করা হলেও বোর্ডের নীতিমালার ঠিক কত নম্বর ধারা ভেঙেছেন শেহজাদ, সে ব্যাপারে বিস্তারিত উল্লেখ করেনি আফগান বোর্ড। শেহজাদের কেন্দ্রীয় চুক্তিও স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

শেহজাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বোর্ডকে না জানিয়ে তিনি একাধিকবার দেশ ছেড়েছেন, বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। বোর্ড আরও জানিয়েছে, নিয়ম রক্ষা কমিটির সঙ্গে গত মাসের ২০ ও ২৫ তারিখে তাঁর দেখা করার কথা ছিল। কিন্তু শেহজাদ সে দুই সভাতেও যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। শেষমেশ শেহজাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আফগান বোর্ড। জানা গেছে, বোর্ডকে না জানিয়ে বারবার দেশের বাইরে গেছেন শেহজাদ। পাকিস্তানে গেছেন অনুশীলন করতে। আর এতেই চটেছে বোর্ড। জানিয়েছে, দেশের মধ্যেই ক্রিকেটারদের অনুশীলন করার যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা আছে, তাই দেশের বাইরে যখন-তখন যাওয়ার কোনো দরকার নেই।

আফগানিস্তানের হয়ে খেললেও শেহজাদের জন্ম পাকিস্তানের পেশোয়ারে। যুদ্ধবিধ্বস্ত আর দশজন আফগানির মতো শেহজাদেরও শৈশব কেটেছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকায়। তবে শেহজাদের বাবা-মা মূলত আফগানিস্তানের নঙ্গরহার থেকে উঠে এসেছেন। যে কারণে আফগানিস্তানের হয়ে খেলার সুযোগ ছিল শেহজাদের সামনে, যা তিনি কাজে লাগিয়েছেন। তবে পেশোয়ারকেও ভুলতে পারেন না এই তারকা। এমনকি বিয়েও করেছেন পেশোয়ারি এক মেয়েকে। ফলে, প্রায়ই পেশোয়ারে যাওয়া হয় তাঁর। সম্প্রতি সেখানে তাঁকে অনুশীলন করতে দেখা গেছে। বারবার শেহজাদকে পেশোয়ার থেকে আফগানিস্তানে পাকাপাকিভাবে চলে আসার জন্য আফগান বোর্ড অনুরোধ করলেও শেহজাদ কর্ণপাত করেননি। বারবার দেশ ছাড়লে তাঁর চুক্তি বাতিলও করা হতে পারে, এই ভয় দেখিয়েও কাজ হয়নি। শেষমেশ উপায়ন্তর না দেখে শেহজাদকে নিষিদ্ধই করে বসল তারা।

এর আগে হাঁটুর চোটের কথা বলে বিশ্বকাপ দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল শেহজাদকে। পরে কেঁদেকেটে শেহজাদ অভিযোগ তুলেছিলেন, জোর করে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। হাঁটুতে নাকি কোনো চোটই ছিল না। তবে সেবার কান্না করেও কাজ হয়নি। দলে ফেরা হয়নি তাঁর। উপায় না দেখে আফগান বোর্ডকে হুমকিও দিয়েছিলেন শেহজাদ। বিশ্বকাপে দলে সুযোগ না পেলে ক্রিকেটই ছেড়ে দেবেন বলে জানিয়েছিলেন এ আফগান ওপেনার।

অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে খেলতে পারবেন না শেহজাদ। খেলতে পারবেন না বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজও। এরপর নিজেদের অস্থায়ী হোম ভেন্যু ভারতের দেরাদুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিন টি-টোয়েন্টি, তিন ওয়ানডে ও এক টেস্ট খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে আফগানিস্তান। নিষেধাজ্ঞার কারণে সে সিরিজটাও খেলতে পারবেন না শেহজাদ। শেহজাদের বিকল্প হিসেবে দলের নতুন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ইকরাম আলী খিল বেশ ভালো খেলছেন। এক বছর পর ইকরামের জায়গাটা শেহজাদ আবার নিতে পারবেন কি না, সময়ই বলে দেবে।