এই সাকিবকেই চাই সুপার টুয়েলভে
‘ওরা জানে, সাকিব দলে থাকা মানে আমাদের সুযোগ আছে।’
আইসিসির ওয়েবসাইটে পরশু বাংলাদেশ দলের একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়। কোচ রাসেল ডমিঙ্গো থেকে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য সরকার ও তাসকিন আহমেদ সেখানে কথা বলেন সাকিব আল হাসানকে নিয়ে। সেসব কথার মধ্যেই এ কথাটা উঠে এসেছে। ‘ওঁরা’ এবং ‘সুযোগ’ এ দুটি শব্দের অন্তর্নিহিত মানে তো বুঝতেই পারছেন—যেকোনো প্রতিপক্ষ এবং জয়।
পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে সাকিবের পারফরম্যান্স দেখে মনে হতেই পারে, এ আর এমন কী! প্রতিপক্ষ তো একটা সহযোগী ‘শিক্ষানবিশ’ দেশ। বটে! এমনই আরেক সহযোগী দেশে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর যখন দম আটকে এসেছিল, তখন তো ওমান ও পাপুয়া নিউগিনিও দুঃস্বপ্নে হানা দিয়েছে। সেই দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম রাউন্ড-গলির ‘রাস্তা’ থেকে টি-বিশ্বকাপের ‘মহাসড়কে’ তোলার কারিগর আর কে!
সাকিবকে চাইলে এমন আরও অনেক স্তুতিগাথায় ভাসিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু সাকিব নিজে কখনো এসবে ভেসে যান কি! সেই যে আইপিএলে ৩ অক্টোবর থেকে টানা ম্যাচ খেলার মধ্যে আছেন, এর মধ্যে কত উত্থান-পতন ঘটল, কোথাকার জল গিয়ে কোথায় গড়াল—কলকাতা নাইট রাইডার্সে সাকিবের জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠল, এলিমিনেটর জিতিয়ে সাকিব সে প্রশ্ন মাটিচাপাও দিলেন, কলকাতা ফাইনাল হারল, বাংলাদেশও হারল টানা দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ, এরপর বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচেও হারল বাংলাদেশ। এই টানা ম্যাচ আর অমিত চাপের মধ্যে সাকিবকে কখনো টলতে দেখেছেন?
ভালো খেলোয়াড়দের টাইমিংটা হয় নিখুঁত। না, ব্যাটিংয়ের টাইমিং না। দলের জন্য নিজের সেরাটা নিংড়ে দেওয়ার সময়জ্ঞান। স্কটল্যান্ডের কাছে হারে বাংলাদেশ যখন প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে পড়ার সমীকরণের চাপে দুঃস্বপ্ন দেখছে, সাকিব তখন সব্যসাচী হাতে কষলেন সরল অঙ্ক—ওমানের বিপক্ষে ২৯ বলে ৪২ ও ২৮ রানে ৩ উইকেট। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ৩৭ বলে ৪৬ ও ৯ রানে ৪ উইকেট। তাতে বাংলাদেশের যেমন সুপার টুয়েলভে ওঠার উত্তর মিলেছে, তেমনি সাকিবও ম্যাচসেরা—আইসিসি টুর্নামেন্টে এ যেন রাজযোটক।
বুঝিয়ে বলছি, ২০১৬ সাল থেকে আইসিসির টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সর্বশেষ ৬ জয়ের সবগুলোতেই ম্যাচেসেরা খেলোয়াড় সাকিব। আইসিসির ভিডিও সাক্ষাৎকারে সৌম্য-তাসকিনদের কথাটা তাই মোটেও বাড়াবাড়ি না। বরং টি-টোয়েন্টি সংস্করণ বিচারে গত দুই ম্যাচ ধরলে একটু কমই বলা হয়েছে। কীভাবে?
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২০ রান করতে ২৮ বল খেলায় সাকিবের ‘বয়স’ ও ‘মন্থর’ ব্যাটিং মিলিয়ে সমালোচনা হয়। পরের দুই ম্যাচে সাকিবের স্ট্রাইকরেট যথাক্রমে ১৪৪.৮২ ও ১২৪.৩২। ম্যাচ পরিস্থিতিও বুঝতে হবে। ওমানের বিপক্ষে উইকেটে ছিলেন ৫ম ওভার থেকে ১৪তম ওভার পর্যন্ত। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে আরেকটু আগে, প্রথম ওভার থেকে ১৪তম ওভার—অর্থাৎ এ দুটি ম্যাচেই বাজে শুরুর চাপ সামলে দলের ইনিংসে ভিত গড়েছেন সাকিব। আর বোলিংয়ে?
ওমানের বিপক্ষে ১৭তম ওভারে টানা দুই উইকেট নিয়ে যখন নিজের ৪ ওভারের কোটা শেষ করলেন, বাংলাদেশ ততক্ষণে জয়ের সুবাস পাচ্ছে। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষেও তা–ই—১১তম ওভারে যখন নিজের কোটা শেষ করলেন, ওমান ১৮১ তাড়া করতে নেমে ৭ উইকেটে ৩০। অর্থাৎ চাপের মুহূর্তে নিজেকে নিংড়ে দিয়েছেন সাকিব। তাতে দু-একটি রেকর্ডও টুপ করে তাঁর মুঠোবন্দী হলো।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শহীদ আফ্রিদির সঙ্গে সাকিব এখন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি (৩৯)। কাল পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে তাঁর ৪৬ রান ও ৯ রানে ৪ উইকেট নেওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অলরাউন্ডার হিসেবে অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স।
এই সাকিবকেই চাই সুপার টুয়েলভে।