২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

এই সময়েও খেলতে চান মরগান

মানুষের মনোবল বাড়াতে ক্রিকেট খেলতে চান ইউইন মরগান। ফাইল ছবি
মানুষের মনোবল বাড়াতে ক্রিকেট খেলতে চান ইউইন মরগান। ফাইল ছবি
>প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যেও টুকটাক ক্রিকেট ম্যাচ হয়েছিল। করোনাভাইরাসের সময়ও কী ক্রিকেট এগিয়ে আসবে?

ক্রিকেট চলছিল ঠিকঠাক। বাংলাদেশ খেলছিল পাকিস্তানে। এরপর বাংলাদেশে এল জিম্বাবুয়ে। টেস্ট, ওয়ানডের পর টি-টোয়েন্টি—দাপট দেখানো ব্যাটিং, বোলিংয়ের সঙ্গে কী আগ্রাসনই দেখাল বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপের পর থেকেই একের পর এক ঝড়ে এলোমেলো হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের ঘরটা আবার সাজানো মনে হচ্ছিল। হোক না জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের তো পচা শামুকে পা কাটার ভয়ও ছিল। টেস্টে মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, নাঈম হাসানরা তা হতে দেননি। ওয়ানডেতে তামিম ইকবাল, লিটন দাসরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে কী দারুণ বিদায়ী উপহারটাই না দিল। টি-টোয়েন্টিতেও সেই তামিম-লিটন। সঙ্গে সৌম্য সরকার। বাংলাদেশ ক্রিকেট আবার হাইওয়েতে ফিরেছে, এবার গতি বাড়ানোর পালা। সামনে পাকিস্তান সফর, এরপর অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা। ভক্তরা নিশ্চয়ই ক্যালেন্ডারে গোল দাগ দিচ্ছিলেন।

শুধু কী বাংলাদেশ ক্রিকেটের সামনে রোমাঞ্চে ভরা সময় অপেক্ষায় ছিল? দক্ষিণ আফ্রিকা কুইন্টন ডি কক আর মার্ক বাউচার কী দারুণভাবেই দলটা গুছিয়ে নিচ্ছিল। ২০১৯ সালটা ছিল প্রোটিয়াদের জন্য দুঃস্বপ্ন। রান পোহালেই যে আলো আসে, সেটা দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দেখিয়ে দিচ্ছিল। পুরো শক্তি নিয়ে অস্ট্রেলিয়া হারাতে পারেনি একদম নতুন দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

নিউজিল্যান্ড নিজ আঙিনায় শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে দিয়েছিল। ভারত আবার অপেক্ষায় ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। ঘরের মাঠে জয়ের ধারায় ফেরা যে খুব দরকার ছিল বিরাট কোহলিদের। এরপরেই আইপিএল। সারা বিশ্বের চোখ ছিল ভারতের দিকে। অস্ট্রেলিয়ায় নারী বিশ্বকাপের সাফল্যের পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ খেলছিল। শ্রীলঙ্কা খেলছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এই সিরিজ শেষেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার কথা ছিল লঙ্কানদের। পাকিস্তানের ঘরের মাঠে প্রথমবারের মতো চলছিল পিএসএল। আয়ারল্যান্ড-আফগানিস্তান সিরিজ শেষে আইরিশরা প্রস্তুত হচ্ছিল জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশ সিরিজের জন্য।

তখনই রাস্তায় বাঁধ দিল করোনাভাইরাস। শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেটের গাড়ি থমকে গেল তা নয়। পুরো বিশ্বের ক্রিকেট থমকে গেল। সারা বিশ্বের ক্রিকেটাররা অনিশ্চিত অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই অপেক্ষাটা কতক্ষণের। ক্রিকেট থমকে যাওয়ার ঘটনা তো এবারই প্রথম নয়। ‘জীবন আগে, খেলা পরে’—এমন মুহূর্ত তো ক্রিকেটে আগেও এসেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৪ থেকে ১৯২০ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৬ সময় ক্রিকেটের পায়ে ছিল বেড়ি।

তখনো কিছু ক্রিকেট ম্যাচ ঠিকই চলছিল। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের শুরুর দুই সপ্তাহ ইংল্যান্ডে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা হয়েছিল। এরপর ডব্লিউজি গ্রেস চিঠি লিখে খেলা বন্ধ করান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট বন্ধ থাকলেও যুদ্ধের সময় আর্মিরা নিজেদের মধ্যে কিছু প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময়ও ম্যাচ খেলেছে ইংল্যান্ডের পেশাদার ক্রিকেটাররা। ১৯৪৪ সালে রয়্যাল এয়ার ফোর্স ও আর্মির ম্যাচ হচ্ছিল লর্ডসে। জার্মানি তখন লন্ডনে মুহুর্মুহু বোমা ফেলছিল। এর মধ্যেও লর্ডসে ৩ হাজার মানুষ এসেছিল ক্রিকেট দেখতে। আর্মির হয়ে ব্যাট করছিলেন ইংলিশ ও মিডেলসেক্স ব্যাটসম্যান জ্যাক রবার্টসন। বোলার বব ওয়েট বল করার আগেই বোমার শব্দ শুনতে পায় ক্রিকেটাররা। মুহূর্তেই মাথা বাঁচাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সবাই। জার্মানির বোমা গিয়ে পড়ে লর্ডস থেকে একটু একটু দূরে। এরপর সবাই দাঁড়িয়ে শরীরে লেগে যাওয়া ধুলাবালু ঝেড়ে আবার খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন! ছোট্ট বিরতির পর ওয়েটের কথা প্রথম বলটাই রবার্টসন মারেন ছক্কা। একদিকে যুদ্ধের দামামা, আরেকদিকে ক্রিকেট।

ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক এউইন মরগানও মনে হয় এই যুগের রবার্টসন হতে চাইছেন। রবার্টসনের মতো তিনিও মিডলসেক্স কাউন্টির ব্যাটসম্যান। করোনাভাইরাসের দুর্যোগের সময় খেলা চালিয়ে যেতে চান তিনিও। খেলাই পারে আবার বিশ্বকে প্রাণচঞ্চল করে তুলতে। প্রয়োজনে বন্ধ স্টেডিয়ামে খেলা হোক, তবুও খেলতে চান মরগান। ইংল্যান্ডের টেস্ট ও ওয়ানডে দলকে যদি একইদিন খেলতে হয়, সেটাও নাকি সম্ভব, ‘এমন অবস্থায় বেশি ক্রিকেট ম্যাচ খেলা চেষ্টা করা উচিত। আমি মনে করি খেলোয়াড়েরা খেলতে চাইবে। আমি অবশ্যই খেলতে চাইব।’

করোনাভাইরাসের কারণে ঘরে বন্দী মানুষদের জন্য হলেও মাঠে খেলা ফিরিয়ে আনা দরকার বলে মনে করেন মরগান, ‘খেলাধুলা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে। বিচ্ছিন্ন সময়টা মানুষের মন অলস হয়ে যায়। খেলাধুলা যেই মঞ্চ তৈরি করবে, যেই প্রত্যাশার জায়গা তৈরি করবে, সেটা মানুষকে আবার ঘরের বাইরে বারিয়ে আসার অনুভূতি এনে দিতে পারে। যদি এমন কিছু করা যায়, তাহলে আমি মনে করি বড় পদক্ষেপ হবে।’

মরগান জানিয়ে দিয়েছেন দর্শকশূন্য মাঠে খেলতে তাঁর কোনোই আপত্তি নেই। তবে টেলিভিশনে সেই সব খেলা সম্প্রচার করতে বলেছেন যাতে মানুষ লকডাউনের সময়ে ঘরে বসেই খেলা দেখতে পারেন।

তবে বাস্তবতাও ভুলে যাননি মরগান। বলেছেন এই সময়ে খেলার কথা চিন্তা করাটা অবাস্তব মনে হতেই পারে, ‘এই মুহূর্তে সবকিছুই অনিশ্চিত। এই সময়ে আমাদের খেলা নিয়ে, কখন প্রথম ম্যাচ খেলতে পারব কিংবা কত ম্যাচ খেলতে পারব এসব চিন্তা করাটা বাস্তবসম্মত নয়। মহামারির প্রকোপটা একটু কমুক তারপর না হয় দেখা যাবে’।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর আরেকবার ক্রিকেট চার রাস্তার মোড় খুঁজে নিয়েছে। এখান থেকে ক্রিকেট কোন দিকে যাবে, সেটিই প্রশ্ন।