এই বাংলাদেশ আর সেই বাংলাদেশ নয়
ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ এখন পুরোনো হয়ে গেছে। পাকিস্তান আর এর অতীত অংশ বাংলাদেশের মধ্যে লড়াইটা বরং এখন পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দ্বৈরথের চেয়ে অনেক বেশি মসলাদার। এই ম্যাচ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়তো হচ্ছে না, কারণ এই দুই দেশের (ভারত ও পাকিস্তান) সংবাদমাধ্যমই অনেকটা সময় পর্যন্ত বাংলাদেশকে হিসাবের বাইরে রেখেছে। কিন্তু এই বিশ্বকাপ ও এর আগের কয়েক বছরে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স সব ধারণা বদলে দিয়েছে।
এই বাংলাদেশ আর সেই পুরোনো বাংলাদেশ দল নয়, যারা ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষের অটোগ্রাফ নিত। বরং প্রত্যয়ী এই বাংলাদেশ ম্যাচের একেবারে শেষ বল পর্যন্ত লড়ে যায়। এই বাংলাদেশ আর সেই বাংলাদেশ নয়, যারা একটা ক্যাচ হাতছাড়া হয়ে গেলে হাল ছেড়ে দেয়, বা আম্পায়ারের একটা সিদ্ধান্ত নিজেদের বিপক্ষে গেছে মনে হলেই সবাই-সবকিছু তাদের বিপক্ষে ভেবে বসে থাকে। বরং এই বাংলাদেশ ড্রেসিংরুমে ফিরে গিয়ে প্রতিপক্ষকে বড় ধাক্কা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে বের হয়। এটা এমন একটা দল, যারা বর্তমান নিয়েই ভাবে, পরিস্থিতি বদলে দেওয়ার জন্য পরের বলের সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য সবচেয়ে ভালো যে দিকটা হয়েছে, সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। হ্যাঁ, কিছু কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু তেমন ঘটনা তো আইপিলেও (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) ঘটেছে। বিপিএল যে উপকারটা করেছে, সেটা হলো, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক তারকাদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করার সুযোগ করে দিয়েছে। ম্যাচে নামার আগে ওদের (আন্তর্জাতিক তারকাদের) মনোভাব কী রকম থাকে, ম্যাচের জন্য ওরা প্রস্তুতি কীভাবে নেয়, সেসব কাছ থেকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। চাপের মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের প্রতিক্রিয়া কী হয়, সেটা দেখেছে, সেখান থেকে শিখেছে। সেসবের ফল হচ্ছে এই সব দিক থেকে আগের চেয়ে অনেক উন্নতি করা বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা, যারা জানে ক্রিকেটে প্রতিভাই সবকিছু নয়, টেম্পারামেন্টও গুরুত্বপূর্ণ।
ওদের দুই তারকা সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহিম সেটা সবচেয়ে ভালোভাবে দেখিয়েছে। পকেট-ডায়নামো মুশফিকুর শুধু অসাধারণ উইকেটকিপারই নয়, একজন আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানও, যে কিনা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। সাকিব তো এই টুর্নামেন্টের ‘মিস্টার কনজিসটেন্ট’। সেটা ব্যাট হাতে যেমন, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উইকেট নিয়ে।
একটা দিক, যেখানে বাংলাদেশের এখনো অনেক উন্নতি করার আছে, সেটি হলো ফিল্ডিং। অন্য যেকোনো দলের চেয়ে ওদের এমন ফিল্ডার বেশি যাদের মাঠে কোথায় লুকাবে, সেটি নিয়ে ভাবতে হয় অধিনায়ককে। সেটাই ওদের ডোবাচ্ছে।
পাকিস্তান জানে ওদের সেমিফাইনালে যাওয়ার যে সমীকরণ, সেটা অসম্ভব। তবে ওরা নিশ্চিত চাইবে দারুণ কিছু করে টুর্নামেন্টটা শেষ করতে। এই ম্যাচে হার ওরা সহ্য করতে পারবে না, কারণ সেটা হবে ওদের জন্য চূড়ান্ত লজ্জার। বাংলাদেশের ওপর ওরা সব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে, বড় ব্যবধানে জিততে চাইবে। তবে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে জয় পেলেও সেমিফাইনালে যেতে (নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে) ওদের নেট রানরেটের যে ব্যবধান, সেটি ঘুচবে না। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ওভাবে বিধ্বস্ত হওয়া, আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে রান তাড়া করে শেষ পর্যন্ত কোনোমতে জয়টাই ওদের এমন অবস্থায় এনে ফেলেছে।
শেষ পর্যন্ত তাই ম্যাচটা একটা ‘ডেড রাবার’ ম্যাচই। বিশ্বকাপ এমন ম্যাচ চায়নি।