টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে কী দারুণ একটা সময় চলছে পাকিস্তান ক্রিকেটের। বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে শেষ মুহূর্তের অবিশ্বাস্য নাটকে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বাদ পড়ে গেলেও তার আগপর্যন্ত দারুণ ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলেছে বাবর আজমের দল। বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশে এসে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশকে ধবলধোলাই করে গেছে পাকিস্তান, এরপর নিজেদের মাটিতে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজও।
কিন্তু মাঠের দারুণ এই সময়ের মধ্যেই হঠাৎ মাঠের বাইরের এক বিতর্কিত খবরে কিছুটা চাপে পড়ে গেল পাকিস্তানের ক্রিকেট। ১৪ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণে সহযোগিতা এবং ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানের লেগ স্পিনারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে এখন কথা বলতে হয়েছে পিসিবির চেয়ারম্যান রমিজ রাজাকেও।
ইয়াসিরের ঘটনা নিয়ে রমিজের বিশ্লেষণ, এ ধরনের খবর শিরোনামে আসা পাকিস্তানের ক্রিকেটের জন্য ভালো কিছু নয়। তারকা হওয়ার কারণে ক্রিকেটারদের যে সামাজিক দায়িত্ব আছে, সেটি তাঁদের ভালোভাবে শেখানো হয় বলেও জানিয়েছেন রমিজ।
বছর দুয়েক আগেও পাকিস্তানের লেগ স্পিনের মূল ভরসা ছিলেন ইয়াসির, তবে পাকিস্তান দলে এখন আর নিয়মিত নন। এত দিন শিরোনামের বাইরে থাকা ইয়াসির হঠাৎ আলোচনায় এলেন জঘন্য এক অভিযোগের কারণে। গতকাল শোনা যায়, ১৯ ডিসেম্বর ইসলামাবাদের শালিমার থানায় ইয়াসিরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (এফআইআর) দেওয়া হয়েছে।
যেখানে বলা আছে, গত ১৪ আগস্ট ইয়াসিরের বন্ধু ফারহান ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করেছেন এবং ঘটনা ভিডিও করে রেখেছেন।
অভিযোগকারী জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে ইয়াসিরের কাছে ওই কিশোরীর পক্ষ থেকে সাহায্য চাওয়া হয়।
কিন্তু ইয়াসির বন্ধুকেই যত সহযোগিতা করেছেন, ওই কিশোরীর অভিযোগ হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি কিশোরীকে পাল্টা হুমকি দিয়েছেন, এ ঘটনা জানাজানি হলে ভিডিও ফাঁস করে দেবেন। ওই কিশোরীকে জীবননাশের হুমকিও ইয়াসির দিয়েছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে। পাশাপাশি নিজের প্রভাব খাটিয়ে অভিযোগকারী এবং ওই কিশোরীকে আইনি লড়াইয়ে টেনে আনবেন বলেও ইয়াসির হুমকি দিয়েছেন বলে এফআইআরে লেখা আছে।
পুলিশকে উদ্ধৃত করে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ইয়াসির ও তাঁর বন্ধু ফারহান এ মুহূর্তে পলাতক।
এ নিয়ে করাচিতে এক সংবাদ সম্মেলনে রমিজ রাজা বলছেন, ‘এটা নিয়ে তো আলোচনারই কিছু নেই। ইয়াসির কেন্দ্রীয় চুক্তিভুক্ত একজন ক্রিকেটার। এই ক্রিকেটারদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কী রকম, সে সব তাদের শেখানো হয়। তাদের জানা উচিত, কখন কার সঙ্গে মিশতে হবে।’
ইয়াসিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠিত হলেও এখনো তো কোনো রায় আসেনি, সে কারণে এখনই ইয়াসিরকে দোষী হিসেবে দেখাচ্ছেন না রমিজ। তবে পিসিবি চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘এ মামলাতে সত্যিটা কী, সেটি আমি এখনো জানি না। তবে সত্যি বলতে, এ ধরনের খবর যে শিরোনামে এসেছে, সেটিই পাকিস্তানের ক্রিকেটের জন্য ভালো কিছু নয়। বিশেষ করে এমন এক সময়ে, যখন পাকিস্তানের ক্রিকেটে ভালো একটা সময় চলছিল।’
ইয়াসিরসহ পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রত্যেক ক্রিকেটারকেই যে তাঁদের দায়িত্ব-কর্তব্য নিয়ে শেখানো হয়, সেটি আরেকবার মনে করিয়ে দিয়েছেন রমিজ। শুধু পাকিস্তানই নয়, ক্রিকেটপাগল উপমহাদেশে একজন ক্রিকেটার জাতীয় দলে খেলা মানেই তাঁকে দেশের কোণে কোণে মানুষ চিনবে।
এই তারকাখ্যাতির কারণেই ক্রিকেটাররা একেকজন সমাজে ‘শুভেচ্ছাদূত’–এর ভূমিকা পেয়ে যান। তাঁদের প্রতিটি কাজই তখন পড়ে আতশি কাচের নিচে, তাঁদের অনুসরণ-অনুকরণ করেন অনেকে। ক্রিকেটারদের ভুল বা অপরাধের প্রভাবও তাই অনেক বেশি হয়। সে কারণে একজন ক্রিকেটারের সমাজের প্রতি দায়িত্ব কী হতে পারে, জনসমক্ষে তাঁর আচরণ কেমন হওয়া উচিত, সেসব ভালা করেই শিখিয়ে দেওয়া হয়।
রমিজও সেটিই জানিয়ে বললেন, ‘কখন কার সঙ্গে মিশতে হবে, সেটা ওদের জানা থাকতেই হবে। এ নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। এই ক্রিকেটাররা অনেক আয় করবে, সেটা আমিও চাই কিন্তু এর পাশাপাশি পাকিস্তানের ক্রিকেটসহ খেলাধুলার জগতের প্রতিই তাদের একটা দায়িত্ববোধ থাকতে হবে।’