উদারতায় সেরা পাঁচে আছেন বাংলাদেশের এক
বোলারদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের বহু নির্ণায়কই আছে। কেউ উইকেটসংখ্যা দিয়ে মাপতে চান, কেউবা বোলিং স্ট্রাইকরেট দিয়ে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে এ ক্ষেত্রে যুক্ত হয় আরেকটি ব্যাপার—রানরেট।
অর্থাৎ একজন বোলার কতটা কিপ্টেমি করছেন, সেটাও ভাবনার বিষয় বটে। এমন ক্ষেত্রেও ঝামেলা থাকে, কেউ হয়তো মাত্র দু–এক ম্যাচ খেলেই বিদায় নেন বলে পরিসংখ্যানে তাঁরা এগিয়ে থাকেন।
ফলে নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড ঠিক করে দিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে নামতে হয়।ওয়ানডের কিপ্টে বোলারের নানা মাইলফলক বের করা হলে সেখানে কোথাও বাংলাদেশের কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন।
ওয়ানডের আধুনিক যুগে যোগ দেওয়ার ফলে এমনিতেও সুযোগটা কম ছিল, আর আইসিসির পূর্ণ সদস্য হওয়ার সময়টাতেও বাংলাদেশ এমন কোনো বোলারকে দীর্ঘমেয়াদে পায়নি, যিনি প্রতিপক্ষের সমীহ আদায় করে নেবেন, যেমনটা আফগানিস্তানের রশিদ খান আদায় করেন।
উদারতার গল্প ঠিক তার উল্টো পিঠে। অর্থাৎ ওয়ানডে ক্রিকেটে কোন বোলার কত উদার, প্রতিপক্ষকে যিনি রান উদারহস্তে বিলান। যাঁর উইকেট পেতে রান খরচ হয় দেদার অথবা যিনি ইকোনমি রেট সামলে রাখার ক্ষেত্রে অধিনায়কের জন্য চোখের বিষ হয়ে ওঠেন।
তেমনই এক তালিকার শীর্ষে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের একজন।ওয়ানডেতে বর্তমানে এক ইনিংসে ৩০০ বল করা যায়। যদি একেই মানদণ্ড ধরা হয়, তবে কিপ্টেমিতে সবচেয়ে এগিয়ে ইংলিশ ফাস্ট বোলার জন স্নো (‘গেম অব থ্রোনস’–এর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই)।
প্রথম ওয়ানডে খেলা এই বোলার তাঁর ৯ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ১৪ উইকেট নিয়েছিলেন ১৬.৫৭ গড় ও ২.৫৮ ইকোনমিতে। তবে মানদণ্ড হিসেবে ৩০০ বল একেবারেই কম হয়ে যায়। বরং অন্যভাবে যদি কিপ্টেমির পরীক্ষা নেওয়া যায়?
একজন বোলার ব্যাটিং দলের জন্য কতটা পীড়াদায়ক, সেটার মূল প্রমাণ ‘ডট’ বল দেওয়ার ক্ষমতায়। আর টানা ডট বল দিয়ে মেডেন করতে পারাটা সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রীতিমতো আরাধ্য।
সে ক্ষমতায় সবচেয়ে এগিয়ে শন পোলক। ওয়ানডেতে ৩১৩ ওভার মেডেন দিয়েছেন প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার। অবশ্য গ্লেন ম্যাকগ্রাও পিছিয়ে ছিলেন না। তাঁর ২৭৯টি মেডেন পোলকের চেয়ে দ্রুতগতিতে (ওভারপ্রতি মেডেন) এসেছে।
স্যার রিচার্ড হ্যাডলির সঙ্গে অবশ্য এ ক্ষেত্রে পাল্লা দেওয়া কঠিন। পেস বোলিংকে রীতিমতো বৈজ্ঞানিক সূত্র বানিয়ে ফেলেছিলেন। সুইং, সিম মুভমেন্ট, কতটুকু ওপর থেকে বল করলে কী হবে—সবকিছু সূত্রে ফেলে বল করতে চাইতেন!
নিউজিল্যান্ডের এই কিংবদন্তি ওয়ানডেতে যত ওভার করেছেন, তার প্রতি ছয়টিতে একটি মেডেন (মোট ১৮৫টি) ছিল! এমন অবিশ্বাস্য নিয়ন্ত্রণ ক্রিকেটে আর কখনো দেখার সম্ভাবনা নেই।
কিপ্টেমির আলাপ অনেক হয়েছে। এবার মূল কথায় যাওয়া যাক। ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোতে আস্ক স্টিভেনে একজন একটা মজার প্রশ্ন তুলেছেন। আর সেটা হলো ওয়ানডেতে কোনো মেডেন ওভার না দিয়ে কে সবচেয়ে বেশি বল করেছেন।
সহজ ভাষায়, উদারতায় সবচেয়ে এগিয়ে কোনজন। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত নাম উঠে আসে কোনো অনিয়মিত বোলারের। দলের প্রয়োজনে দু-এক ওভার নিয়মিত বল করে যান। যাঁর মূল কাজ দ্রুত কিছু ওভার করে ওভার রেট ধরে রাখা আর সঙ্গে যদি উইকেট মেলে তো আরও ভালো।
কিন্তু আস্ক স্টিভেন জানিয়ে দিল, এমন উদারতার শীর্ষে আছেন একজন নিখাদ বোলার। শ্রীলঙ্কার চায়নাম্যান লক্ষ্মণ সান্দাকান! এই বাঁহাতি লেগি ২৪ ম্যাচ খেলে এখন পর্যন্ত ২০ উইকেট পেয়েছেন। গড়টা কোনো অধিনায়কেরই পছন্দ হবে না, ৫৮.০৫। ওভারপ্রতি প্রায় সাড়ে ছয় করে রান দেন। এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে ১০৭৬ বল বা ১৭৯.২ ওভার করলেও কোনো মেডেন নিতে পারেননি।
এরপরই আছেন একজন সত্যিকারের পার্টটাইমার। দলের প্রয়োজনে প্রায়ই বল হাতে নিতেন গ্রায়েম স্মিথ। সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়কের নিরীহ অফ স্পিনে ১৮ ব্যাটসম্যান ঘায়েল হয়েছেন বটে। কিন্তু তাঁর ১০২৬ বল বা ১৭১ ওভারে কোনো মেডেন ছিল না।
অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিবনারায়ণ চন্দরপলও অনিয়মিত বোলার ছিলেন। হেডের এখনো সুযোগ আছে, তবে এখন পর্যন্ত ৭৬৫ বল করেও ওয়ানডেতে এক ওভারে টানা ছয়টি ডট দিতে পারেননি। অনিয়মিত লেগ স্পিনে ৭৪০ বল করে যেটা করতে পারেননি চন্দরপলও।
উদারদের শীর্ষ পাঁচের শেষের জায়গাটা বাংলাদেশের। বাংলাদেশকে অনন্য এক উপহার দিয়েছিলেন আফতাব আহমেদ। তাঁর সুবাদেই ওয়ানডেতে এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট প্রাপ্তির গেরো কেটেছিল দলের।
সে সুবাদে বেশ কিছুদিন নিয়মিত বলও করেছেন এই ব্যাটসম্যান। ওয়ানডে ক্যারিয়ার ১২ উইকেটে শেষ করেছিলেন, ইকোনমিও (৫.৩২) খারাপ নয়। ১২৩.১ ওভার বা ৭৩৯ বল করেছেন কিন্তু ওয়ানডেতে কখনো মেডেন ওভার পাননি আফতাব।
ওয়ানডেতে অন্তত ৩০০ বল করেছেন কিন্তু কোনো ওভার মেডেন দিতে পারেননি, এমন বোলারের সংখ্যা ৩৯। এর মধ্যে আফতাব ছাড়া আরও তিনজন বাংলাদেশি রয়েছেন।
প্রায় ৬৯ ওভার (৪১২ বল) করেও মেডেনের দেখা পাননি সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম। ৫৪ ওভার বল করা সৌম্যেরও একই দশা। এ তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন সাব্বির রহমান। ওয়ানডেতে ৫১ বল করা হয়ে গেছে তাঁর। তিনটি উইকেট পেলেও এখনো মেডেন দেওয়া হয়নি তাঁর।
শুরুতেই উদারতার যেসব সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল, তার প্রতিটি মানদণ্ডেই কিন্তু এগিয়ে আছেন সাব্বির। ওয়ানডেতে কমপক্ষে ৩০০ বল করা বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে খরুচে (বেশি ইকোনমি রেট) বোলারদের শীর্ষ পঞ্চাশের একমাত্র বাংলাদেশি সাব্বির।
এখন ছয়ে থাকলেও নভেম্বরেও শীর্ষ পাঁচে ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের হাতে বেধড়ক পিটুনি খেয়ে নবদ্বীপ সাইনির এক লাফে দুইয়ে (৬.৯৮) চলে আসাই আপাতত গ্লানি থেকে মুক্তি দিয়েছে সাব্বিরকে। ওভারপ্রতি ৬.৭৬ রান দেওয়া সাব্বিরের পরে আছেন আমিনুল ইসলাম (৫.৯৮)।
সাব্বির অবশ্য আরেকটি মাপকাঠিতে শীর্ষ পাঁচে জায়গা করে নিয়েছেন। ওয়ানডেতে কমপক্ষে ৩০০ বল করেও উইকেট না পাওয়ার ঘটনা একটি। ২৯১ রান খরচায় অতুলা সামারাসেকারার বোলিং গড় তাই বের করা যাচ্ছে না।
এরপর সবচেয়ে বেশি খরচায় উইকেট প্রাপ্তির শীর্ষ পাঁচে আছেন সাব্বির। তাঁর প্রতি উইকেট পেতে খরচ ১১৫ রান। চাইলে অবশ্য সান্ত্বনা খুঁজে নিতে পারেন সাব্বির।
স্পর্শের বাইরে থাকা সামারাসেকারার পরই যে এ তালিকার শীর্ষে আছেন বিরাট কোহলি। কাজ চালানো স্পিন দিয়ে ৪ উইকেট পেলেও ভারত অধিনায়কের বোলিং গড় ১৬৬.২৫!