আমির-ওয়াহাবের অবসরের সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করছে পাকিস্তান বোর্ড
ইংল্যান্ড সফরটা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের জন্য। গত বছর করোনার প্রথম ঢেউয়ের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট যখন আবার শুরু হয়েছিল, তখন ইংল্যান্ড সফর করেছিল পাকিস্তান। ২০২১ সালের জুলাইয়ে আবার ইংল্যান্ড সফরে যাচ্ছে দলটি। সেখানে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেললেও থাকছে না টেস্ট। সাদা পোশাকে পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের দেখার জন্য আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মাথায় রেখে সব দলই টি-টোয়েন্টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই সব সফরেই থাকছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও যেমন পাকিস্তান টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে। আর এবার বাদ পড়ছে ওয়ানডে। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টির সঙ্গে টেস্ট সিরিজও খেলবে পাকিস্তান। তবে প্রাথমিক সূচিতে একটা বদল হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তিন টেস্ট খেলার কথা থাকলেও কমিয়ে আনা হয়েছে টেস্ট।
টেস্ট কমিয়ে এনে টি-টোয়েন্টিকে গুরুত্ব দেওয়ায় খেপেছেন ইনজামাম-উল-হক। সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক বলছেন, এভাবে টি-টোয়েন্টিকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে মোহাম্মদ আমির ও ওয়াহাব রিয়াজদের অবসরের সিদ্ধান্তকেই সঠিক প্রমাণ করছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।
২০১৯ বিশ্বকাপের কিছুদিন পরই টেস্ট ক্রিকেট থেকে নাম কাটিয়ে নিয়েছেন মোহাম্মদ আমির। ২৮ বছর বয়সেই এমন সিদ্ধান্তের পেছনে ক্লান্তিকে কারণ দেখিয়েছিলেন। বলেছিলেন, টানা খেলার ধকল সামলাতে যেকোনো এক সংস্করণ থেকে সরে যেতে হচ্ছে তাঁকে। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর পাকিস্তানি পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এই পেসারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটাররা। সমালোচনায় বিরক্ত হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকেই সরে গেছেন আমির। আমিরের মতো পেসার ওয়াহাব রিয়াজও টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ২০১৯ সালেই। তখন কোচ মিসবাহ-উল-হকও কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
আগামী ২১ জুলাই থেকে ২৪ অক্টোবর ওয়েস্ট ইন্ডিজে থাকবে পাকিস্তান। এক মাস লম্বা এই সফরে তিন টেস্ট ও তিন টি-টোয়েন্টি খেলার কথা ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু বিশ্বকাপের কথা চিন্তা করে এক টেস্ট কমিয়ে দুটি টি-টোয়েন্টি যোগ করেছে পিসিবি। এই খবরে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করতে ইউটিউবকে বেছে নিয়েছে ইনজামাম, ‘বাড়তি প্রস্তুতির জন্য কিংবা অর্থের জন্য ওরা যদি বেশি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে চায়, আমার আপত্তি নেই। কিন্তু এর জন্য টেস্ট ক্রিকেট বিসর্জন দেওয়া ঠিক না। যখন আমির টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছিল, তখন ওর অনেক সমালোচনা করা হয়েছে। কারণ, সে টেস্টকে নয়, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি আর লিগ ক্রিকেটকে প্রাধান্য দিচ্ছিল। ওয়াহাব রিয়াজের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। কিন্তু এখন তো ক্রিকেট বোর্ডই টেস্টের বদলে টি-টোয়েন্টি আয়োজন করে সে বার্তা দিচ্ছে। আপনারা নিজেরাই যদি এভাবে ভাবেন, তাহলে ভবিষ্যতে কীভাবে খেলোয়াড়দের টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে যাওয়া আটকাবেন?’
এভাবে টি-টোয়েন্টিকে প্রাধান্য দেওয়ার ফলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কথা সবাইকে ভাবতে বলেছেন ইনজামাম, ‘আমি আইসিসি ও অন্যান্য বোর্ডকে অনুরোধ করব অর্থের পেছনে না ছুটতে। কারণ, সে ক্ষেত্রে যখন খেলোয়াড়েরা একই পথে চলা শুরু করবে, তখন ধাক্কাটা আপনারাই খাবেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য যদি প্রস্তুতি দরকারই হয়, আমাদের উচিত ছিল টেস্ট না কমিয়ে আরও বেশি টি-টোয়েন্টির আয়োজন করা। যদি টেস্ট ম্যাচ উপেক্ষা করা শুরু করেন, দীর্ঘমেয়াদি আমাদেরই ক্ষতি হবে। যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বেশি পাওয়া না–ও যেত, তবু আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়ার সম্ভাবনা আছে। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ আছে (বিশ্বকাপের আগে)।’