আবু জায়েদ
নাম | আবু জায়েদ চৌধুরী রাহী |
জন্ম | আগস্ট ২, ১৯৯৩ |
ধরন | ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার |
অভিষেক | বনাম উইন্ডিজ, ১৩ মে, ২০১৯ |
ক্রিকেট বলে সহজাত সুইংটা বাংলাদেশের বোলারদের কাছে সোনার হরিণই। বল দুদিকেই সুইং করাতে পারেন, এমন একজন পেসারের খোঁজে চাতক চোখে বিসিবির নির্বাচকেরা পার করেছেন অনেক দিন। অবশেষে বাংলাদেশ পেয়েছে তাদের কাঙ্ক্ষিত সুইং বোলারকে, আবু জায়েদ চৌধুরী রাহীর মাঝে।
১৯৯৩ সালের ২ আগস্ট জন্ম নেওয়া সিলেটের এই ক্রিকেটারের ক্রিকেট-গুরু বলা যায় তাঁরই মেজো ভাই মেহেদী হাসান চৌধুরীকে। সিলেট বিভাগীয় দলের হয়ে খেলা সাবেক এই ক্রিকেটারকে কাছ থেকে দেখতে দেখতে আবু জায়েদের মনে ক্রিকেটপ্রেমের বীজ বোনা হয়ে গিয়েছিল।
সেই ক্রিকেট-প্রেমকে কাজে লাগিয়ে বয়সভিত্তিক দলের ধাপ পেরিয়েছিলেন দ্রুতই। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলেছিলেন ২০১২ সালের যুব বিশ্বকাপেও।
তবে প্রেমে ভাঙনের সুর যেন বেজে উঠেছিল এরপরেই। যুব বিশ্বকাপে করতে পারেননি নজরকাড়া পারফরম্যান্স। মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে যোগ হয়েছিল ইনজুরি। দুয়ে মিলে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল, ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে আবু জায়েদ চৌধুরী পাড়ি জমিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে।
ক্রিকেটকে পুরোদমে বিদায় জানিয়ে ওই দেশে পাকাপাকিভাবে থিতু হবেন, এমন সিদ্ধান্ত যখন প্রায় নিয়েই ফেলেছিলেন, তখনই বাদ সেধেছিলেন আরেক বড় ভাই। ক্রিকেটই যে তাঁর প্রথম প্রেম, সেটা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আরেকবার চেষ্টা করে দেখো!’
আবু জায়েদও যেন জেগে উঠেছিলেন নতুন উদ্যমে। দেশে ফিরে সিলেটের হয়ে খেলেছিলেন ২০১৩-১৪ মৌসুমের জাতীয় লিগে। প্রথম মৌসুমেই বাজিমাত। ৬ ম্যাচ খেলে তুলে নিয়েছিলেন ২৩ উইকেট। পুরস্কার হিসেবে সুযোগ মিলেছিল হাইপারফরম্যান্স স্কোয়াডে।
এরপরে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি খুব একটা। ২০১৬-১৭ মৌসুমে জাতীয় লিগে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে চলে আসেন জাতীয় দলের দ্বারপ্রান্তে। উইকেটপ্রাপ্তিতে শীর্ষস্থানটা দখল করেছিলেন গতবারের বিসিএলেও।
সুইংয়ের সঙ্গে কখনোই আপস না করা আবু জায়েদকে তাই ভাবা হচ্ছিল টেস্ট দলের ভবিষ্যৎ। এর মাঝেই ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে বিপিএলের চতুর্থ আসরে মাত্র ৫.২৫ ইকোনমিতে বল করে আর পরের আসরে বিপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর বলের বাঁক কাজে আসতে পারে সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শিকে তাই ছিঁড়েছিল টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়েই, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। টি-টোয়েন্টি দলে শুরুটা মলিন হলেও টেস্ট দলে জায়গা করে নিতে দেরি হয়নি খুব বেশি। সে বছরেরই আগস্টে পেয়েছিলেন সাদা পোশাকে মাঠে নামার অভিজ্ঞতা।
তত দিনেও অবশ্য ওয়ানডে ক্যাপ পাওয়া হয়নি। অপেক্ষার পালাও যে এত দ্রুতই ফুরোবে, ওয়ানডে খেলার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই সুযোগ মিলবে বিশ্বকাপগামী দলে, ভাবা যায়নি তা-ও।
ইংল্যান্ডের সুইং সহায়ক পরিবেশে স্কোয়াডে একজন সুইং বোলারকে রাখার তাড়নায় নির্বাচকেরা বিশ্বকাপ দলে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন আবু জায়েদ রাহীকে। সম্বল ছিল ৫৫ লিস্ট-এ ম্যাচে মোটে ৬৫ উইকেট। তবু নিজের সামর্থ্যের কিছুটা প্রমাণ দিয়েছেন আয়ারল্যান্ড সফরে।
আবু জায়েদ বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় সম্পদ হয়ে উঠতে পারবেন কি না, তা তো বলে দেবে সময়।
[সব তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান এই বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত]