আবারও ৩২৯-এ এল আইরিশ রূপকথা
অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, এরপর থেকে কোনোভাবেই আয়ারল্যান্ডকে ৩২৯ রান করতে দেবে না ইংল্যান্ড!
করতে দেয়-ই বা কী করে? এই নিয়ে যে দুবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২৯ করেছে দলটা, সে দুবারই হেসেখেলে জিতেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আইরিশদের জয় বলতে সবার আগে চোখে ভাসে ২০১১ বিশ্বকাপে বেঙ্গালুরুতে পাওয়া সেই অবিশ্বাস্য জয়টার কথা। সে ম্যাচেও রান তাড়া করতে গিয়ে ঠিক ৩২৯ রান করেই জয়ের দেখা পেয়েছিল আইরিশরা। আট বছর পর আরেকবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২৯ করতে পারল আয়ারল্যান্ড। জয় এল তাতেই। তবে সাত উইকেটে ম্যাচ জিতলেও সিরিজের ফলাফলে কোনো প্রভাব পড়েনি। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ গেছে ইংল্যান্ডের ঘরেই।
দুই ম্যাচের মধ্যে মিল আছে আরও। সে ম্যাচেও ইংল্যান্ডের হয়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছিলেন তিনজন, এবারও তাই। সেবার অবশ্য ইংল্যান্ডের হয়ে কেউ সেঞ্চুরি করেননি। এবার যিনি সেঞ্চুরি করেছেন, তাঁর রান পাওয়াটা আইরিশদের মনে ব্যথা জাগিয়ে যায়-ই না। ইংলিশ অধিনায়ক এউইন মরগান যে জন্মসূত্রে আইরিশ, এক সময় আয়ারল্যান্ডের হয়েও খেলেছেন।
৮৪ বলে ১৫টি চার ও চার ছক্কায় সাজানো ১০৪ রানের এই ইনিংসটা ২০১৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জনি বেয়ারস্টোর সেঞ্চুরির পর ইংল্যান্ডের সর্বপ্রথম সেঞ্চুরি। গত বিশ বছরে ইংল্যান্ডের দুই ওয়ানডে সেঞ্চুরির মধ্যে এত সময়ের ব্যবধান কখনো দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব। অধিনায়ক হিসেবে এই ম্যাচে চার ছক্কা মেরে ওয়ানডে অধিনায়কদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ছক্কা মারার রেকর্ড গড়লেন মরগান, এই নিয়ে তাঁর ছক্কাসংখ্যা দাঁড়াল ২১২–তে, ২১১ ছক্কা নিয়ে আগের রেকর্ডটা ছিল সাবেক ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির।
আইরিশদের হয়ে সেবার সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন এক ডানহাতি মিডিয়াম পেসার, এবারও তাই-ই বলা যায়। সেবার ইংল্যান্ডকে ৩২৭ রানে বেঁধে রাখার পেছনে জন মুনির ৪ উইকেটের অবদান ছিল বেশ। এবার ৩ উইকেট নিয়ে আইরিশদের সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন পেসার ক্রেইগ ইয়াং।
তবে সেবার আইরিশদের অধিনায়ক ব্যর্থ হলেও, এবার হননি। ইংল্যান্ড অধিনায়কের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবার আইরিশ অধিনায়কও করেছেন সেঞ্চুরি। এক ডজন চারে সাজানো অ্যান্ডি বালবির্নির ১১২ বলে ১১৩ রানের ইনিংসটা জয়ের পথে আইরিশদের এগিয়ে নিয়ে গেছে অনেক। এর আগে ওয়ানডেতে মাত্র চারবার দুই অধিনায়কই সেঞ্চুরি একই ম্যাচে করেছিলেন। সর্বপ্রথম উদাহরণে জড়িয়ে আছে ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ডেরই নাম। সেবার মরগানের পাশাপাশি সেঞ্চুরি করেছিলেন উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড। বাকি তিন উদাহরণেই আছেন ভারতের বর্তমান অধিনায়ক বিরাট। চট্টগ্রামের ফতুল্লায় বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের পাশাপাশি সেঞ্চুরি করেছিলেন কোহলি। পরে ২০১৪ সালে রাঁচিতে ও ২০১৮ সালে ডারবানে কোহলির পাশাপাশি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন যথাক্রমে শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্যাফ ডু প্লেসিস।
আইরিশদের জয়ের আসল নায়কের কথা তো এখনো বলাই হয়নি! তিনি পল স্টার্লিং। ২০১১ সালের বিখ্যাত সেই জয়েও তিনি মাঠে ছিলেন। এবারও আছেন। সেবার কেভিন ও'ব্রায়েনের ঝোড়ো সেঞ্চুরিতে (৬৩ বলে ১১৩) আড়াল হয়ে গিয়েছিল স্টার্লিংয়ের ছোট্ট কিন্তু কার্যকরী ইনিংস। এবার কেভিনের দায়িত্বটা নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন এই তারকা। ১২৮ বলে ৯ চার ও ছয় ছক্কায় হাঁকিয়েছেন ১৪২। ওদিকে ১৫ বলে ২১ করে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন সেবারের নায়ক কেভিন ও'ব্রায়েন। মূলত স্টার্লিং আর বালবির্নিতে চড়েই ইংল্যান্ডের মাটিতে সফরকারী দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড গড়েছে আয়ারল্যান্ড।
এই জয়ে দশ পয়েন্ট নিয়ে সুপার লিগের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে আইরিশরা, ২০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ইংল্যান্ড।