আবারও ফেরার অপেক্ষা শরীফুলের
অপেক্ষা একসময় তাঁর কাছে আনন্দময় ছিল। সেটা শরীফুল ইসলামের সেই শৈশব-কৈশোরের কথা। পঞ্চগড় জেলায় নিজ গ্রামের পুকুরে ছিপ ফেলে মাছ ধরার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করতেন তিনি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর যখন বড়শিতে মাছ লাগত, সে এক দারুণ আনন্দ! কিন্তু এখন ২০ বছর বয়সী শরীফুলের কাছে অপেক্ষা হয়ে গেছে এক বিরক্তির নাম। এখন যে কিছুদিন পরপরই তাঁকে অপেক্ষায় থাকতে হয় চোটের সঙ্গে লড়াই করে মাঠে ফেরার।
গত মার্চে দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ হারানো বাংলাদেশ দলে খেলেছেন শরীফুল, এরপরই দুর্ভাগ্যজনকভাবে গোড়ালির চোটে পড়েন তিনি। সেটার সঙ্গে পরে যোগ হয় তাঁর আরেকটি শারীরিক সমস্যা। এই দুই কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে খেলা হয়নি এই বাঁহাতি পেসারের। এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়ে মাঠে ফিরলেও এক ইনিংসের বোলিং-ব্যাটিংয়ের পরই শরীফুল আবার চোট পেয়েছেন ডান হাতে।
এই চোটের কারণে আরও এক মাস খেলার বাইরে যেতে হচ্ছে শরীফুলকে। আগামী মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের দুটি টেস্ট খেলা হচ্ছে না তাঁর। আশায় আছেন, ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে হয়তো মাঠে ফিরবেন। হতাশ শরীফুল কাল প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘এবারের চোটটা গুরুতর মনে হচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট খেলতে পারব না। মাসখানেক লাগতে পারে চোট সারতে।’
শেষ কথাটা বলার পর মুঠোফোনের ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস শোনা গেল। এই সময়গুলোয় নিজেকে উজ্জীবিত রাখাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে শরীফুল নিজেকে বুঝিয়েছেন এভাবে, ‘চট্টগ্রাম টেস্টে যে এক ইনিংস খেলেছি, সেখানে তেমন ভালো করিনি। এমনিতেই মন খারাপ ছিল। আশা করছিলাম, দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো করব। কিন্তু সেটা হলো না। হাতে ব্যথা পেয়ে কিছুই করতে পারলাম না। খারাপ লাগছে। কিন্তু এটা খেলার অংশ। এটা মেনে নিতেই হবে। এখন অপেক্ষা ছাড়া কিছু করার নেই। সমস্যা নেই। ইনশা আল্লাহ, আমি আবার ফিরব।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন শরীফুল এক বছর হলো। গত বছর মার্চে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর ওয়ানডে ও টেস্ট দলেও তাঁর নিয়মিত হতে সময় লাগেনি। বাঁহাতি, উচ্চতা ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি—বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য যেন তৈরি হয়েই এসেছিলেন তিনি। মাঠের পারফরম্যান্সেও ছিল তার প্রমাণ। তিন সংস্করণ মিলিয়ে দেশের হয়ে ৩৩ ম্যাচ খেলেছেন, উইকেট ৪৪টি। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড সিরিজ জয়, মাউন্ট মঙ্গানুইতে টেস্ট জয়, দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে সিরিজ জয়—জাতীয় দলের এসব অর্জনে শরীফুল ভালোই অবদান রেখেছেন।
আমাকে খুব সতর্কভাবে নিজের দেখাশোনা করতে হবে। শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে। যতট শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকব, ততই ফিট থাকব, তত বেশি খেলতে পারব।
সে কারণে ২০২২ সালে বিসিবির সঙ্গে তিন সংস্করণেই চুক্তিবদ্ধ পাঁচ ক্রিকেটারের একজন শরীফুল। মাত্র এক বছরেই তিনি হয়ে উঠেছেন আস্থার প্রতীক। কিন্তু একের পর এক চোটের কারণে সেই আস্থার প্রতিদান দেওয়া হচ্ছে না পুরোপুরি। সুস্থ হয়ে ফেরার তাড়নাটা সে কারণেই বেশি অনুভব করছেন শরীফুল, ‘ইনশা আল্লাহ, ফিট হয়ে এই আস্থার প্রতিদান দেব। তিন সংস্করণেই যেহেতু খেলছি, যত দিন খেলব, ভালো করার চেষ্টাই করব।’
তবে তিন সংস্করণের ক্রিকেটের চাপ, প্রত্যাশা শরীফুলের জন্য একদম নতুন অভিজ্ঞতাই। সেটা সামলেই ক্যারিয়ারটা দীর্ঘ করার আশা তাঁর, ‘আমাকে খুব সতর্কভাবে নিজের দেখাশোনা করতে হবে। শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে। যতট শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকব, ততই ফিট থাকব, তত বেশি খেলতে পারব।’