আফগানিস্তান দলে ছেলের সঙ্গে খেলতে চান মোহাম্মদ নবী
শিবনারায়ণ চন্দরপল পারেননি। ছেলে ত্যাগনারায়ণের সঙ্গে ম্যাচ খেলার স্বাদটা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল তাঁকে। ২০১৮ সালে পেশাদার ক্রিকেট থেকে অবসরে চলে গেছেন চন্দরপল। ওদিকে ত্যাগনারায়ণের এখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়েই অভিষেক হয়নি।
মোহাম্মদ নবী অবশ্য আশাবাদী, তাঁর ছেলে তাঁর স্বপ্ন পূরণ করবেন; আফগানিস্তানের জার্সিতে বাবা-ছেলে খেলবেন একসঙ্গে।
বয়স ৩৮ ছুঁই ছুঁই, কিন্তু এখনো আফগানিস্তান ক্রিকেটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নবী। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দলের মধ্যে সৃষ্ট সংকটের ভেতর তাঁকে অধিনায়ক করেছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। জাতীয় দলের পাশাপাশি বিশ্বের সেরা সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলে বেড়াচ্ছেন নবী। যেভাবে খেলছেন, তাতে খুব শিগগির থামার ইচ্ছা নেই। খেলা চালিয়ে যেতে চান আরও বহুদিন। আশা করছেন, অবসর নেওয়ার আগেই তাঁর ছেলেরও ক্রিকেটার হিসেবে নামডাক হবে, খেলতে দেখবেন আফগানিস্তান দলে।
আফগানিস্তানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে ওঠায় নবী গত বছরই সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমানে পাঠিয়ে দিয়েছেন পরিবারের সদস্যদের। সে সুবাদেই নবীর ছেলে হাসান খানের ক্রিকেটীয় দক্ষতার পরিচয় পাচ্ছেন সবাই। শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চলছে সিবিএফএস টি-টোয়েন্টি। এই টুর্নামেন্টে বুখাতির একাদশে খেলেন হাসান। গত বছর বুখাতিরের হয়ে এক ম্যাচে ৭ ছক্কায় ৩০ বলে ৭১ রান তুলেছিলেন হাসান।
কিছুদিন পরই পাকিস্তান সুপার লিগ। তারপরই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলবে আফগানিস্তান। এ কারণে নিজেকে ঝালাই করে নিতে বুখাতির দলের হয়ে খেলার আমন্ত্রণ পেয়েই লুফে নিয়েছেন নবী। সে সুবাদে ছেলে হাসানের সঙ্গেও খেলার সুযোগ পেয়ে গেছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনালকে বলেছেন, ‘আমার আশা ছিল আমরা দুজন একসঙ্গে খেলব এবং একসঙ্গে জাতীয় দলে খেলব। আফগানিস্তান দলে আরও কয়েক বছর খেলতে চেষ্টা করব এবং আরও কয়েক বছর লিগগুলোতে খেলার চেষ্টা করব।’
১৬ বছর বয়সী হাসানকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখছেন নবী, ‘হাসান আরও উন্নতি করবে, আশা করি অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলবে। যদি জাতীয় দলে খেলার দক্ষতা থাকে, তাহলে আশা করি জাতীয় দলেও খেলবে। কোনো প্রতিষ্ঠিত টুর্নামেন্টে এই প্রথম আমরা একসঙ্গে খেললাম। ভালো লাগছে। ও চাপে পড়েছে, কিন্তু ওর প্রতিভা আছে।’
দুজনের খেলার ধরন এক হলেও দুজনের বেড়ে ওঠার গল্প একদম ভিন্ন। হাসান শারজার ক্রিকেট একাডেমিতে খেলছেন গত বছর থেকে। সেখানে নিয়মিত নেটে অনুশীলন করতে পারেন। বোলিং মেশিন আছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হয়েছে কদিন আগে—এমন মাঠের উইকেটে অনুশীলন করেন। তাঁর কিটব্যাগে বাবার ব্যবহৃত আন্তর্জাতিক মানের হেলমেট, ব্যাট, গ্লাভস থাকে। ওদিকে পাকিস্তানে শরণার্থীশিবিরে খেলে শিখেছেন নবী, ‘আমার পরিবার খেলতে দিতে চাইত না। কিন্তু আমি জানি, হাসানের প্রতিভা আছে, এ কারণে ওকে সুযোগ দিতে চাই। ক্রিকেট খেলার ভালো সুবিধা দিতে চাই। আমার ছোটবেলায় নিজের জন্য কিছু পাইনি। হাসান সবই পাচ্ছে।’
তাই বলে হাসানের কাজটা সহজ নয়। হাসানকে যে অন্য ধরনের বাধা পেরোতে হবে, সেটাও জানেন নবী, ‘আমি ওকে বলেছি, কাজটা কঠিন। আমার নামের কারণেই চাপে থাকবে তুমি। কঠোর পরিশ্রম করো, নিজের প্রতিভা আরও পরিশীলিত করো। সবাই বলবে, “তুমি মোহাম্মদ নবীর ছেলে।” এটা আমার নয়, তোমার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।’
এরই মধ্যে সঠিক পথে এগোনোর ইঙ্গিত দিচ্ছেন হাসান। সিবিএফএস টুর্নামেন্টে এরই মধ্যে পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমির ও দক্ষিণ আফ্রিকার লেগ স্পিনার ইমরান তাহিরের মুখোমুখি হয়েও দারুণ করেছেন।