আইসিসি স্বীকৃতি না দেওয়ায় এখনো দুঃখ পাকিস্তানি বোলারের
‘টু ডব্লু’র পর ‘টু এস’ পেয়েছে পাকিস্তান—এমন কথা বেশ হাওয়া পেয়েছিল ২০০৪–০৫ সালের দিকে। কিংবদন্তি পেস জুটি ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনিসের অবসরের পর পাকিস্তানের পেস আক্রমণের বাটন পেয়েছিলেন শোয়েব আখতার ও মোহাম্মদ সামি। দুজনই গতির ঝড় তুলতে জানেন, ভয়ংকর বাউন্সার আর ইয়র্কার দিতে পারেন ইচ্ছা হলেই। পাকিস্তানের পেস আক্রমণ নিয়ে তাই আশা জেগেছিল।
সেই আশা পূরণ করতে পারেননি কেউই। যদিও ৪৬ টেস্টে ১৭৮ আর ১৬৩ ওয়ানডেতে ২৪৭ উইকেট পাওয়া শোয়েব আখতার ‘মোটামুটি ভালোই করেছি’ বলে দাবি করতে পারেন, সঙ্গে মনে করিয়ে দিতে পারেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে দ্রুতগতির বল করার কীর্তির কথাও। মোহাম্মদ সামির তো সেই সান্ত্বনাও নেই। যদিও সামি আবার দাবি তুলেছেন, শোয়েব আখতারের চেয়ে দ্রুত দুবার বল করলেও আইসিসি তাঁকে স্বীকৃতি দেয়নি।
শোয়েব আখতার আগ থেকেই ছিলেন। ওয়াকার-ওয়াসিম বিদায় নেওয়ার আগেই আবির্ভাব হয়েছিল সামির। বোলিং অ্যাকশনে শোয়েবের মতো আগ্রাসন বা দেখনদারি না হলেও গতির ঝড় ভালোই তুলতেন। নিয়মিত ঘণ্টায় ১৪৫ থেকে ১৫০ কিলোমিটার গতিতে বল করতেন। মাঝেমধ্যে সেটা ১৫৫ কিলোমিটারের ওপরও যেত। ওদিকে নিজের সেরা সময়ে শোয়েব ১৬০ কিলোমিটারের আশপাশে থাকতেন।
১৯৯৬ সালের পর থেকে নিয়ম করে বোলারদের গতি হিসেব করা হচ্ছে। ২০০৩ বিশ্বকাপে প্রথম বোলার হিসেবে ১০০ মাইলের সীমাও অতিক্রম করেছেন শোয়েব। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজের দ্বিতীয় ওভারে রীতিমতো ঝড় তুলেছিলেন। ওভারের প্রথম পাঁচ বল ছিল ১৫৩.৩, ১৫৮.৪, ১৫৮.৫, ১৫৭.৪ ও ১৫৯.৫ কিলোমিটার গতির। ওভারের একদম শেষে নিক নাইট যে বলের সামনে পড়েছিলেন, স্পিড মিটারে তার গতি ১৬১.৩ কিলোমিটার দেখাচ্ছিল। হিসাব শুরু হওয়ার পর থেকেই একেই সবচেয়ে দ্রুত গতির বলে স্বীকার করে নিয়েছে আইসিসি। ১৬১.১ কিলোমিটার ও ১৬০.৮ গতির বলে দুই ও তিনে আছেন অস্ট্রেলিয়ার শন টেইট ও ব্রেট লি।
এ তালিকায় নয়ে আছেন সামি। তবে পাকিস্তানের সাবেক পেসারের দাবি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবচেয়ে দ্রুতগতির বল দুটি তাঁর। পাকটিভিকে সম্প্রতি বলেছেন, ‘এক ম্যাচে আমি ১৬০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করেছিলাম। একটা ছিল ১৬২ কিলোমিটার গতির। অন্যটি ১৬৪। এরপর বলা হলো, স্পিডগান ঠিকমতো কাজ করছিল না। এ কারণে সে বলগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু আপনি দেখুন, যেই ১৬০ কিলোমিটারের ওপরে বল করেছে, তখন সে স্পিডে সর্বোচ্চ একটা বা দুটি বলই করেছে। এমন তো না যে তারা ওই গতিতে টানা বল করেছে। এটা হঠাৎ হঠাৎ ঘটে।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ২২৭ উইকেট পাওয়া সামি যে ম্যাচের কথা বলছেন সেটা ২০০৪ সালের। পাকিস্তান সফর করতে গিয়েছিল ভারত। সফরের তৃতীয় ওয়ানডেতে তৃতীয় বোলার হিসেবে বল করতে এসেছিলেন। পেশোয়ারে সেদিন ১১ তম ওভারের শেষ বলটির গতি দেখাচ্ছিল ১৬৪ কিলোমিটার। সে বল ঠিকভাবে খেলতে পারেননি রাহুল দ্রাবিড়। ১৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলটিও ১৬০ কিলোমিটার পার হয়েছিল টিভি পর্দায়। কিন্তু স্পিড মিটারে ১৬২.৩ কিলোমিটার গতি দেখালেও সৌরভ গাঙ্গুলীর অনায়াস চার মারা বলে দিয়েছিল, সে বলের গতি আসলে অত নয়।
প্রসঙ্গত, স্পিডমিটারে দেখানো গতিই বিবেচ্য হলে সবচেয়ে দ্রুতগতির বলটি পাকিস্তানেরই হাসান আলীর। ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর মিরপুরে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম বলে মোহাম্মদ নাঈমকে তুলে নিয়েছিলেন হাসান। টিভিতে সে বলের গতি দেখাচ্ছিল ঘণ্টায় ২১৯ কিলোমিটার!