আইপিএলের সেরা খেলোয়াড়ের দৌড়ে কারা এগিয়ে
আইপিএলের প্রথম পর্ব কত নাটকই না দেখল! নাটকই তো! প্রথমবারের মতো গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিল টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সফল দুই দল। শেষ চারে জায়গা করে নিল আইপিএলে নতুন যোগ দেওয়া দুই দল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই চার দলের মধ্যে কেবল একটিই আগে শিরোপার স্বাদ পেয়েছে। তাই এবার আইপিএলে নতুন চ্যাম্পিয়ন পাওয়ার বড় সম্ভাবনা আছে।
এবারের আইপিএলে সেরা ক্রিকেটার কারা? অনেক সেরা খেলোয়াড়ই এবারের মৌসুমে ব্যর্থ। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, রবিন উথাপ্পা, কেন উইলিয়ামসন কিংবা রবীন্দ্র জাদেজা কেউই পারেননি নামের প্রতি সুবিচার করতে। অথচ এর প্রথম দুজনই আইপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকার সেরা তিনে। তৃতীয়জন আছেন সেরা দশে। কিন্তু এ মৌসুমে রানের দিক দিয়ে সেরা ত্রিশেও নেই তাঁদের কেউ। উইলিয়ামসন তো এরই মধ্যে ওপেনার হিসাবে সবচেয়ে কম গড় ও স্ট্রাইক রেটের লজ্জাজনক রেকর্ডে নাম বসিয়েছেন।
কিন্তু এবার সেরা কারা? ব্যাটে–বলে সেটির তালিকাও কম লম্বা নয়। এখন বেছে নেওয়ার পালা, সেরাদের সেরা। সেটি করার আগে সেই তালিকাটায় একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে...
জস বাটলার
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের তালিকায় যে নামটি সবার আগে আসবে, তিনি হলেন ইংলিশ ক্রিকেটার জস বাটলার। শুরু থেকে রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ব্যাট হাতে ধারাবাহিক পারফর্ম করে যাচ্ছেন এই ওপেনার। এবারের আইপিলের প্রথম শতকও তাঁর। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে সেই শতকেই থেমে থাকেননি এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। পরে কলকাতা ও দিল্লির বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে করেন শতক। এরপরে যেন কিছুটা ‘বিশ্রাম’ নিচ্ছেন। শেষের দিকে রান না পেলেও তিনি পারফরমারদের একজন
আজকের ম্যাচের আগে পর্যন্ত সর্বোচ্চ তিন শতক ও সমান অর্ধশতকে ১৪ ম্যাচে ৬২৯ রান তাঁর। ৪৮.৩৮ গড়ের পাশাপাশি ১৪৬.৯৬ স্ট্রাইক রেটটাও দুর্দান্ত ডানহাতি এই ওপেনারের।
লোকেশ রাহুল
সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আইপিএলের নবাগত দল লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসকে সেরা চারে নিয়েছেন এই ভারতীয় ওপেনার। শেষ ম্যাচে কলকাতার বিপক্ষে কুইন্টন ডি কককে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে দলকে প্লে-অফ নিশ্চিত করান। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে দুটি শতক পাওয়া এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান দলের বাজে সময়ে শক্ত হাতে হাল ধরেছেন। ১৪ ম্যাচে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুই শতক ও তিন অর্ধশতকে ৫৩৭ রান করে সর্বোচ্চ রানের তালিকায়ও আছেন দুইয়ে। তালিকায় প্রথমে থাকা বাটলারের থেকে গড়ের দিক থেকে এগিয়ে রাহুল।
১৩৫.২৬ স্ট্রাইক রেটে টুর্নামেন্ট–সর্বোচ্চ ৪৮.৮২ গড়ে রান করেছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের পাশাপাশি যোগ্য নেতৃত্বে দলকে এগিয়ে নেওয়ার অবদান হিসেবে সেরা খেলোয়াড়ের যোগ্য দাবিদার ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
কুইন্টন ডি কক
সেরাদের দৌড়ে এগিয়ে আছেন লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের আরেক ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কক। কলকাতার বিপক্ষে তাঁর অপরাজিত ১৪০ রানের কাব্যিক ইনিংসে ভর করে প্লে-অফ নিশ্চিত করে লক্ষ্ণৌ। ১৪ ম্যাচে এক শতকের সঙ্গে তিন অর্ধশতকে ৫০২ রান করেছেন এই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান। ইনিংসে সর্বোচ্চ ছয়ের (১০টি) রেকর্ডও তাঁর দখলে। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটের পেছনে ১২ ডিসমিসালে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন।
আর তাই আইপিএলের এমওভি র্যাঙ্কিংয়ে ২২৭.৫ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় আছেন ছয়ে। তাই আইপিএলের সেরা খেলোয়াড়ের দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।
যুজবেন্দ্র চাহাল
সর্বোচ্চ উইকেটপ্রাপ্তির প্রতীক বেগুনি ক্যাপের লড়াইটা শুরু থেকেই ছিল জমজমাট। লড়াইয়ে কখনো ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, কখনো কাগিসো রাবাদা আবার কখনো–বা তরুণ পেসার উমরান মালিক ছিলেন এগিয়ে। তবে সবাইকে পেছনে ফেলে বেগুনি টুপিটা নিজের দখলে নিয়েছেন রাজস্থানের স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল। টুর্নামেন্টের একমাত্র হ্যাটট্রিকটাও করেন তিনি। কলকাতার বিপক্ষে এক ওভারে ২ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে জয়ের নায়ক ছিলেন চাহাল। গ্রুপ পর্বের শেষ দুই ম্যাচ জিতে দুইয়ে থেকে কোয়ালিফাইয়ারে নাম লেখায় তারা। আর এ জয়ে উইকেটের পাশাপাশি অল্প রান দিয়ে প্রতিপক্ষকে বেঁধে রাখার কাজটি করেন চাহাল। প্রায় প্রতি ম্যাচেই প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের আটকে রাখতে সক্ষম ছিলেন ভারতীয় এই লেগব্রেক বোলার।
আজকের ম্যাচের আগে পর্যন্ত ইনিংসেে একবার করে চার ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন তিনি। ১৪ ম্যাচে ১৬.৫৪ গড়ে এবং ৭.৬৮ ইকোনমিতে ২৬ উইকেট নিয়ে আছেন তালিকার শীর্ষে। ব্যক্তিগত সাফল্য ও দলের জয়ে অবদান রেখে তিনিও হতে পারেন টুর্নামেন্ট সেরা।
হার্দিক পান্ডিয়া
ব্যাটে–বলে অবদান রেখে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারতীয় হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান হার্দিক পান্ডিয়া। তাঁর দক্ষ নেতৃত্বে এক নম্বর দল হিসেবে কোয়ালিফায়ারে গেছেন নবাগত দল গুজরাট টাইটানস। মিডল ওর্ডারে ব্যাটিংয়ে নেমে দলের প্রয়োজন অনুযায়ী প্রত্যাশা মিটিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁর পার্ট টাইম বোলিংয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের রান নেওয়া থেকে আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
১৩ ম্যাচে চার অর্ধশতকে ৪১৩ রান করেছেন এই মারকুটে ব্যাটসম্যান। ম্যাচপ্রতি ৪১.৩০ গড়ে ১৩১.৫২ স্ট্রাইক রেটটাও ঈর্ষণীয়। পাশাপাশি বল হাতে ব্যাটসম্যানদের থেকে রান আটকে রেখে নিয়েছেন ৪ উইকেট। নেতৃত্ব ও অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সে টুর্নামেন্ট সেরার দৌড়ে তিনিও এগিয়ে। তাই তো আইপিএলের এমভিপি র্যাঙ্কিংয়ে ২২৬.৫ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে আছেন অষ্টমে।