আইপিএলের নিলাম দেখে বান্ধবী বললেন, ‘তুমি কেন বোলার হলে না!’
বেচারা স্যাম বিলিংস!
আইপিএলের নিলামে এবার সবচেয়ে বেশি ভিত্তিমূল্য যে আটজনের ছিল, তাঁদের মধ্যে একজন তিনি। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভিত্তিমূল্যের আটজনের মধ্যে যে চারজন প্রথম দফায় বিক্রি হননি, তাঁদেরও একজন বিলিংস।
হরভজন সিং, জেসন রয় ও কেদার যাদবের পাশাপাশি প্রথম দফায় ২৯ বছর বয়সী ইংলিশ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানকেও কেউ দলে টানেননি। অথচ গত মৌসুমে আইপিএলে ফ্লপ গ্লেন ম্যাক্সওয়েলই একই নিলামে দুই কোটি রুপির ভিত্তিমূল্য ছাপিয়ে বিক্রি হয়েছেন ১৪ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে।
ক্রিস মরিস, কাইল জেমিসন কিংবা টম কারেনের মতো অলরাউন্ডার আর ঝাই রিচার্ডসন, নাথান কোল্টার-নাইলের মতো বোলাররা বিক্রি হচ্ছেন চড়া দামে। এঁদের মধ্যে নিজেকে প্রথম দফায় অবিক্রীত দেখেও অবশ্য কৌতুকের উপাদান খুঁজে নিয়েছেন বিলিংস। আইপিএলে নিলামের পর তাঁর টুইটই সেটি বুঝিয়ে দেয়।
দ্বিতীয় দফায় অবশ্য ভিত্তিমূল্য ২ কোটি রূপিতেই তাঁকে কিনে নিয়েছে দিল্লি ক্যাপিট্যালস।
উইকেটকিপার হওয়াই হয়তো কাল হয়েছে বিলিংসের। আজ আইপিএলের নিলামে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনজন উইকেটকিপারকে দলে টেনেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। বিষ্ণু বিনোদ, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ও শেলডন জ্যাকসন—তিন উইকেটকিপারই বিক্রি হয়েছেন মাত্র ২০ লাখ রুপিতে। অর্থাৎ, ধারাটা স্পষ্ট—উইকেটকিপারের প্রতি তেমন আগ্রহ নেই দলগুলোর, বিকল্প উইকেটকিপারের প্রয়োজন থাকলেও সেটি মূলত কম দামের খেলোয়াড় দিয়ে পুষিয়ে নিতে চাইছে। কম দামের ভারতীয় উইকেটকিপার হলে তো কথাই নেই।
বিলিংসের সেখানেই কপাল পুড়েছে। একে তো তিনি উইকেটকিপার, তার ওপর তিনি ভারতীয় নন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তাঁর ২ কোটি রুপির ভিত্তিমূল্য। উইকেটকিপার নিয়ে চাহিদার এত কমতির মধ্যে এত দামে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁকে কিনতে আগ্রহ না দেখানোতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। দেড় কোটি ভিত্তিমূল্যের অস্ট্রেলিয়ান উইকেটকিপার অ্যালেক্স ক্যারিকেও প্রথমবারে কেউ কেনেনি। ঠিক একই কারণে ১ কোটি ভিত্তিমূল্যের বাংলাদেশের উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমকে কোনো দলের কেনা নিয়েও সংশয় আছে।
তবে প্রথম দফায় বিক্রি না হলেও ব্যাপারটাকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন বিলিংস। কৌতুক করেছেন নিজের নিলাম নিয়ে। আইপিএলে নিলামে আজ প্রথম দফায় অবিক্রীত থাকার পরই ইংলিশ উইকেটকিপারের টুইট, ‘আমার বান্ধবী সারাহ আমার দিকে ফিরে বলল...‘‘তুমি কেন বোলার হলে না!’’’
আইপিএলের নিলামে আজ অলরাউন্ডার আর ফাস্ট বোলারদের নিয়েই আগ্রহ বেশি। অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলার ঝাই রিচার্ডসনকে ১৪ কোটি রুপিতে কিনেছে পাঞ্জাব কিংস। নাথান কোল্টার-নাইলকে ৫ কোটিতে কিনেছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। রাইলি মেরেডিথকে ৮ কোটিতে দলে টেনেছে পাঞ্জাব। নিউজিল্যান্ডের কাইল জেমিসনকে দলে নিতে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর খরচ হয়েছে ১৫ কোটি রুপি!
অলরাউন্ডারদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিস মরিসকে রাজস্থান রয়্যালস কিনেছে ১৬ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে, যা আইপিএলের ইতিহাসেরই সবচেয়ে বেশি দামি খেলোয়াড় বানিয়েছে মরিসকে। ইংল্যান্ডেরই টম কারেনকে পেতে দিল্লি ক্যাপিট্যালসের খরচ হয়েছে ৫ কোটি ২৫ লাখ। এমনকি কখনো ভারতীয় দলে সুযোগ না পাওয়া ৩২ বছর বয়সী অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার কৃষ্ণাপ্পা গৌতমকে চেন্নাই সুপার কিংস কিনেছে ৯ কোটি ২৫ লাখ রূপিতে! শুধু উইকেটকিপার হওয়াতেই প্রথম দফায় অবিক্রীত থাকায় বিলিংস নিজেকে চাইলে অভাগা ভাবতেই পারতেন।
অভাগা অবশ্য তিনি ক্যারিয়ারজুড়েই। ২০১৫ বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর ইংল্যান্ড সাদা বলের ক্রিকেটে পুরোপুরি বদলে যাওয়ার ডাক দিয়ে যে দল গড়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল, সে দলে শুরুর দিকে ডাক পেয়েছিলেন বিলিংস। সেই প্রক্রিয়ায় পরে ২০১৯ বিশ্বকাপ জিতেছে ইংল্যান্ড, কিন্তু সে দলে সুযোগ পাননি বিলিংস। জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলারদের কাছে আগেই জায়গা হারিয়ে ফেলেছিলেন বিলিংস।
টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য বিলিংস ভালোই করছেন। এখন পর্যন্ত ১৮৭ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২৩.৬৭ গড়ে তাঁর রান ৩ হাজার ৫২৭, স্ট্রাইক রেট ১৩১.০১। এর আগে ২০১৮ আইপিএলের নিলামে চেন্নাই সুপার কিংস কিনেছিল বিলিংসকে। তার আগে খেলেছিলেন দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে (বর্তমানে দিল্লি ক্যাপিট্যালস)।