আইপিএলের ইতিহাসে বাটলারের মতো ব্যাটিং দেখেননি সাঙ্গাকারা
জস বাটলারের ‘এক্স ফ্যাক্টর’টা কি?
কুমার সাঙ্গাকারার চোখে, আক্রমণাত্মক মানসিকতা। দলের প্রয়োজনে যখন যে শট খেলা দরকার সেটা খেলতে পারেন রাজস্থান রয়্যালসের ইংলিশ উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। এই গুণটাই নাকি জস বাটলারকে বাকিদের চেয়ে আলাদা করে করেছে।
আর আইপিএলে কাল বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে রাজস্থানের জয়ের পথে তাঁর ইনিংসটি দেখার পর সাঙ্গাকারা ঠিক মনে করতে পারছেন না, আইপিএলের ইতিহাসে এত ভালো ব্যাটিং এর আগে কেউ করেছে কি না।
দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে কাল আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ১৫৭ রান তুলেছিল বেঙ্গালুরু। তাড়া করতে নেমে বাটলারের শতকের কল্যাণে রাজস্থান ১১ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের জয়ে ফাইনালে উঠেছে। ৬০ বলে ১০৬ রানে অপরাজিত ছিলেন এই ইংলিশ উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান। ৬ ছক্কা ও ১০ চারে সাজানো ইনিংস।
রাজস্থান রয়্যালস পরিচালক ও শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি সাঙ্গাকারা বাটলারের ব্যাটিংয়ে শক্তির জায়গা নিয়ে বলেছেন, ‘সে যেভাবে খেলে থাকে আর কি। কিছু শক্তির জায়গা তো আছেই। সেসব জায়গায় আস্থা পেয়ে গেলে বোলারদের সেখানে বল করতে বাধ্য করে।’
সাঙ্গাকারার ব্যাখ্যা, ‘স্পিনের বিপক্ষে সে দুর্দান্ত। সবরকম শট খেলতে পারে। কোন দিন কোন শট খেলবে এবং কোনগুলো খেলবে না, সেগুলো সে ঠিক করে রাখে। জস বাটলারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো দিকটি হলো, সে (ম্যাচে) যেকোনো সময় দ্রুত রান তুলতে পারে। দেখা যায় ৩০ বলে ৩০ রানে ব্যাট করছে, তারপর দেখা যাবে ৫০ বলে ৮০–৯০ করে ফেলবে। এ মৌসুমে সে আমাদের হয়ে যা করেছে, সেসব বোঝানো কঠিন। টুর্নামেন্টে শুরুটা খুব ভালো করেছে। এরপর মাঝে সম্ভবত একটু খেই হারিয়ে ফেললেও শান্ত ছিল। শুধু অনুশীলন না করে সেসব নিয়ে সবার সঙ্গে কথাও বলেছে। সে তো মানুষ, প্রতিদিনই তো আর শীর্ষ পর্যায়ের পারফরম্যান্স করতে পারবে না।’
আইপিএলে এবার ১৬ ম্যাচে ১৬ ইনিংসে ৮২৪ রান করেছেন বাটলার। এ মৌসুমে তিনি–ই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ১৫১.৪৭ স্ট্রাইকরেটে ৫৮.৮৫ গড়ে সর্বোচ্চ চারটি শতকও তাঁর। বাটলার কিন্তু সব ম্যাচে ভালো করেননি।
প্লে অফে খেলার আগে চার ম্যাচে মাত্র একবার দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পেরেছেন। সেটিও মাত্র ৩০ রানের ইনিংস। ইংলিশ তারকা নিজেই কাল বলেছেন, ‘এই মৌসুমে (নিজেকে নিয়ে) সাদামাটা প্রত্যাশা ছিল। তবে টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলাম। এখনো এখানে টিকে থেকে ফাইনালে উঠতে পারাটা অসাধারণ ব্যাপার।’
সাঙ্গাকারা মনে করেন, বাটলার সব ম্যাচে সব সময় ভালো করতে না পারলেও ম্যাচের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ভালো করাটা তাঁকে বাকিদের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে, ‘সব ম্যাচের বিভিন্ন পর্যায়ে সে কীভাবে ওই মানের ব্যাটিং করে তা বুঝতে হলে...কোনো কোনো দিন রান করার জন্য লড়াই করতে হয়, ব্যাটিংটা হয় কুৎসিত। কোনোদিন আবার ছন্দে থাকে। বাস্তবতা হলো, কন্ডিশনের সঙ্গে তো আর লড়াই করা যায় না। মাঠে যা ঘটছে সেখানেই শুধু লড়াই সম্ভব। থিতু হয়ে ইনিংস গড়তে হয়। সে যেকোনো সময় দ্রুত রান তুলতে পারে। সব রকম শট আছে হাতে এবং খেলাও খুব ভালো বোঝে। আইপিএলের ইতিহাসে কেউ এত ভালো ব্যাট করেছে কি না, তা মনে পড়ছে না।’
বাটলার অবশ্য নিজেকে নিয়ে সহজ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সব ম্যাচেই তিনি দলকে জেতাতে চান, ‘আমি সব সময় ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে খেলার চেস্টা করি। কখন কী করতে হবে এবং সে পরিস্থিতিতে কেমন দক্ষতা দরকার, সেসব নিয়ে কাজ করি। কখনো হয়তো একটু মন্থরভাবে শুরু করি। যদিও মনে মনে ভাবি কখনো যেন এমন না হয়। আমি সবসময় দ্রুতলয়ে ব্যাট করতে চাই। কিন্তু কখনো কখনো পরিস্থিতি কঠিন হয়ে ওঠে। তখন অবুঝ মন বড় শট খেলতে চায়, আউটও হতে হয়। তাই সাঙ্গাকারা যা বলেছে সেটাই ঠিক—কেউ উইকেটে যত বেশি সময় থাকবে, কোনো না কোনো সময় (স্ট্রোক খেলার ছন্দে) ফিরবেই।’